সুচিং লারমা
কক্সবাজারের টেকনাফের মেয়ে লাকিংমে চাকমা, যাকে অপহরণের পর ধর্মান্তর করে বিয়ে করেছিলেন স্থানীয় যুবক আতাউল্লাহ। এরপর লাকিংমের করুণ মৃত্যুর পর শেষকৃত্যানুষ্ঠান নিয়ে লাশের দাবিদার দুই পরিবারের মধ্যে রশি টানাটানিতে টানা ২৫ দিন মরদেহ পড়েছিল কক্সবাজার সদর হাসপাতালের হিমঘরে। বিভিন্ন মানবাধিকার সংগঠন ও নাগরিক সমাজের প্রতিনিধিদের চেষ্টায় সেই লাকিংমে মা-বাবার জীর্ণ কুটির বদলে যাচ্ছে। সরকারি আশ্রয়ণ প্রকল্পের আওতায় বাড়িতে নির্মিত হচ্ছে পাকা ঘর।
কক্সবাজার শহর থেকে ৭১ কিলোমিটার দক্ষিণে টেকনাফ উপজেলার সমুদ্র উপকূলীয় ইউনিয়ন বাহারছড়ার মটকামুরা নামে একটি পাহাড়ের পাদদেশে আলোচিত সেই লাকিংমে চাকমার বাবা লালা অং চাকমার জরাজীর্ণ টংঘর। অবস্থা এমন ছিল, কয়েক মিনিট ঝোড়ো হাওয়া হলেই ঘরটি ধসে পড়তে পারে। বিভিন্ন মানবাধিকার সংগঠন ও নাগরিক সমাজের প্রতিনিধিরা সরেজমিন পরিদর্শন করে লাকিংমের পরিবারকে নিরাপদে বসবাসের উপযোগী একটি ঘর নির্মাণ করে দিতে কক্সবাজারের জেলা প্রশাসকের দৃষ্টি আকর্ষণ করেন। অবশেষে লাকিংমে চাকমার বাড়িতে ইটের পাকা ঘর উঠছে। ইতোমধ্যে ঘরের নির্মাণকাজ ৮০ ভাগ শেষ হয়েছে। বাকি কাজ এক সপ্তাহের মধ্যে শেষ হবে বলে আশা করা হচ্ছে। এরপর নতুন ইটের ঘরে ঠাঁই হবে এ পরিবারের। সম্প্রতি সেখানে গিয়ে দেখা গেছে, ঘরে দুটি কক্ষ। একটি রান্নাঘর ও একটি টয়লেট রয়েছে। ঘরের চারপাশের কাজ শেষ পর্যায়ে। এখন শুধু টিন বসানো ও বিদ্যুৎ সংযোগের কাজ বাকি।
মুজিববর্ষ উপলক্ষে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের আশ্রয়ণ প্রকল্প-২-এর আওতায় এ ঘর নির্মাণ করা হয়েছে। কক্সবাজারের জেলা প্রশাসক মামুনুর রশিদ জানান, ঢাকা থেকে আসা একটি নাগরিক প্রতিনিধি দল লাকিংমের পরিবারকে একটি ঘর দেওয়ার আবেদন করে। ওই আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে মানবিক দিক বিবেচনায় ঘর নির্মাণ করে দেওয়া হচ্ছে।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার প্রতি কৃতজ্ঞা জানিয়ে লাকিংমে চাকমার বাবা লালা অং চাকমা বলেন, ঘর পেয়ে খুশি হয়েছি। মেয়ের হত্যাকারীরা এখনও ধরা না পড়ায় স্বস্তি পাচ্ছি না। মামলার তদন্ত প্রতিবেদন প্রকাশের বিষয়ে কোনো অগ্রগতি নেই। নেই আসামিদের গ্রেপ্তারে কোনো তৎপরতা। সরকার ঘর নির্মাণ করে দিলেও পরিবহন খরচ দিতে হচ্ছে আমাকেই। মেয়ের হত্যার বিচার চাইতে গিয়ে বহু টাকা ঋণগ্রস্ত হয়েছি। তার পরও হত্যাকারীদের বিচার হলে শান্তি পাবো।
বাংলাদেশ আদিবাসী ফোরামের তথ্য ও প্রচার সম্পাদক দীপায়ন খীসা সমকালকে বলেন, নাগরিক প্রতিনিধিরা একাধিকবার লাকিংমের বাড়ি পরিদর্শন করে স্থানীয় প্রশাসনের সঙ্গে কথা বলেছেন। বিচারের দাবিতে স্মারকলিপি, মানববন্ধনসহ নানা কর্মসূচি পালিত হয়েছে। লাকিংমের পরিবারের মানবেতর অবস্থা দেখে একটি তহবিল গঠন করা হয়। ওই তহবিলে ইতোমধ্যে নানা শ্রেণি-পোশার মানুষ লাকিংমের পরিবারের জন্য অর্থ সহায়তা দিয়েছেন। তিনি বলেন, আমাদের সংগৃহীত অর্থ দিয়ে নতুন নির্মিত ছোট ঘরটি আরেকটু বর্ধিত করা হবে। সেই সঙ্গে লাকিংমে মা-বাবার জীবিকার জন্য একটি বাগান সৃজন করার উদ্যোগ নেওয়া হবে।
অপহরণের প্রায় এক বছর পর গত ৯ ডিসেম্বর লাকিংমে চাকমাকে কক্সবাজার সদর হাসপাতালে মৃত অবস্থায় পায় তার পরিবার। মৃত্যুর ১৩ দিন আগে এক শিশুসন্তানের জন্ম দেন লাকিংমে।