নিজস্ব প্রতিবেদক।। খাগড়াছড়ির মানিকছড়ি ও লক্ষ্মীছড়িতে সেনাবাহিনী তাদের সৃষ্ট রাজাকার মুখোশ দুর্বৃত্তদের দিয়ে অরাজক পরিস্থিতি সৃষ্টির পাঁয়তারা চালাচ্ছে বলে বিশ্বস্ত সূত্রে খবর পাওয়া গেছে।
জানা যায়, গত দুই সপ্তাহ আগে খাগড়াছড়ি থেকে দু’টি মাইক্রোবাস যোগে একদল সশস্ত্র রাজাকার মুখোশ সন্ত্রাসীকে মানিকছড়ি এলাকায় নিয়ে আসা হয়। এরপর সন্ত্রাসী দলটিকে মানিকছড়ি উপজেলার পার্শ্ববর্তী ফটিকছড়ির কাঞ্চননগর ইউনিয়নস্থ বটতলী নামক স্থানে আস্তানা তৈরি করে দেওয়া হয়। আর সেখান থেকেই মুখোশরা এলাকায় বিভিন্ন জনের কাছ থেকে চাঁদা দাবি, জনগণকে হুমকি-ধমকি সহ নানা সশস্ত্র তৎপরতা চালাচ্ছে। এতে করে এলাকার জনমনে নানা শঙ্কা ও ভয় দেখা দিয়েছে।
বটতলীতে সন্ত্রাসী দলটি যাদের বাড়িতে আস্তানা বানিয়ে অবস্থান করছে তারা হলেন- মো. রমজান, মো. ইয়াসিন ও মো. ফুলমিয়া। এই তিন জন বাঙালিও মুখোশদের দলে যোগ দিয়েছে বলে স্থানীয়রা জানিয়েছেন।
‘তুফান’ নামে পরিচয় দেয়া এক ব্যক্তি সন্ত্রাসী দলটির নেতৃত্বে রয়েছেন বলে জানা গেছে। আর তাদের সাথে মানিকছড়ি সদর থেকে কতিপয় ব্যক্তি ও লক্ষ্মীছড়ি সদরের সেনা জোনের পাশের আস্তানায় অবস্থানরত মুখোশ সদস্যদের মধ্যে বিজু চাকমাসহ কয়েকজন যোগ দিয়ে থাকে বলে তথ্য পাওয়া গেছে।
সেখানে অবস্থানের পর থেকে সন্ত্রাসীরা প্রতিদিন কোথাও না কোথাও সশস্ত্রভাবে ঘোরাফেরা করে জনমনে ভীতি সঞ্চার করছে। তারা বটতলীর সেই আস্তানা থেকে কখনো মোটর সাইকেলে, কখনো সিএনজি যোগে, কখনো মাইক্রোবাসে করে মানিকছড়ি উপজেলার কুমারি সহ আশে-পাশের এলাকায় এবং লক্ষ্মীছড়ি উপজেলার দুল্যাতলী ইউনিয়নের বিভিন্ন স্থানে সশস্ত্রভাবে ঘোরাফেরা করে চাঁদা আদায় করে থাকে বলে জানা গেছে। ইতোমধ্যে বিভিন্ন জনের কাছ থেকে সন্ত্রাসীরা জোরপূর্বক চাঁদা আদায় করেছে বলেও অভিযোগ পাওয়া গেছে।
জানা গেছে, সন্ত্রাসীরা যখন কোন এলাকায় যায় তখন সেনাবাহিনীর সদস্যরা সেই এলাকার আশে-পাশে গিয়ে অবস্থান করে সন্ত্রাসীদের নিরাপত্তা দেয়। এতে সন্ত্রাসীরা নির্বিঘ্নে তাদের সশস্ত্র তৎপরতা চালিয়ে থাকে।
একটি বিশ্বস্ত সূত্রে এটাও জানা যায় যে, সেনাবাহিনী উক্ত সন্ত্রাসীদের দিয়ে মানিকছড়ি ও লক্ষ্মীছড়িতে একটা বড় ধরনের অরাজক পরিস্থিতি তৈরি করার পরিকল্পনা করছে। সেনাবাহিনীর এই পরিকল্পনার উদ্দেশ্য হচ্ছে, জনমনে ভীতি সঞ্চার করে চাঁদা উত্তোলন করা। সন্ত্রাসীরা যত বেশি পরিমাণ চাঁদা উত্তোলন করতে পারবে তাদের পরিচালনায় নিয়োজিত সেনা কর্মকর্তাদের পকেটও তত ভারী হয়। এ লক্ষ্যেই সেনাবাহিনী সন্ত্রাসী দলটিকে নিয়ে এসেছে বলে সূত্রটি জানায়।
উল্লেখ্য, বর্তমানে সশস্ত্র সন্ত্রাসী দলটি যে এলাকায় অবস্থান করছে সে এলাকায় ২০১৯ সালেও একই উদ্দেশ্যে জনপ্রিয় চাকমা নামে এক সন্ত্রাসীর নেতৃত্বে একটি সশস্ত্র সন্ত্রাসী দল নিয়ে আসা হয়েছিল। কিন্তু সেনাবাহিনীর নিজেদের মধ্যে তথ্য বিনিময় না হওয়ার কারণে সে সময় ভুলক্রমে লক্ষ্মীছড়ি জোনের সেনা সদস্যরা সন্ত্রাসীদের ওপর আক্রমণ করলে জনপ্রিয় চাকমা নিজেই গুলিবিদ্ধ হয়ে অস্ত্রসহ ধরা পড়েন। তবে পরে ভুল বুঝতে পেরে সেনাবাহিনী নিজেদের গাড়িতে করেই জনপ্রিয় চাকমাকে দ্রুত চট্টগ্রামে নিয়ে গিয়ে চিকিৎসার ব্যবস্থা করে। এ ঘটনার পর সে সময় সেনাবাহিনী ওই সন্ত্রাসী দলটিকে নিরাপদে খাগড়াছড়িতে তাদের আস্তানায় ফিরিয়ে নিয়ে যায়।
দীর্ঘ দুই বছরের অধিক সময় পর আবারো একই গ্রুপের উক্ত সন্ত্রাসী দলটিকে নিয়ে আসায় জনমনে নানা আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। তবে এলাকার জনগণ সন্ত্রাসীদের বেশি বাড়াবাড়ি সহ্য করবেন না বলে জানিয়েছেন।