মহান শিক্ষা দিবস উপলক্ষে “শিক্ষা সুযোগ নয় মৌলিক অধিকার, কাউকে এ অধিকার থেকে বঞ্চিত করা যাবে না, অবিলম্বে ঝরে পড়া শিক্ষার্থী ও শিক্ষকতা ছাড়তে বাধ্য হাওয়া শিক্ষকদের স্ব-পদে ফিরিয়ে আনার উদ্যোগ নিতে হবে” এই দাবিতে খাগড়াছড়িতে ছাত্র সমাবেশ করেছে বৃহত্তর পার্বত্য চট্টগ্রাম পাহাড়ি ছাত্র পরিষ (পিসিপি) খাগড়াছড়ি জেলা শাখা।
আজ ১৭ সেপ্টেম্বর ২০২১, শুক্রবার সকাল ১০টার সময় খাগড়াছড়ি সদর এলাকায় অনুষ্ঠিত ছাত্র সমাবেশে পিসিপি খাগড়াছড়ি জেলা সভাপতি সমর চাকমার সভাপতিত্বে ও শান্ত চাকমার সঞ্চালনায় বক্তব্য রাখেন, পিসিপি’র সাবেক সভাপতি বিপুল চাকমা, পিসিপির কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক সুনীল ত্রিপুরা, হিল উইমেন্স ফেডারেশনের জেলা আহ্বায়ক এন্টি চাকমা প্রমুখ। এছাড়াও সমাবেশে সংগঠনের অন্যান্য নেতৃবৃন্দও উপস্থিত ছিলেন।
সমাবেশে বিপুল চাকমা বলেন, পার্বত্য চট্টগ্রামসহ সারা বাংলাদেশের বর্তমান শিক্ষা ব্যবস্থাকে স্বৈরাচারী ফ্যাসিস্ট সরকার বেসরকারীকরণ এবং বাণিজ্যিকীকরণ করে রেখেছে। বর্তমানে কোনো শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে মুক্তচিন্তা করার মতো গণতান্ত্রিক পরিবেশ নেই। অন্যদিকে পার্বত্য চট্টগ্রামের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানসমূহে রয়েছে কড়া সেনা নজরদারী এবং সরকারী গোপন নির্দেশনা।
তিনি আরো বলেন, করোনাকালীন বিভিন্ন কারণে ঝরে পড়া শিক্ষার্থী এবং চাকুরি হারানো শিক্ষকদের স্বপদে ফিরিয়ে আনার জন্য সরকার কোন পদক্ষেপ গ্রহণ করেনি। এমনকি কোন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে শিক্ষার্থীদের বেতন ফি মওকুফও করা হয়নি। এই থেকে বুঝা যায়, শিক্ষাকে আজও মৌলিক অধিকার হিসেবে সরকার নিশ্চিত করেনি।
তিনি বলেন, জেলা পরিষদের শিক্ষক নিয়োগের ক্ষেত্রে যে দুর্নীতি, ঘুষ বাণিজ্য চলে তা প্রাথমিক শিক্ষার্থীদের মেধাহীন করে দেয়ার ষড়যন্ত্র। আমরা অতিসত্বর পিসিপি’র শিক্ষাসংক্রান্ত ৫ (পাঁচ) দফা দাবি বাস্তবায়নপূর্বক ঝরে পড়া শিক্ষার্থী ও শিক্ষকতা ছাড়তে বাধ্য হওয়া শিক্ষকদের স্বপদে ফিরিয়ে আনতে উদ্যোগ নেওয়ার জন্য সরকারের প্রতি আহ্বান জানাই।
সুনীল ত্রিপুরা বলেন, ’৬২ সালের শরীফ শিক্ষা কমিশনের প্রস্তাবিত শিক্ষানীতিতে শিক্ষাকে অধিকার হিসেবে না দেখে বাণিজ্য হিসেবে দেখা হয়েছিলো। তাই তৎকালীন ছাত্রসমাজ এই শিক্ষা কমিশনের শিক্ষানীতিসমূহকে প্রতিক্রিয়াশীল শিক্ষানীতি হিসেবে আখ্যা দিয়েছেন। এই শিক্ষানীতির বিরুদ্ধে ছাত্র জনতা ঐক্যবদ্ধ আন্দোলন গড়ে তোলে পরে সামরিক সরকার আইয়ুব খান তা স্থগিত করতে বাধ্য হয়।
তিনি আরো বলেন, পিসিপি ২০০১ সালে পার্বত্য চট্টগ্রামসহ সারা বাংলাদেশের সকল সংখ্যালঘু জাতিসত্তার নিজ মাতৃভাষায় প্রাথমিক স্তরে শিক্ষা লাভের অধিকার নিশ্চিত করাসহ পিসিপির শিক্ষা সংক্রান্ত ৫ ফা দাবি বাস্তবায়নের জন্য সরকারের কাছে স্মারকলিপি প্রদান করে। এছাড়া বিভিন্ন সময়ে বিক্ষোভ মিছিল-সমাবেশ, প্রতীকী ক্লাশ এবং ক্লাশ বর্জনের মতো কর্মসূচি দিয়ে এখনো সে দাবি জানিয়ে আসছে। সর্বশেষ ২০১৭ সালে তৎকালীন শিক্ষামন্ত্রী পিসিপি’র দাবিকে যৌক্তিক বলে স্বীকার করে বাস্তবায়নের আশ্বাস দেন। ২০১৮ সালে প্রাথমিকভাবে চাকমা, ত্রিপুরা, মারমা, মণিপুরী ও গারো এই ৫টি ভাষায় প্রাথমিক স্তরে নিজস্ব মাতৃভাষায় পাঠ্যপুস্তক প্রণয়ন করলেও অন্যান্য জাতিসত্তার বিষয়ে সরকার এখনো কোন উদ্যোগ গ্রহণ করেনি বলে তিনি ক্ষোভ প্রকাশ করেন।
এন্টি চাকমা বলেন, বাংলাদেশের ছাত্র আন্দোলনের ইতিহাসে আজকের দিনটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ একটি দিন। ১৯৬২ সালে তৎকালীন পাকিস্তান শাসনামলে বিতর্কিত শরীফ কমিশনের চাপিয়ে দেয়া শিক্ষানীতির বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানাতে ছাত্রসমাজ ঐক্যবদ্ধ আন্দোলন গড়ে তুলেছিল। বাংলা ভাষাকে খর্ব করে উর্দু ও আরবি ভাষায় শিক্ষা এবং শিক্ষাকে বাণিজ্যিকীকরণের নীতি ছাত্রসমাজ মানতে পারেনি। বর্তমানেও্ ফ্যাসিস্ট সরকার টাকার বিনিময়ে শিক্ষা এবং ঘুষ নিয়ে অযোগ্য ব্যক্তিদের শিক্ষক নিয়োগ করে শিক্ষার কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছে। ফলে শিক্ষার্থীরা সুশিক্ষা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে এবং দেশে সুশিক্ষার মান দিন দিন হ্রাস পাচ্ছে।
ছাত্র সমাবেশে সভাপতির বক্তব্যে সমর চাকমা বলেন, বর্তমানে ক্ষমতাসীন সরকার ফ্যাসিবাদী নীতি অনুসরণ করে সারাদেশে অরাজকতা সৃষ্টি করছে। দেশে ফ্যাসিবাদী দুঃশাসনের ফলে গণতন্ত্র মৃতপ্রায়। দেশে গণতন্ত্রের নাম থাকলেও ফ্যাসিবাদী সরকারের বিরুদ্ধে গণতান্ত্রিকভাবে প্রতিবাদ সমাবেশ করা যাচ্ছে না।
তিনি বলেন, এক দেশে দুই শাসনের ফলে পার্বত্য চট্টগ্রামের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে সেনা নজরদারি, ঘরবাড়ি তল্লাশির নামে হয়রানি, নারী নির্যাতন, গণতান্ত্রিক কর্মসূচিতে রাষ্ট্রীয় বাহিনী কর্তৃক হামলার শিকার হচ্ছে।