দেশে মানুষের মানসিকতা পরিবর্তনের চেষ্টা কম: সুলতানা কামাল

সৌভিক রায়

সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা সুলতানা কামাল
সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা সুলতানা কামাল

সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা সুলতানা কামাল বলেছেন, দেশে রাস্তাঘাট, কালভার্ট, সেতুর উন্নয়ন হচ্ছে। নতুন নতুন ভবন হচ্ছে। উন্নয়নের এই দিকই শুধু বেছে নেওয়া হয়েছে। শিক্ষার গুণগত পরিবর্তন করে মানুষের মানসিকতা-মননের পরিবর্তনের চেষ্টা কম।

আজ বুধবার এক ভার্চ্যুয়াল আলোচনা সভায় এসব কথা বলেন সুলতানা কামাল। পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতির (পিসিজেএসএস) প্রতিষ্ঠাতা মানবেন্দ্র নারায়ণ লারমার ৮২তম জন্মবার্ষিকী উপলক্ষে এ আলোচনা সভার আয়োজন করে বাংলাদেশ আদিবাসী ফোরাম।

আলোচনায় সুলতানা কামাল বলেন, জাতি-ধর্ম-বর্ণনির্বিশেষে সব মানুষের সমান অধিকারের চেতনায় মুক্তিযুদ্ধ হয়েছিল। কিন্তু মুক্তিযুদ্ধের এত বছর পরও মানুষের বঞ্চনা কমেনি। বৈষম্য বরং আরও বেড়েছে।

সুলতানা কামাল বলেন, ‘বঙ্গবন্ধু তাঁর ৭ মার্চের ভাষণে নিপীড়িত মানুষের মুক্তির কথা বলেছিলেন। সেই পথ থেকে আমরা অনেক পিছিয়ে গেছি। পিছিয়ে যাওয়া আমাদের নিয়তিতে পরিণত হয়েছে।’

অনুষ্ঠানে ঐক্য ন্যাপের সভাপতি পঙ্কজ ভট্টাচার্য বলেন, মানবেন্দ্র নারায়ণ লারমা এক ব্যতিক্রমী জাতীয় নেতা ছিলেন। তিনি পিছিয়ে পড়া মানুষ ও নারীদের অগ্রগতির কথা বলতেন। কোনো জাতিকে এগিয়ে নিতে হলে শিক্ষাই যে সবচেয়ে প্রধান উপকরণ, সে কথা তিনি অনেক আগেই ভেবেছিলেন।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাস বিভাগের অধ্যাপক মেসবাহ কামাল বলেন, বাংলাদেশ বহুজাতিক মানুষের দেশ। এই জাতিগত বৈচিত্র্যকে স্বীকার করতেই হবে। মানবেন্দ্র নারায়ণ লারমা সেই স্বীকৃতির জন্য লড়াই করেছেন। ১৯৯৭ সালের পার্বত্য চুক্তির মাধ্যমে তাঁর সেই লড়াইয়ের আংশিক বিজয় হয়েছে। কিন্তু আজও পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তির অনেক কিছুই বাস্তবায়িত হয়নি।

বাংলাদেশ হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদের সাধারণ সম্পাদক রানা দাশগুপ্ত বলেন, মানবেন্দ্র নারায়ণ লারমা গণতান্ত্রিক মূল্যবোধের প্রতি শ্রদ্ধাশীল ছিলেন সব সময়। সেই মূল্যবোধগুলো এখন অনেকটাই ম্রিয়মাণ।

সাবেক সাংসদ ও জেএসএস নেতা উষাতন তালুকদার বলেন, অনেক আশা নিয়ে পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তি করা হয়েছিল। কিন্তু এর গুরুত্বপূর্ণ ধারাগুলো এখনো অবাস্তবায়িত। পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তি দ্রুত বাস্তবায়নের জন্য সরকারের প্রতি আহ্বান জানান তিনি।

অনুষ্ঠানে প্রথম আলোর যুগ্ম সম্পাদক সোহরাব হাসান বলেন, এম এন লারমা রাষ্ট্র কাঠামোে গণতান্ত্রিক করতে চেয়েছিলেন। তিনি প্রান্তিক মানুষের নাগরিক অধিকারের স্বীকৃতির লড়াই করেছিলেন।

বেসরকারি সংগঠন অ্যাসোসিয়েশন ফর ল্যান্ড রিফর্ম অ্যান্ড ডেভেলপমেন্টের (এলআরডি) নির্বাহী পরিচালক শামসুল হুদা বলেন, ‘বাংলাদেশের জাতিগত বৈচিত্র্য এখনো স্বীকৃত নয়। আধিপত্যবাদী চিন্তা থেকে এখনো আমরা বের হয়ে আসতে পারিনি।’

অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনা করেন বাংলাদেশ আদিবাসী ফোরামের সাধারণ সম্পাদক সঞ্জীব দ্রং। অনুষ্ঠানে মানবেন্দ্র নারায়ণ লারমার জীবনী পাঠ করেন উন্নয়নকর্মী চন্দ্রা ত্রিপুরা। বক্তব্য দেন কাপিং ফাউন্ডেশনের নির্বাহী পরিচালক পল্লব চাকমা।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *