নানা কর্মসূচিতে খাগড়াছড়িতে ইউপিডিএফ’র ২৩তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী পালন করা হয়েছে।
আজ ২৬ ডিসেম্বর ২০২১, রবিবার, সকালে খাগড়াছড়ি সদর এলাকায় আয়োজিত প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী অনুষ্ঠানে কর্মসূচির মধ্যে ছিল দলীয় পতাকা উত্তোলন, অস্থায়ী শহীদ স্মৃতিস্তম্ভে পুষ্পস্তক অর্পণ, শিশু-কিশোর ও ছাত্র-ছাত্রীদের জন্য চিত্রাঙ্কন, রচনা, আবৃত্তি, কুইজ ও উপস্থিত বক্তৃতা প্রতিযোগীতাসহ নানা আয়োজন। এ সময় রঙ বেরঙের পতাকা ও ব্যানার ফেস্টুনে সাজানো হয় অনুষ্ঠানস্থল। এছাড়াও সদরস্থ বিভিন্ন দর্শনীয় স্থানে পার্টির শ্লোগান সম্বলিত ব্যানার, ফেস্টুন টাঙানো হয়।
“আসুন, জাতীয় অস্তিত্ব রক্ষার্থে ঐক্যবদ্ধ আন্দোলন গড়ে তুলি” এই আহ্বানে সকাল ৯.৩০টায় শিশু-কিশোর, ছাত্র-ছাত্রীসহ ‘অগ্রণী শিশু-কিশোর কেন্দ্রের’ সদস্য, গণসংগঠনের নেতা-কর্মীরা, শহীদ পরিবারবর্গ ও শুভাকাক্সক্ষী-সমর্থকসহ বিভিন্ন এলাকার জনসাধারণ অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ করেন।
এরপর ২৩ বছরে পার্বত্য চট্টগ্রামের নির্যাতিত-নিপীড়িত মানুষের মুক্তির লক্ষ্যে নিজের বুকের রক্ত দিয়ে লড়াই সংগ্রামে সাহসিকতার সাথে ভূমিকা রেখে যারা শহীদ হয়েছেন তাদের স্মরণে নির্মিত অস্থায়ী শহীদ বেদীতে পুষ্পস্তবক অর্পণ করা হয়।
ইউপিডিএফ, পিসিপি, এইচডব্লিএফ এর পক্ষ থেকে সম্মিলিতভাবে পুষ্পস্তবক অর্পণ করা হায়। ইউপিডিএফ খাগড়াছড়ি সদর ইউনিটের পক্ষ থেকে ইউনিট সমন্বয়ক অংগ্য মারমা, পাহাড়ি ছাত্র পরিষদের কেন্দ্রীয় অর্থ সম্পাদক সমর চাকমা ও জেলা সভাপতি নরেশ ত্রিপুরা, ডিওয়াইএফ প্রতিনিধি লিটন চাকমা ও এইচডব্লিএফ সদস্য শিউলি ত্রিপুরা পুষ্পস্তবক অর্পণ করেন। অগ্রণী শিশু-কিশোর কেন্দ্রের পক্ষ থেকে পুষ্পস্তবক অর্পণ করেন সৈকত বসু, অনিন্ধিতা চাকমা ও সোহাগী চাকমা। শহীদ পরিবারের পক্ষ থেকে পুষ্পস্তবক অর্পণ করেন একি চাকমা ও দয়ানন্দি চাকমা।
শহীদ বেদীতে শ্রদ্ধা প্রদর্শনের পর শহীদদের স্মরণে দাঁড়িয়ে দ্ইু মিনিটি নিরবতা পালন করা হয়।
পুষ্পস্তবক অর্পণ শেষে ইউপিডিএফ-এর সংগঠক বিপুল চাকমার সঞ্চালনায় বক্তব্য রাখেন ইউপিডিএফের খাগড়াছড়ি ইউনিটের সমন্বয়ক অংগ্য মারমা।
অংগ্য মারমা বলেন, ‘পার্বত্য চট্টগ্রামের নিপীড়িত জনগণের অধিকার আদায়ের লক্ষ্যে ২৩ বছরের আন্দোলনের পথ অতিক্রম করা এত সহজ ছিল না। শাসকগোষ্ঠীর নিষ্ঠুর দমন-পীড়ন, গ্রেফতার, হত্যা, অপহরণ, গুম ইত্যাদির শিকার হয়েও ইউপিডিএফ দমে যায়নি। শাসকগোষ্ঠীর সকল ষড়যন্ত্র-চক্রান্ত নস্যাৎ করে ইউপিডিএফ তার লক্ষ্যে অবিচল রয়েছে এবং জনগণের মুক্তির জন্য পূর্ণস্বায়ত্তশাসন আদায়ের আন্দোলন চালিয়ে যাচ্ছে। জনগণের অকুণ্ঠ সমর্থন আর অদম্য কর্মী বাহিনীর সাহায্যে ইউপিডিএফ শাসকগোষ্ঠী ও তার দোসরদের সৃষ্ট প্রতিবন্ধকতা, সকল অপপ্রচার-মিথ্যাচার, একে একে নস্যাৎ করে দিয়ে এগিয়ে যাচ্ছে। এটা স্পষ্ট যে, এ পার্টি-ই জনগণের স্বার্থ রক্ষায় অতন্দ্র প্রহরীর মতো নিয়োজিত রয়েছে। বর্তমানে ইউপিডিএফের নেতৃত্বে মুক্তিকামী জনতা অস্তিত্ব রক্ষার সংগ্রামে নব উদ্যোমে সংগঠিত হচ্ছে এবং নিজেদের ভবিষ্যত সম্পর্কে আশাবাদী হয়েছে।’
তিনি পার্বত্য চট্টগ্রামের আন্দোলনকারী সকল শক্তিকে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার আহ্বান জানিয়ে বলেন, ‘রাজনৈতিকভাবে আমাদের জুম্মদের মধ্যে যতই মত পার্থক্যই থাকুক, যত তিক্ততাই থাকুক, জাতীয় অস্তিত্বের চেয়ে সে সব বড় কিছু নয়। প্রিয় জন্মভূমি পার্বত্য চট্টগ্রামে যদি আমরা অধিকার ও সম্মানের সাথে বেঁচে থাকতে চাই তাহলে তিক্ততা, বিভেদ ভুলে আমাদের ঐক্যবদ্ধ হতেই হবে।
তার বক্তব্যের শেষে শিশু-কিশোর ও ছাত্র-ছাত্রীদের জন্য বিভিন্ন ইভেন্টে প্রতিযোগীতার অনুষ্ঠান থাকলেও, একদল সেনা সদস্য অনুষ্ঠান স্থলের আশেপাশে উপস্থিত হলে নিরাপত্তার বিষয় বিবেচনা করে সেসব স্থগিত করা হয়। শিশু কিশোররা ব্যাপক উৎসাহ ও উদ্দীপনা নিয়ে স্বতঃস্ফূর্তভাবে এই অনুষ্ঠানে অংশ নিতে এসেছিল।