রাঙ্গামাটি সদর উপজেলায় গত ২১ ডিসেম্বর দুপুর আড়াইটার দিকে ইউপিডিএফ জেলা ইউনিটের সমন্বয়ক শান্তিদেব চাকমা পার্টি প্রতিষ্ঠার ২৩তম বার্ষিকী উপলক্ষে আনুষ্ঠানিকভাবে এক লজ্জাবতী বানর গহীন বনে অবমুক্ত করেন। এ সময় অনুষ্ঠানে পার্টি ও তিন সংগঠনের শতাধিক কর্মী উপস্থিত ছিলেন।
ইউপিডিএফ নেতা লজ্জাবতী বানর সম্পর্কে উপস্থিত সহযোদ্ধাদের ধারণা দেন এবং বন্য প্রাণী পশু-পাখী রক্ষার্থে পার্টির নীতি ও দৃষ্টিভঙ্গী তুলে ধরেন। বন, প্রকৃতি ও পরিবেশ বিষয়ে পার্টির বিভিন্ন কাযক্রম সম্পর্কেও তিনি উপস্থিত সহযোদ্ধাদের অবহিত করেন।
এখানে বলা আবশ্যক যে, আন্তর্জাতিক প্রকৃতি ও প্রাকৃতিক সম্পদ সংরক্ষণ সংস্থার (আইইউসিএন) তালিকায় বিরল ও বিপন্ন লজ্জাবতী বানর সংকটাপন্ন বন্য প্রাণী হিসেবে স্বীকৃত। বাংলাদেশের ২০১২ সালের বন্য প্রাণী আইনের তফসিল-১-এ নিশাচর এই প্রাণী সংরক্ষিত হিসেবে চিহ্নিত হয়েছে। লজ্জাবতী বানর স্থানীয়ভাবে বিভিন্ন নামে ডাকা হয়। ইংরেজিতে Bengal slow loris বা northern slow loris বলে পরিচিতি এটি হচ্ছে লরিসিডি পরিবারের একটি বানর প্রজাতি। এরা নিশাচর ও পাহাড়ি এলাকায় উঁচু গাছে বাস করে। সাধারণ বানরদের মতো এরা ফসলের ক্ষতি করে না। এদের লোম ও চামরা ঔষুধী গুণসম্পন্ন বলে প্রচলিত বিশ্বাস রয়েছে। বনজ ওষুধ তৈরির উদ্দেশ্যে কবিরাজী চিকিৎসরা এ ধরনের বানর সংগ্রহ করতে উচ্চ মূল্য দিয়ে লোক নিয়োগ করে থাকে। ইউপিডিএফ অধিকার প্রতিষ্ঠার লড়াইয়ের পাশাপাশি বন্য প্রাণী ও পরিবেশ রক্ষার্থেও জনসচেতনা বাড়ানোর কাজে নিয়োজিত রয়েছে। এর অংশ হিসেবে গেল ২১ ডিসেম্বর রাঙ্গামাটি শহরের অদূরে লজ্জাবতী বানরটি অবমুক্ত করা হয়েছে।
এখানে আরও উল্লেখ্য যে, ১৭ ডিসেম্বর রাত সাড়ে দশটার দিকে মহালছড়ি ও নান্যাচর সীমান্তবর্তী বাজেইছড়া গ্রামের শেষ প্রান্তে বানরটি লোকালয়ে ঢুকে পড়ে। গ্রামের লোকদের নজরে পড়ার আগে বানরটি ইউপিডিএফ কর্মীদের দৃষ্টিগোচর হয়। বিরল প্রজাতির বানর দেখে কর্মীরা নিকটস্থ পার্টি ইউনিটকে অবহিত করে। বন্য প্রাণী রক্ষার পার্টি নিয়ম অনুসরণ করে লোকালয়ের দূরে ছেড়ে দেয়ার লক্ষ্যে পার্টির একটি টিম নির্দেশনা মোতাবেক বানরটিকে নিজেদের হেফাজতে নেয়। লজ্জাবতী বানর অবমুক্তকরণের উক্ত অনুষ্ঠানে উপস্থিত অনেকেই ইতিপূর্বে এ জাতীয় বানর দেখেননি বলে জানান। বানরটির ব্যাপারে ধারণা পেয়ে পার্টির কর্মীবাহিনী উপকৃত হয়েছে বলে অনেকে মত প্রকাশ করেছেন।
এর আগে গত বছর (২০২০) রাঙামাটির কাউখালীতেও একই প্রজাতির একটি লজ্জাবতী বানর অবমুক্ত করা হয়েছিল।