রাঙামাটির কাউখালী উপজেলাধীন নভাঙা-দোবাকাবায় সেনা ক্যাম্প স্থাপনের কাজ বন্ধের দাবি জানিয়ে স্মারকলিপি দিয়েছে ভূমি মালিকরা।
গতকাল মঙ্গলবার (২৪ নভেম্বর ২০২০) ক্যাম্প নির্মাণ স্থলে গিয়ে কাউখালি ক্যাম্পের এক ক্যাপ্টেনের কাছে এ স্মারকলিপি দেয়া হয়, যিনি ক্যাম্প নির্মাণ কাজ তদারকি ও তত্ত্বাবধান করছেন।
স্মারকলিপিতে ভূমি মালিকরা বলেন, এ জমি তারা বংশ পরম্পরায় ভোগ দখল করে আসছেন। এখানে তাদের ৩০ বছরের পুরোনো বাগান বাগিচা রয়েছে। জীবন জীবিকার জন্য তারা উক্ত জমির উপর নির্ভরশীল। ক্যাম্প নির্মাণ করা হলে তারা উক্ত বাগান বাগিচার ভোগদখল থেকে বঞ্চিত হবেন। ক্যাম্প স্থাপন করা হলে উক্ত জমিসহ আশেপাশের জমিতে যাওয়াও বন্ধ হয়ে যাবে। নারীরা জ্বালানী কাঠ, বন্য তরিতরকারী সংগ্রহ করতে পারবে না, সেখানে গরু ছাগল চড়াতে পারবে না। এক কথায় তাদের জীবনযাত্রা বিঘ্নিত হবে।
ক্যাম্প নির্মাণ করা হলে এলাকাবাসী সেখানে নদীতে বাঁধ দিয়ে নির্মিত জলাধারটিও ব্যবহার করতে পারবে না। মাছ চাষ ছাড়াও বর্মাছড়ি বাজারে গাছ ও বাঁশ পরিবহনের জন্য এই জলাধারটি ব্যবহার করা হয়।
স্মারকলিপি দিতে যাওয়া ভূমি মালিকরা হলেন দোবাকাবা গ্রামের লক্ষী বিকাশ চাকমা, পারুল কান্তি চাকমা, অরুণ বিকাশ চাকমা ও নভাঙা গ্রামের বুদ্ধদেব তালুকদার। এ সময় ভূমি মালিকদের সাথে আরও উপস্থিত ছিলেন কাউখালি ইউপির সদস্য অমল কান্তি তালুকদার, বর্তমান মহিলা মেম্বার মিনু মারমা ও সাবেক মেম্বার পাইক্রামা মারমা।
কাউখালি ক্যাম্পের উক্ত ক্যাপ্টেন স্মারকলিপিটি গ্রহণ করে বলেন, তারা অস্থায়ীভাবে সেখানে থাকবেন। ক্যাম্প নির্মাণ করা হবে না। উপরের নির্দেশ পেলে চলে যাবেন। গাছ বাঁশ কাটার ফলে যারা যারা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন তাদের তালিকা করার জন্যও তিনি অনুরোধ জানান।
কমান্ডারের উক্ত কথার প্রেক্ষিতে পরে মন্তব্য করতে গিয়ে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এলাকার এক স্কুল শিক্ষক এই প্রতিবেদককে বলেন, তার এই কথা লোকজনকে ভুলানোর জন্য। ক্যান্টনমেন্ট বাদে কাউখালি ক্যাম্প, ঘাগড়া ক্যা্ম্প সবই তো অস্থায়ী ক্যাম্প। অস্থায়ীভাবে এই ক্যাম্পগুলো যুগের পর যুগ রয়েছে। তাই এখানে নভাঙায় আর্মিরা অস্থায়ীভাবে থাকবে বলা হলেও আসলে তা হলো কথার কথা বা কথার মারপ্যাচ। তারা তো অস্থায়ী বলতে কয়দিন তা বলেনি।
ক্যাম্প নির্মাণ করা হবে না বলে সেনা কমান্ডারের এই আশ্বাসেও আস্থা রাখা যায় না বলে উক্ত স্কুল শিক্ষক মন্তব্য করেন। তিনি প্রশ্ন রেখে বলেন যদি ক্যাম্প নির্মাণের উদ্দেশ্য তাদের না থাকে তাহলে তারা জঙ্গল কেটে সাফ করছেন কেন, কেনই বা গাছ বাশ কাটছেন স্থাপনা নির্মাণের জন্য?
তিনি ভূমি মালিকসহ এলাকাবাসীকে কমাণ্ডারের উক্ত কথায় বিভ্রান্ত না হওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন।
উল্লেখ্য, গত ২২ নভেম্বর থেকে কাউখালীর ২ নং ফটিকছড়ি ইউনিয়েনের ৭ নং ওয়ার্ডের অন্তর্গত দোবাকাবা-নভাঙা এলাকায় কোন প্রকার আইনী প্রক্রিয়া ছাড়া জোরপূর্বক জমি দখল করে সেনা ক্যাম্প নির্মাণের কাজ শুরু করা হয়। এ নিয়ে এলাকাবাসীর মধ্যে অসন্তোষ সৃষ্টি হয়েছে।