মহালছড়ি ও বাঘাইছড়ি থেকে : আসন্ন উপজেলা পরিষদ নির্বাচনকে সামনে রেখে সেনা-মদদপুষ্ট সংস্কারবাদী রাজাকারদের অস্ত্রের মহড়া ও চাঁদাবাজি বৃদ্ধি পেয়েছে। তারা প্রকাশ্য দিবালোকে এসব করে বেড়ালেও প্রশাসন তাদের বিরুদ্ধে কোন ব্যবস্থা নিচ্ছে না।
বিভিন্ন জনের সাথে কথা বলে জানা গেছে, গত ২৬ জানুয়ারি সংস্কারবাদী রাজাকারদের ২৫ জনের একটি সশস্ত্র দল মহালছড়ির মুবাছড়ির গভীর জঙ্গলের আস্তানা থেকে বের হয়ে মহালছড়ি উপজেলা সদরে আসে। তারা ২৪ মাইল, বাবুপাড়া, পাহাড়তলি ও কলেজ সংলগ্ন এলাকায় অস্ত্রসহ দিনে দুপুরে ঘোরাফেরা করে।
পরদিন ২৭ জানুয়ারি থেকে তারা রাস্তায় গাড়ি থামিয়ে চাঁদা উত্তোলন শুরু করে। এ সময় সেনাবাহিনীর দুটি গাড়ি তাদের পাশে পাহারায় থাকে। এরপর গতকাল ২৮ জানুয়ারী ও আজ ২৪ মাইলের আশেপাশের এলাকায় রাজাকাররা তাদের উপস্থিতি জানান দিতে শুন্যে ব্রাশ ফায়ার করে জনমনে আতঙ্ক সৃষ্টি করে।
তারা যেখানে অবস্থান করছে তার পাশেই রয়েছে সেনাবাহিনীর মহালছড়ি জোন ও পুলিশের থানা। এছাড়া দক্ষিণেও রয়েছে একটি সেনা ক্যা্ম্প। কিন্তু তারপরও সন্ত্রাসীদের ধরতে কিংবা চ্যালেঞ্জ করতে কোন পুলিশ কিংবা সেনাবাহিনী ঘটনাস্থলে যায়নি। তারা ছিল একেবারে নির্বিকার।
শুধু তাই নয়, আজ সন্ত্রাসীরা বিজিবির সামনেই ব্রাশ ফায়ার করে। কিন্তু তারপরও বিজিবির সদস্যরা তাদের বিরুদ্ধে কোন ব্যবস্থা নেয়নি। নাম প্রকাশ্যে অনিচ্ছুক একাধিক প্রত্যক্ষদর্শী এসব তথ্য জানিয়েছেন।
তারা বলেছেন, ‘সশস্ত্র দলটি মুবাছড়ির প্রজ্ঞান চেয়ারম্যানের লোক’। সেনাবাহিনী, বিজিবি, পুলিশ ও স্থানীয় সিভিল প্রশাসনের সামনে এভাবে প্রকাশ্যে চাঁদাবাজি ও অস্ত্রের মহড়া চালানোর পরও প্রজ্ঞান বাবুর সশস্ত্র সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে কোন ব্যবস্থা না নেয়ায় এলাকার লোকজন হতবাক ও ক্ষুদ্ধ বলে জানা গেছে।
এদিকে বাঘাইছড়িতেও সংস্কারবাদী রাজাকারদের ২০ জনের একটি দল একইভাবে সেনাবাহিনীর নিরাপত্তা বলয়ে থেকে অস্ত্রের মহড়া দিচ্ছে ও লোকজনকে ভয়ভীতি দেখাচ্ছে।
আপন চাকমার নেতৃত্বে এই সশস্ত্র দলটি ২৭ জানুয়ারী থেকে রূপকারী, ঝগড়াবিল, বড়াদাম, মগবান ও কার্বারী টিলায় প্রকাশ্যে সশস্ত্র মহড়া দিচ্ছে।
সেখানেও তারা ব্রাশ ফায়ার করে জনমনে ভয় ও আতঙ্ক সৃষ্টির চেষ্টা চালায়। কিন্ত সেনাবাহিনী কিংবা প্রশাসনের পক্ষ থেকে কোন ব্যবস্থা নেয়া হয়নি।
সন্ত্রাসীরা যেখানে অবস্থা করছে তার পূর্ব-দক্ষিণে রয়েছে বিজিবির ব্যাটালিয়ন হেডকোয়ার্টার, উত্তর-পূর্বে করেঙ্গাতলি সেনা ক্যাম্প এবং উত্তর-পশ্চিমে বেতাগীছড়া আর্মি ক্যাম্প। এগুলো সবই আনুমানিক ২ কিলোমিটারের মধ্যে।
জুম্ম রাজাকার (সংস্কারবাদী জেএসএস) ও নিরাপত্তা বাহিনীর সম্পর্ক বিষয়ে মন্তব্য করতে গিয়ে একজন সাধারণ গ্রামবাসী বলেন, সংস্কারবাদীরা তো আর্মিদেরই লোক। তারা সম্পূর্ণ আর্মিদের কথায় উঠেবসে ও চলে এবং তাদের নিরাপত্তায় থাকে।
জুম্মদের ধ্বংস করতেই সেনারা পেলেদের ব্যবহার করছে বলে তিনি মন্তব্য করেন এবং প্র্র্র্রশ্ন করেন তা না হলে তাদের সামনে, তাদের নাকে ডগায় অস্ত্র নিয়ে চাঁদাবাজি ও ফায়ার করলেও কেন আর্মিরা তাদের গ্রেফতার করে না, আর অন্যদিকে সাধারণ নিরীহ গ্রামবাসীদের ধরে ইউপিডিএফ সদস্য আখ্যায়িত করে অস্ত্র গুঁজে দিয়ে জেলে দেয়?
আসলে আর্মিরা সন্ত্রাসী ও চাঁদাবাজদের বিরুদ্ধে নয়, তারা তাদের পক্ষেই কাজ করছে বলে তিনি মন্তব্য করেন।