দেশের হিন্দু সম্প্রদায়ের ওপর সাম্প্রদায়িক হামলা, মঠ-মন্দির, বাড়ি-ঘরে অগ্নিসংযোগ, হত্যা ও লুটপাটের প্রতিবাদে এবং হামলাকারী ও মদদদাতাদের চিহ্নিত করে আটক, বিচার ও সর্বোচ্চ শাস্তির দাবিতে চট্টগ্রাম নগরীতে বিক্ষোভ সমাবেশ করেছে গণতান্ত্রিক যুব ফোরাম ও পাহাড়ি ছাত্র পরিষদ।
আজ শুক্রবার (২২ অক্টোবর ২০২১) বিকেল ৩ টায় নগরীর নন্দনকানন বৌদ্ধ বিহার মোড়ের সামনে থেকে একটি বিক্ষোভ মিছিল বের করা হয়। মিছিলটি গুরুত্বপূর্ণ সড়ক প্রদক্ষিণ করে প্রেসক্লাব ঘুরে চেরাগী মোড় চত্বরে তারা প্রতিবাদ সমাবেশ করেন।
সমাবেশে পাহাড়ি ছাত্র পরিষদ চবি শাখার সদস্য সুদেব চাকমা’র সঞ্চালনায় ও গণতান্ত্রিক যুব ফোরামের সহ-সভাপতি শুভ চাক’র সভাপতিত্বে বক্তব্য রাখেন জাতীয় মুক্তি কাউন্সিলের চট্টগ্রাম (পূর্ব-৩) অঞ্চলের সভাপতি এডভোকেট ভূলন ভোমিক, চট্টগ্রাম নিপীড়ন বিরোধী আইনজীবী মঞ্চের যুগ্ম সম্পাদক এডভোকেট বিষুময় দেব, ইউপিডিএফ’র বান্দরবান জেলা সমন্বয়ক ছোটন কান্তি তঞ্চঙ্গ্যা, ত্রিপুরা শ্রমিক সংসদের নেতা উপামোহন ত্রিপুরা, পিসিপি’র চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় শাখা আহবায়ক মিটন চাকমা ও পার্বত্য চট্টগ্রাম নারী সংঘের মহানগর সভাপতি রেশমী মারমা।
জাতীয় মুক্তি কাউন্সিলের সভাপতি এডভোকেট ভূলন ভৌমিক বলেন, ১৯৭১ সালে আমরা অসম্প্রদায়িক চেতনা নিয়ে সংঘবদ্ধভাবে সংগ্রামের মাধ্যমে পাকিস্তান রাষ্ট্রের কাছ থেকে বাংলাদেশ রাষ্ট্র সৃষ্টি করি। কিন্তু আজও এই দেশকে অসম্প্রদায়িক চেতনার বাংলাদেশ গড়ে তুলতে পারিনি।
তিনি বলেন, রামু থেকে শুরু করে সর্বশেষ কুমিল্লা রংপুরসহ সমগ্র বাংলাদেশে যতগুলো সংখ্যালঘুদের উপর সাম্প্রদায়িক হামলা হয়েছে সবগুলো রাষ্ট্রের মদদে হয়েছে। যতক্ষণ পর্যন্ত এই ফ্যাসিবাদী সরকার ক্ষমতার থাকবে ততক্ষণ পর্যন্ত এদেশের সংখ্যালঘুরা নিরাপদ নয়।
তিনি অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশ গড়ে তোলার জন্য গণআন্দোলনের মাধ্যমে এই সরকারকে অপসারণ করে জনগণের সরকার প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে সবাইকে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার আহ্বান জানান।
নিপীড়ন বিরোধী আইনজীবী মঞ্চের যুগ্ম সম্পাদক এডভোকেট বিষুময় দেব বলেন, পাহাড়ে যেমন বাঙালি-পাহাড়ি দ্বন্দ্ব লাগিয়ে দিয়ে শাসকগোষ্ঠি জাতিগতভাবে বিভক্ত করতে চায়, ঠিক একইভাবে সমতলেও যখন মানুষে মানুষে ঐক্যবদ্ধ হয় তখনই মানুষের দৃষ্টিকে ভিন্ন দিক প্রবাহিত করার জন্য শাসকগোষ্ঠী সাম্প্রদায়িক বিষয়গুলো সামনে নিয়ে আসে।
তিনি বলেন, এই দেশে পাহাড় কিংবা সমতলে যতগুলো সাম্প্রদায়িক হামলার ঘটনা ঘটেছে তার একটিরও বিচার হয়নি। এই বিচারহীনতার সংস্কৃতির কারনে এদেশে বার বার সাম্প্রদায়িক হামলার ঘটনা ঘটছে।
ইউপিডিএফ নেতা ছোটন কান্তি তঞ্চঙ্গ্যা বলেন, দেশের সকল জনগণের নিরাপত্তা দেয়ার দায়িত্ব সরকারের। কিন্তু সরকার সেই নিরাপত্তা দিতে ব্যর্থ হয়েছে। তাই সাম্প্রতিক সময়ে দেশে ঘটে যাওয়া হিন্দু সম্প্রদায়ের ওপর হামলার সকল দায়-দায়িত্ব সরকারকে নিতে হবে।
তিনি বলেন আওয়ামী লীগ সরকার সংবিধানে রাষ্ট্রধর্ম ইসলাম বহাল রাখার মাধ্যমেই প্রমাণ করেছে তারাই এদেশের ধর্মান্ধ গোষ্ঠীকে মদদ যুগিয়ে যাচ্ছে।
তিনি পাহাড় ও সমতলে জাতিগত নিপীড়নের বিরুদ্ধে সকল সংখ্যালঘু সম্প্রদায়কে ঐক্যবদ্ধভাবে প্রতিবাদ-প্রতিরোধ গড়ে তোলার আহ্বান জানান।
সমাবেশ থেকে বক্তারা অবিলম্বে হিন্দু সম্প্রদায়ের ওপর হামলাকারী ও তাদের মদদদাতাদের চিহ্নিত করে আইনের আওতায় এনে যথাযথ বিচারের মাধ্যমে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি প্রদানের দাবি জানান।