চট্টগ্রামে পিসিপি, ডিওয়াইএফ, এইচডব্লিউএফ’র সংহতি সমাবেশ
নিজস্ব প্রতিবেদক।। বান্দরবানের লামায় ম্রো ও ত্রিপুরাদের জুম ও প্রাকৃতিক সম্পদ ধ্বংসকারী লামা রাবার ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেডের চেয়ারম্যান সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেনসহ মুল হোতাদের গ্রেফতার ও শাস্তি, ক্ষতিগ্রস্তদের ক্ষতিপূরণ প্রদান এবং লুন্ঠিত ভূমি ফেরত দেয়ার দাবিতে চট্টগ্রামে সংহতি সমাবেশ করেছে বৃহত্তর পার্বত্য চট্টগ্রাম পাহাড়ি ছাত্র পরিষদ (পিসিপি), গণতান্ত্রিক যুব ফোরাম (ডিওয়াইএফ) ও হিল উইমেন্স ফেডারেশন (এইচডব্লিউএফ) চট্টগ্রাম মহানগর ও চবি শাখা।
আজ শুক্রবার (১৩ মে ২০২২) বিকাল ৩টার সময় চট্টগ্রাম নগরীর ডিসি হিল হতে একটি মিছিল বের করা হয়। মিছিলটি গুরুত্বপূর্ণ সড়ক প্রদক্ষিণ করে প্রেস ক্লাবের সামনে থেকে ঘুরে এসে চেরাগি পাহাড় মোড়ে সংহতি সমাবেশের মধ্য দিয়ে শেষ হয়।
সমাবেশে গণতান্ত্রিক যুব ফোরামের মহানগর শাখার ভারপ্রাপ্ত সভাপতি শুভ চাকের সভাপতিত্বে ও পিসিপি মহানগর শাখার আহ্বায়ক অমিত চাকমার সঞ্চালনায় বক্তব্য রাখেন চট্টগ্রাম মহানগর, মুক্তিযুদ্ধ গবেষণা কেন্দ্রের চেয়ারম্যান মুক্তি যোদ্ধা ও ডা. মাহফুজুর রহমান, বাংলাদেশের সাম্যবাদী দল পাঠচক্র ফোরামের কেন্দ্রীয় নেতা অপুদাশ গুপ্ত, চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের সাবেক কাউন্সিলর জান্নাতুল ফেরদৌস পপি, প্রগতিশীল চিকিৎসক ডা. সুশান্ত বড়ুয়া, পাহাড়ি ছাত্র পরিষদের কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক সুনীল ত্রিপুরা ও চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সাধারণ সম্পাদক সোহেল চাকমা প্রমুখ।
মুক্তিযুদ্ধ গবেষণা কেন্দ্রের চেয়ারম্যান ও বীর মুক্তিযোদ্ধা ডা. মাহফুজুর রহমান বলেন, পার্বত্যবাসীদের উপর যে অত্যাচার, নিপীড়ন হচ্ছে তার বিরুদ্ধে মুক্তিযোদ্ধারা তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাচ্ছে। সমতলের জনগণ এবং পাহাড়ি জনগণকে ঐক্যবদ্ধ হয়ে ভূমি রক্ষার লড়াই জারি রাখতে হবে। চট্টগ্রামের সিআরবি ও পতেঙ্গা সি বিচ রক্ষার জন্য ঐক্যবদ্ধভাবে আন্দোলন করতে হচ্ছে। আমরা মুক্তিযোদ্ধাদের পক্ষ থেকে ম্রো এবং ত্রিপুরা জাতিসত্তাদের প্রতি পূর্ণ সংহতি জানাই।
ডা. সুশান্ত বড়ুয়া বলেন, প্রশাসনের লোকজন আজকে বহু কথা বলেন, অথচ তাদের কাছ থেকেই লীজ নিয়ে লামা রাবার ইন্ডাষ্ট্রিজ কোম্পানি ম্রো ও ত্রিপুরা জনগোষ্ঠীর ভুমি দখল করেছে। যারা জুমের জমি পুড়িয়ে দিয়েছে তাদের নাম বিভিন্ন পত্র পত্রিকায় প্রকাশ পেয়েছে, এখন শুধু দেখার অপেক্ষায় রাবার কোম্পানির বিরুদ্ধে স্থানীয় প্রশাসন কি পদক্ষেপ গ্রহণ করেন।
তিনি বলেন, বাংলাদেশের সবচেয়ে নিপীড়িত গোষ্ঠী হলো ম্রো জনগোষ্ঠী, তাদের উপর যখন নিপীড়ন চালানো হয় তখন আমাদের হৃদয়ে রক্তক্ষরণ হয়। যারা দেশ ও জনগনের জন্য রাজনীতি করেন তারা কখনই ম্রো ও ত্রিপুরা জনগোষ্ঠীর এই দুঃসময়ে পাশে না দাঁড়িয়ে বসে থাকতে পারেন না। আওয়ামী-বিএনপি যে সংগঠনই হোক না কেন যারা তাদের এই আন্দোলনে সাথে দাঁড়াতে পারেন না তাদের রাজনীতি ছেড়ে দেয়া উচিত বলে তিনি মন্তব্য করেন।
সরকারের সমালোচনা করে তিনি বলেন, পার্বত্য চট্টগ্রামে তাদেরকেই প্রশাসনে নিয়োগ দেওয়া হয় যারা সমতলে সমতলে নানা অপরাধে জড়িয়ে পড়ে। এই বৈষম্য নীতি থেকে সরে এসে যোগ্য কর্মকর্তাদের নিয়োগের জন্য তিনি সরকারের প্রতি আহ্বান জানান।
সংহতি সমাবেশে সভাপতির বক্তব্যের মধ্য দিয়ে নিম্নোক্ত দাবীগুলো উত্থাপন করা হয়:
১। লামায় ম্রো ও ত্রিপুরা জাতিসত্তার সাড়ে ৩০০ একর অধিক জুমসহ প্রাকৃতিক বন, বনজ সম্পদ ও বাস্তুতন্ত্র আগুন দিয়ে ধ্বংসের সাথে জড়িত লামা রাবার ইন্ডাস্ট্রিজ লিঃ এর কর্মকর্তা ও কর্মচারীসহ অন্যান্যদের গ্রেফতার ও শাস্তি দিতে হবে।
২। উক্ত ঘটনায় ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারগুলোকে যথাযথ ক্ষতিপূরণ দিতে হবে ও তাদের জন্য দ্রুত ত্রাণের ব্যবস্থা করতে হবে।
৩। ল্যাংকম পাড়া, রেংয়েন পাড়া ও জয়চন্দ্র পাড়াবাসীদের জুমভূমি বেদখলের ষড়যন্ত্র বন্ধ করতে হবে; ইতিমধ্যে বেদখলকৃত জমি ফেরত দিতে হবে।
৪। ঘটনায় ক্ষতিগ্রস্তদের পুনর্বাসনের জন্য তাদেরকে বিনামূল্যে জুম ধানের বীজ ও বিভিন্ন ফলদ চারা সরবরাহ করতে হবে।
৫। লামা উপজেলাসহ বান্দরবানে রাবার বাগানের জন্য দেয়া জমির লিজ/ইজারা বাতিল করতে হবে।
৬। পার্বত্য চট্টগ্রামে পাহাড়িদের প্রথাগত ভূমি আইনের স্বীকৃতি দিতে হবে।