নিজস্ব প্রতিবেদক।। গুমের শিকার ইউপিডিএফ নেতা মাইকেল চাকমার সন্ধান দেওয়া, সেনা শাসন তুলে নেওয়া, পাহাড় ও সমতলে বিনা বিচারে হত্যা-গুম বন্ধ করা এবং রমেল, সৌরভ হত্যায় জড়িতদের দ্রুত গ্রেপ্তার ও বিচারের দাবিতে চট্টগ্রামে গতকাল শনিবার (৯ এপ্রিল ২০২২) চট্টগ্রাম নগরীতে বিক্ষোভ মিছিল করেছে পাহাড়ের তিন সংগঠন গণতান্ত্রিক যুব ফোরাম, পাহাড়ি ছাত্র পরিষদ(পিসিপি) ও হিল উইমেন্স ফেডারেশন।
নগরীর ডিসি হিল সামনে থেকে গতকাল বিকাল সাড়ে ৩টায় একটি বিক্ষোভ মিছিল বের করা হয়। মিছিলটি গুরুত্বপূর্ণ সড়ক প্রদক্ষিণ করে সমাবেশের মধ্য দিয়ে শেষ হয়।
উক্ত সমাবেশে সভাপতিত্ব করেন গণতান্ত্রিক যুব ফোরামের নগর কমিটির সিনিয়র সহ-সভাপতি, উচিংশৈ চাক (শুভ)। অন্যান্যের মধ্যে এতে আরো বক্তব্য রাখেন, জাতীয় মুক্তি কাউন্সিল-(পূর্ব -৩) চট্টগ্রাম অঞ্চলের সভাপতি এডভোকেট ভূলন ভৌমিক, বিপ্লবী ছাত্র যুব-আন্দোলনের সহ-সভাপতি তিতাস চাকমা, বাংলাদেশের সাম্যবাদী দল পাঠচক্র ফোরামের কেন্দ্রীয় নেতা অপুদাশ গুপ্ত, হিল উইমেন্স ফেডারেশনের কেন্দ্রীয় সদস্য জেসি চাকমা প্রমুখ। সভা সঞ্চালনা করেন পিসিপি চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে শাখার সহ-সাধারণ সম্পাদক সুদেব চাকমা।
জাতীয় মুক্তি কাউন্সিল-এর চট্টগ্রাম অঞ্চলের সভাপতি এডভোকেট ভূলন ভৌমিক বলেন, ইউপিডিএফ সংগঠক মাইকেল চাকমাকে ২০১৯ সালের ৯ এপ্রিল এই দিনে ঢাকার অদূরে নারায়ণগঞ্জ এলাকা থেকে অপহরণ করে নিয়ে যায় এবং আজ ৩ বছরেও রাষ্ট্র তার সন্ধান দিতে পারেনি। শুধুই মাইকেল নয় গত ১২ বছরের ৫৭০ জনের অধিক মানুষ নিখোঁজ হয়েছে।
তিনি আরো বলেন, বাংলাদেশ স্বাধীন হবার পর আমরা প্রত্যাশা করেছিলাম গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠিত হবে। যেখানে মানুষের মধ্যে কোন ভেদাভেদ থাকবে না। থাকবে মানুষের মত প্রকাশের স্বাধীনতা। বাস্তবে এই রাষ্ট্রটি সম্পূর্ণ ব্যর্থ রাষ্ট্রে পরিণত হয়েছে। শাসকশ্রেণীর সরকার জুম্ম জাতিসত্তার জনগণকে নির্মূল করার জন্য বিভিন্নভাবে অপচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে।
তিনি আরো বলেন, সরকার সিন্ডিকেট সৃষ্টি করে চাল ডালসহ নিত্য প্রয়োজনীয় দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধি করে লুটপাট করছে। তাই এই সরকারকে উৎখাত করার জন্য সকল দেশপ্রেমিক গণতান্ত্রিক শক্তিকে ঐক্যবদ্ধ লড়াই সংগ্রাম চালিয়ে যেতে হবে।
বিপ্লবী ছাত্র যুব আন্দোলনের নেতা তিতাস বলেন, আওয়ামী ফ্যাসিবাদী সরকার কর্তৃক গুম, খুন অপহরণ স্বাভাবিক ব্যাপার। পার্বত্য চট্টগ্রামের ইউপিডিএফ আপোষহীনভাবে গণতান্ত্রিক আন্দোলনের নেতৃত্ব দিয়ে আসছে। সেই আন্দোলনে ইউপিডিএফ নেতা মাইকেল চাকমা’র একনিষ্ঠ ভূমিকা ছিল। তার সেই আন্দোলনের ভূমিকার কারণেই মাইকেল চাকমা শাসকশ্রেণীর লক্ষ্যবস্তুতে পরিণত হয়েছিলেন।
তিনি আরো বলেন, বিগত কিছুদিন আগে খাগড়াছড়ি দীঘিনালায় সেনাবাহিনরি হেফাজতে নবায়ন চাকমাকে বিনা বিচারে হত্যা করা হয়েছিল।
তাই সকল শাসকশ্রেণী কর্তৃক বিনা বিচারে গুম, খুন, অপহরণের বিরুদ্ধে সোচ্চার হতে হবে।
বাংলাদেশের সাম্যবাদী দল পাঠচক্র ফোরামের কেন্দ্রীয় নেতা অপুদাশ গুপ্ত বলেন, গত ১০ বছর ধরে আ্ওয়ামী লীগ সরকার বিনাভোটে অবৈধভাবে ক্ষমতায় থেকে জনগণের কন্ঠরোধ করে আসছে। আপনারা জানেন, পাহাড়ি-আদিবাসীরাও মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ করেছিল। দেশ স্বাধীন করতে ভূমিকা পালন করেছিল। কিন্তু বিনিময়ে গত ৫০ বছরে এদেশের শাসকগোষ্ঠি তাদের ওপর ধারাবাহিকভাবে দমন-পীড়ন চালিয়ে যাচ্ছে। নিজ বাস্তুভিটা থেকে কখন উচ্ছেদের শিকার হয় সেই আতঙ্ক নিয়ে বসবাস করছে পাহাড়িরা।
তিনি বলেন, পাহাড় ও সমতলে শাসকশ্রেণীর দমন-পীড়নের বিরুদ্ধে মাইকেল চাকমার বলিষ্ঠ ভূমিকা ছিল।
বক্তারা বলেন, সরকার টার্গেট করে রাজনৈতিক নেতা কর্মীদের গুম, খুন, অপহরণ করে জনগণের কন্ঠরোধ করতে চায়। জনগণের ঐক্যবদ্ধ আন্দোলনকে ভয় পায় বলেই সরকার এসব গণবিরোধী কার্যকলাপে লিপ্ত হচ্ছে। সেই কারণে মাইকেল চাকমা গুমের শিকার হয়েছেন। শুধু মাইকেল চাকমা নয়, আরো অনেক মানুষও গুম, খুন, অপহরণের শিকার হয়েছেন।
তারা মাইকেল চাকমাসহ যারা গুমের শিকার হয়েছেন তাদের অনতিবিলম্বে সন্ধান ও নিঃশর্ত মুক্তি এবং রমেল, সৌরভ হত্যায় জড়িতদের গ্রেফতারপুর্বক যথাযথ বিচার ও দমন-পীড়ন বন্ধের দাবি জানান।