বান্দরবানে সেনা সদস্য কর্তৃক পাহাড়ি নারীকে ধর্ষণ চেষ্টার প্রতিবাদে ঢাকায় পিসিপি’র বিক্ষোভ

বান্দরবান সদর উপজেলায় ১নং রাজবিলা ইউনিয়নে তাইনখালি বাজার পাড়া এলাকায় গতকাল সোমবার জনৈক সেনা সদস্য কর্তৃক এক সন্তানের জননী পাহাড়ি নারীকে ধর্ষণ চেষ্টার প্রতিবাদে ঢাকায় বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ করেছে বৃহত্তর পার্বত্য চট্টগ্রাম পাহাড়ি ছাত্র পরিষদ (পিসিপি) ঢাকা মহানগর শাখা।

আজ মঙ্গলবার (১৯ জানুয়ারি ২০২১) বেলা সাড়ে তিনটায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাজু ভাস্কর্যের পাদদেশে অনুষ্ঠিত সমাবেশে পিসিপি’র ঢাকা নগরের সভাপতি শুভাশীষ চাকমার সভাপতিত্বে  ও সাধারন সম্পাদক রিপন জ্যোতি চাকমার সঞ্চালনায় বক্তব্য রাখেন পিসিপি কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক অমল ত্রিপুরা, ঢাকা নগরের সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক অর্ণব চাকমা ও ছাত্র ফ্রন্ট (বাসদ) ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সাধারন সম্পাদক রাজীব কান্তি দাশ।

বক্তারা বলেন, পাহাড়ে সেনা সদস্য দ্বারা ধর্ষণ ও ধর্ষণ চেষ্টার অভিযোগ নতুন নয়। এর আগে ২০১৮ সালের ২২ জানুয়ারি রাঙামাটির বিলাইছড়িতে তল্লাশির নামে পাহাড়ি দুই বোনকে ধর্ষণের ঘটনায় সেনাবাহিনী সদস্যদের জড়িত থাকার অভিযোগ রয়েছে। ’৯৬ সালে কল্পনা চাকমা অপহরণ ঘটনার সাথেও সেনাবাহিনী জড়িত রয়েছে। এছাড়াও পাহাড়ে এমন আরও বহু ঘটনার সাথে তাদের জড়িত থাকার অভিযোগ রয়েছে। কিন্তু এসব ঘটনার কোন বিচার হয়নি।

তারা আরও বলেন, পাহাড়ে নিয়োজিত রাষ্ট্রীয় বাহিনী শুধু নারীর ওপর নিপীড়ন চালাচ্ছে তা নয়, তারা এখন  রীতিমত তৎকালীন পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর কায়দায় দমন-পীড়ন চালাচ্ছে। ২০১৪ সালে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রণালয় কর্তৃক “১১ দফা” নির্দেশনা জারির পর এই নিপীড়ন আরও অধিকহারে বেড়ে গেছে। অন্যায় ধরপাকড়, বিচার বহির্ভুত হত্যা, অস্ত্র গুজে দিয়ে মিথ্যা মামলায় জেলে প্রেরণ, রাত-বিরাতে ঘরবাড়িতে তল্লাশি এখন নিত্য নৈমিত্তিক ঘটনায় পরিণত হয়েছে। অন্যদিকে কিছু বখাটের হাতে ভারী অস্ত্র তুলে দিয়ে তাদেরকে মদদ ও আশ্রয়-প্রশ্রয় দিয়ে গুম-খুন-অপহরণ করে পার্বত্য চট্টগ্রামকে অশান্ত করে রেখেছে।

সভাপতির বক্তব্যে শুভাশীষ চাকমা বলেন, যে সেনাবাহিনী বিদেশে শান্তিরক্ষা মিশনে কাজ করছে, সে সেনাবাহিনীর সদস্যরা নিজ দেশে নারীদের উপর যৌন নিপীড়নসহ জনগণের উপর অবর্ণনীয় দমন-পীড়ন চালিয়ে যাচ্ছে। একটি স্বাধীন দেশে এটা কারোর কাম্য নয়।

পার্বত্য চট্টগ্রামে নিয়োজিত সেনাবাহিনীর মধ্যেকার একটি কায়েমী স্বার্থবাদী গোষ্ঠীর অপকর্মের দায়ভার লজ্জাজনকভাবে আজ গোটা বাহিনীকে বহন করতে হচ্ছে বলে তিনি মন্তব্য করেন।

তিনি পার্বত্য চট্টগ্রাম থেকে অঘোষিত সেনাশাসন প্রত্যাহারপূর্বক সুষ্ঠু গণতান্ত্রিক ও শান্তিপূর্ণ পরিবেশ নিশ্চিত করার জন্য সরকারের প্রতি আহ্বান জানান।

সমাবেশ থেকে বক্তারা অবিলম্বে ধর্ষণ চেষ্টার ঘটনায় জড়িত সেনা সদস্যকে চিহ্নিত করে আইনের আওতায় এনে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি এবং পাহাড় ও সমতলে নারী ধর্ষণ-নিপীড়ন বন্ধ করার দাবি জানান।

সমাবেশের পর একটি মিছিল বের করা হয়। মিছিলটি রাজু ভাস্কর্য থেকে শুরু হয়ে স্বোপার্জিত চত্বর ঘুরে পুনরায় একই স্থানে এসে শেষ হয়।

উল্লেখ্য, বেশ কয়েকদিন ধরে রাজবিলা ইউনিয়নের তাইনখালি বাজার সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে অস্থায়ী ক্যাম্প বানিয়ে ৩০ জনের একটি সেনাদল অবস্থান করে আসছে। সেখান থেকে গতকাল (সোমবার) দুপুরে জনৈক এক সেনা সদস্য সাদা পোশাকে পার্শ্ববর্তী পাড়ার একটি বাড়িতে গিয়ে এক সন্তানের জননী ওই নারীকে ধর্ষণের চেষ্টা চালায় বলে অভিযোগ উঠেছে। উক্ত ঘটনা প্রতিবাদে স্থানীয় নারীরা আজ সকালে সেনাদলটির অবস্থানস্থলে গিয়ে বিক্ষোভ প্রদর্শন করেছে। নারীদের এই প্রতিবাদের ভিডিওটি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়েছে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *