চিম্বুক পাহাড়ে হোটেল-বিনোদন পার্ক নির্মাণ বন্ধের দাবিতে চট্টগ্রামে ৪ সংগঠনের বিক্ষোভ

চিম্বুক পাহাড়ে ম্রোদের ভূমি বেদখল করে সিকদার গ্রুপ ও সেনা কল্যান ট্রাস্টের উদ্যোগে পাঁচতারকা হোটেল নির্মাণ বন্ধ করা এবং ম্রোদের ৫ দফা দাবি মেনে নিয়ে তাদের ভূমি ফিরিয়ে দেয়ার দাবিতে চট্টগ্রামে বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়েছে।

আজ শুক্রবার (১৯ ফেব্রুয়ারি ২০২১) বিকালে গণতান্ত্রিক যুব ফোরাম, পাহাড়ি ছাত্র পরিষদ, হিল উইমেন্স ফেডারেশন এবং পার্বত্য চট্টগ্রাম নারী সংঘ চট্টগ্রাম মহানগর শাখা যৌথভাবে এই বিক্ষোভের আয়োজন করে।

বিকাল সাড়ে ৩টায় নগরীর ডিসি হিল হতে একটি বিক্ষোভ মিছিল বের করা হয়। মিছিলটি গুরুত্বপূর্ণ সড়ক প্রদক্ষিণ করে প্রেসক্লাব ঘুরে চেরাগী পাহাড় মোড়ে এক প্রতিবাদ সমাবেশে মিলিত হয়।

গণতান্ত্রিক যুব ফোরাম নেতা শুভ চাকের সভাপতিত্বে ও পাহাড়ি ছাত্র পরিষদের চট্টগ্রাম মহানগর শাখার সাধারণ সম্পাদক অমিত চাকমার সঞ্চালনায় সমাবেশে বক্তব্য রাখেন পিসিপি চবি শাখার দপ্তর সম্পাদক সোহেল চাকমা ও পার্বত্য চট্টগ্রাম নারী সংঘের নগর সভাপতি রেশমি মারমা।

সংহতি জানিয়ে সমাবেশে আরও বক্তব্য রাখেন ছাত্র ফেডারেশন নেতা কাজী আরমান, ছাত্র ইউনিয়ন চবি শাখার নেতা প্রত্যয় নাফাক, ছাত্র ফ্রন্ট মহানগর নেত্রী দিপা মজুমদার ও গণতান্ত্রিক ছাত্র কাউন্সিল নেত্রী এ্যনি চৌধুরী।

সমাবেশ থেকে বক্তারা চিম্বুক পাহাড়ে ম্রোদের ভূমি বেদখল করে পাঁচতারকা হোটেলসহ পর্যটন নির্মাণের যে প্রচেষ্টা তা বন্ধ করার জোর দাবি জানান।

প্রত্যয় নাফাক বলেন, শাসকগোষ্ঠী বাংলাদেশে বসবাসরত বাঙালি ভিন্ন জাতিগোষ্ঠীকে দেশ থেকে তাড়ানোর জন্য কৌশলে পর্যটনের নামে তাদের ভূমি বেদখল করছে।

কাজী আরমান বলেন, সরকার উগ্র বাঙালি জাতীয়তাবাদ চাপিয়ে দিয়ে এবং পাহাড়ি জনগোষ্ঠীকে তাদের ভূমি থেকে উচ্ছেদের জন্য পর্যটনের নাম করে ভূমিদুস্যুতার মাধ্যমে তাদের উচ্ছেদ অভিযান চালিয়ে যাচ্ছে।

বক্তারা গত ১৮ ফেব্রুয়ারি বিশেষ গোষ্ঠীর সমর্থিত একটি অনলাইন নিউজ পোর্টালে “চন্দ্রপাহাড় রিসোর্টে স্থানীয় হাজার হাজার উপজাতিদের কর্মসংস্থান সৃষ্টি হবে” শিরোনামে প্রকাশিত সংবাদকে ঘৃন্যভরে প্রত্যাখ্যান করেন। তারা এটি সেনাবাহিনী ও সরকারের ছলচাতুরী বলে অভিহিত করেন।

সমাবেশ বক্তারা অবিলম্বে পাহাড়ে সেনাবাহিনী কর্তৃক যে দমন-পীড়ন বন্ধ করা, পাহাড়িদের প্রথাগত ভূমি মালিকানা ফিরিয়ে দেয়া ও ম্রোদের ৫ দফা দাবি মেনে নিয়ে চিম্বুক পাহাড়ের জীব ও জনবৈচিত্র্য রক্ষা করার জন্য সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন।

উল্লেখ্য চিম্বুক পাহাড়ে বসবাসরত ম্রো জনগোষ্ঠীর বংশপরম্পরায় ভোগদখলীয় জমিতে সিকদার গ্রুপ ও সেনা কল্যাণ ট্রাস্ট পাঁচতারকা হোটেল ও বিনোদন পার্ক নির্মাণ করছে। এর ফলে সেখানকার প্রায় ৮-১০ টি গ্রাম উচ্ছেদ ও ১০ হাজারের অধিক ম্রো জনগণ তাদের বাস্তুভিটা হারানোর আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। তাই এর বিরুদ্ধে ম্রোরা নিজেদের ভুমি রক্ষার জন্য আন্দোলন চালিয়ে যাচ্ছে। তারা গত বছর ৮ নভেম্বর কালাচারাল শোডাউনের মাধ্যমে প্রতিবাদ সমাবেশ, গত ৭ ফেব্রুয়ারি চিম্বুক থেকে বান্দরবান সদর পর্যন্ত লংমার্চ কর্মসূচি পালন করেছে।

উক্ত হোটেল ও বিনোদন পার্ক প্রকল্প বন্ধের আহ্বান জানিয়ে ইতোমধ্যে জাতিসংঘ বিশেষজ্ঞগণ বিবৃতি দিয়েছেন। এছাড়া অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল, সিএইচটি কমিশনসহ দেশী-বিদেশী বিভিন্ন মানবাধিকার সংস্থা ও দেশের বুদ্ধিজীবীগণ উক্ত প্রকল্পটি বাতিলে দাবি জানিয়েছেন।

প্রকল্পটি বন্ধের দাবিতে পার্বত্য চট্টগ্রামসহ দেশব্যাপী ব্যাপক প্রতিবাদ-বিক্ষোভ সংগঠিত হয়েছে।

কিন্তু সরকার ও প্রকল্প বাস্তবায়নকারী সংস্থাগুলো এখনো প্রকল্পটি বন্ধে কোন উদ্যোগ নেয়নি। বরং স্থানীয় ম্রো জনগণকে নানাভাবে হয়রানিসহ তাদের ভোগদখলীয় জায়গায় প্রবেশে বাধা সৃষ্টি করে চলেছে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *