বান্দরবানের চিম্বুক পাহাড়ে ম্রোদের জমি বেদখল করে পাঁচতারকা হোটেল নির্মাণ বন্ধ এবং বাংলাদেশ সেনাবাহিনী ও জেলা পরিষদের মধ্যে অবৈধ ভূমি লিজ চুক্তি বাতিলপূর্বক ম্রোদের ভূমি ফিরিয়ে দেয়ার দাবিতে চট্টগ্রাম নগরীতে লাল কার্ড প্রদর্শন মিছিল ও সমাবেশ করেছে চার পাহাড়ি সংগঠন।
আজ শুক্রবার (২৭ নভেম্বর ২০২০) বেলা সাড়ে ৩ টায় গণতান্ত্রিক যুব ফোরাম, পাহাড়ি ছাত্র পরিষদ, হিল উইমেন্স ফেডারেশন ও পার্বত্য চট্টগ্রাম নারী সংঘ যৌথভাবে এই লাল কার্ড প্রদর্শন মিছিল ও সমাবেশের আয়োজন করে।
সমাবেশের পূর্বে লাল কার্ড প্রদর্শন সহকারে একটি বিক্ষোভ মিছিল বের করা হয়। মিছিলটি ডিসি হিল নন্দনকানন মোড়ের সামনে থেকে শুরু হয়ে নগরীর গুরুত্বপূর্ণ সড়ক প্রদক্ষিণ করে চেরাগী পাহাড় মোড়ে সমাবেশের মাধ্যমে শেষ হয়।
সমাবেশের সভাপতির বক্তব্যের পূর্বে বাংলাদেশ সেনাবাহিনী ও জেলা পরিষদের মধ্যে অবৈধ লিজ চুক্তিকে বাতিলের দাবি জানিয়ে লিজ চুক্তির কপি পুড়িয়ে দেওয়া হয়।
সমাবেশে গণতান্ত্রিক যুব ফোরামের মহানগর নেতা উচিংশৈ চাক (শুভ)-এর সভাপতিত্বে ও পিসিপি চবি শাখার নেতা সোহেল চাকমা’র সঞ্চালনায় বক্তব্য রাখেন- বিশিষ্ট মুক্তিযোদ্ধা ও গবেষক ডাঃ মাহফুজুর রহমান, প্রগতিশীল চিকিৎসক ডাঃ সুশান্ত বড়ুয়া, সিটি.জাতীয় মুক্তি কাউন্সিল(পূর্ব-৩- এর নেতা সামিউল আলম রিচি, গণসংহতি আন্দোলনের সমন্বয়ক হাসান মারুফ রুমি, বাসদ (মার্কসবাদী) চট্টগ্রাম অঞ্চলের নেতা এডভোকেট শফিউদ্দিন কবির আবিদ, এডভোকেট বিষুময় দেব, বিএমএসসি’র চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় শাখা সভাপতি উথোয়াই মারমা, বিপ্লবী ছাত্র-যুব আন্দোলনের নেতা নিশান চাকমা, পার্বত্য চট্টগ্রাম নারী সংঘের সহ-সভাপতি পিংকি চাকমা, পাহাড়ি ছাত্র পরিষদের কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক সুনয়ন চাকমা ও হিল উইমেন্স ফেডারেশনের কেন্দ্রীয় সদস্য রেশমী মারমা প্রমুখ।
বিশিষ্ট মক্তিযোদ্ধা ও গবেষক ডাঃ মাহফুজুর রহমান বলেন, মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ছিল বাংলাদেশের সকল জাতিগোষ্ঠীকে মর্যাদা দিয়ে রক্ষা করা। তিনি মুক্তিযুদ্ধের চেতনাকে অক্ষুন্ন রাখতে পাহাড়িদের ভূমি অধিকারসহ তাদের জীবন মানের নিরাপত্তা বিধানের জন্য সরকারের কাছে আহ্বান জানান।
প্রগতিশীল চিকিৎসক ডাঃ সুশান্ত বড়ুয়া বলেন, দেশের মানুষ পাহাড়কে পাহাড়ের রূপে, তার প্রকৃতিকে এবং প্রকৃতির বৈশিষ্ট্যকে উপভোগ করতে ভালোবাসে। তাই পাহাড়ের প্রাকৃতিক পরিবেশকে অক্ষুন্ন রাখতে ভূমিদস্যুদের কবল থেকে পাহাড়ের ভূমি ও ভূমিপুত্রদের রক্ষা করতে হবে।
গণসংহতি আন্দোলনের সমন্বয়ক হাসান মারুফ রুমি বলেন, সরকার ও সেনাবাহিনী সেখানকার কিছু ম্রো জনগোষ্ঠীকে ভয় ও লোভ দেখিয়ে জেলা প্রশাসনের সহযোগিতায় ভূমি রক্ষার আন্দোলনকে ভিন্নখাতে প্রবাহিত করার চেষ্টা চালাচ্ছে, যা সরকারের ভূমি সন্ত্রাসের চিত্র ফুটে উঠে।
সামিউল আলম রিচি বলেন, ডেমোগ্রাফিক ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের নাম করে পাহাড়ের ভূমি বেদখলের ষড়যন্ত্রকে সরকার ভয়ংকর রূপ দিয়েছে।
এডভোকেট শফিউদ্দিন কবির আবিদ বলেন, পার্বত্য চট্টগ্রামের উন্নয়ন করতে হলে পাহাড়ের মানুষকে সাথে নিয়ে, তাদের জীবন জীবিকার স্বার্থকে উর্ধ্বে রেখে তাদের অধিকার আগে নিশ্চিত করতে হবে। শুধু মুনাফার লোভে তাদের অধিকার খর্ব করা হলে তা ভূমি দস্যুতার রুপ নেবে।
সমাবেশের সভাপতি উচিংশৈ চাক সরকারের কাছে ৭ দফা দাবি তুলে ধরেন। দাবিগুলো হলো:
১। অনতিবিলম্বে চিম্বুক পাহাড়ে পাঁচ তারকা হোটেল নির্মাণ বন্ধ করে ম্রোদের ভূমি ফিরিয়ে দিতে হবে।
২। চিম্বুক পাহাড়ে বাংলাদেশ সেনাবাহিনী ও জেলা পরিষদের মধ্যে অবৈধ লিজ চুক্তি বাতিল করতে হবে।
৩। এ যাবৎ তিন পার্বত্য জেলায় জেলা পরিষদ কর্তৃক বেআইনীভাবে অবৈধ লিজ চুক্তি জনসমক্ষে প্রকাশ করতে হবে।
৪। বান্দরবানসহ তিন পার্বত্য জেলায় পাহাড়ি জনবসতি উচ্ছেদ ও জমি জবরদখল করে পর্যটন বা উন্নয়ন প্রকল্প সম্পূর্ণ বন্ধ রাখতে হবে।
৫। পার্বত্য চট্টগ্রামে বেআইনি বহিরাগত পুনর্বাসন বন্ধ করতে হবে।
৬। স্বৈরাচারী এরশাদ ও জিয়াউর রহমানের আমলে বেআইনীভাবে নিয়ে আসা সেটলারদের সমতল জেলায় সম্মানজনকভাবে পুনর্বাসন করতে হবে।
৭। পাহাড়িদের প্রথাগত ভূমি আইনের স্বীকৃতি দিতে হবে।