লংগদুতে পাহাড়িদের ওপর সাম্প্রদায়িক হামলার ৩ বছর আজ

সেটলার কর্তৃক পুড়ে দেওয়া বাড়ি। ফাইল ছবি

রাঙামাটির লংগদু উপজেলায় ২০১৭ সালের ২ জুন পাহাড়িদের কয়েকটি গ্রামে সাম্প্রদায়িক হামলা চালায় বাঙালি সেটলাররা। এতে পাহাড়িদের দুই শতাধিক ঘরবাড়ি-দোকানপাট পুড়ে ছাই হয়ে যায়। প্রভুত ক্ষতির শিকার হয় পাহাড়িরা। এ হামলার আজ ৩ বছর পূর্ণ হলো।  
সেটলারা সংঘবদ্ধভাবে হামলা চালিয়ে সেদিন লংগদু উপজেলা সদরের তিনটিলা, বাত্যা পাড়া, উত্তর-দক্ষিণ মানিকজোড় ছড়া ও বড়াদাম এলাকায় পাহাড়িদের ঘরবাড়িতে অগ্নিসংযোগ করে দুই শতাধিক ঘরবাড়ি-দোকানপাট পুড়ে ছাই করে দেয়। তাদের এই হামলার কবলে পড়ে ৭০ বছরের বৃদ্ধা গুণবালা চাকমা আগুনে পুড়ে মারা যায়।
এর একদিন আগে খাগড়াছড়ি-দীঘিনালা সড়কের চার মাইল নামক স্থানে নুরুল ইসলাম নয়ন নামে এক ব্যক্তির লাশ পাওয়া যায়। তিনি যুবলীগের লংগদু সদর ইউনিয়ন শাখার সাংগঠনিক সম্পাদক ও ভাড়ায় মোটর সাইকেল চালাতেন। এই লাশ পাওয়াকে কেন্দ্র করেই সেদিন সেটলাররা পাহাড়িদের ওপর উক্ত হামলা চালিয়েছিল।
এই হামলার আঁচ করতে পেরে পাহাড়ি নেতৃবৃন্দ স্থানীয় প্রশাসনকে অবহিত করেছিলেন এবং নিরাপত্তা জোরদার করার অনুরোধ জানিয়েছিলেন। কিন্তু প্রশাসন এর কোন গুরুত্ব দেয়নি।

হামলার আগে সেটলারদের সমাবেশে বক্তব্য  রাখছেন জোন কমাণ্ডার। ফাইল ছবি

সেদিন হামলার পূর্বে নয়নের লাশ নিয়ে স্থানীয় আওয়ামীলীগ, যুবলীগের নেতারা সেটলারদের সংঘবদ্ধ করে একটি সমাবেশের আয়োজন করে। এই সমাবেশে স্থানীয় সামরিক-বেসামরিক কর্মকর্তারাও উপস্থিত ছিলেন। খোদ লংগদু জোন কমাণ্ডার ওই সমাবেশে বক্তব্য রাখেন। আর এই সমাবেশ শেষেই মিছিল নিয়ে হামলা চালানো হয়। কিন্তু প্রশাসন হামলাকারী সেটলারদের নিবৃত্ত না করে উল্টো পাহাড়িদের ধাওয়া করে। এতেই সুস্পষ্ট যে, ওই দিনের হামলায় স্থানীয়  আওয়ামীলীগসহ সামরিক-বেসামিরক প্রশাসনের যোগসাজশ ছিল।
এ হামলার পর পার্বত্য চট্টগ্রামসহ দেশে-বিদেশে ব্যাপক বিক্ষোভ ও প্রতিবাদের ঝড় দেখা দিলে সরকার স্থানীয় জেলা প্রশাসনের মাধ্যমে হামলার বিচার ও পুড়ে যাওয়া ঘরবাড়ি পুনঃনির্মাণ করে দেয়ার প্রতিশ্রতি দেয়।

কিন্তু হামলার তিন বছর পূর্ণ হলেও এর বিচার যেমন হয়নি একইভাবে প্রতিশ্রুতি মোতাাবেক ক্ষতিগ্রস্তদের যথাযথ ক্ষতিপূরণ ও ঘরবাড়ি পুনঃনির্মাণ করে দেয়ার কাজটিও সঠিকভাবে হয়নি।

লংগদুর এই হামলা ছিল আগের হামলাগুলোর ধারাবাহিক রূপ। ১৯৮৯ সালে ৪ মে লংগদুতে পাহাড়িদের ওপর বর্বর হামলা চালানো হয়েছিল। যা ‘লংগদু গণহত্যা’ নামে ইতিহাসের কালো অধ্যায় হয়ে রয়েছে। ২০১১ সালেও একবার হামলা চালানো হয়েছিল। এতেও পাহাড়িদের বেশ কিছু ঘর পুড়ে দেওয়া হয়েছিল। এসব ঘটনার কোনটিরই বিচার আজো হয়নি।
এভাবে বিচারহীনতার কারণেই যুগ যুগ ধরে পার্বত্য চট্টগ্রামে পাহাড়িদের ওপর হামলা, জুলুম-নির্যাতনের ঘটনা ঘটেই চলেছে। সরকার তথা রাষ্ট্র পাহাড়িদের ওপর চলা এসব অন্যায়-অবিচারের দায় কী এড়াতে পারে?

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *