ভূমিপুত্ররা ভূমিহীন সাজেকে

সাজেক মানে দুরদুরান্ত থেকে দলে দলে ছুটে এসে সেখানে ভ্রমণতৃষ্ণা মেটানো । আর অন্যকে নিয়ে আসার জন্য একরকম লোভনীয় বিজ্ঞাপন। বিজ্ঞানে প্রচারিত হয় সাজেকের চূড়ায় বিখ্যাত হেলিপ্যাড, পাশে জনপ্রিয় ইকো কটেজ, লুসাই গ্রাম আর মেঘ মালা রিসোর্ট।
থাকা-খাওয়ার সুব্যবস্থা, আদিবাসী মানুষদের সাথে পর্বতমালা, পাহাড়ি নদী, ঝর্ণা ঘুরে দেখার সুযোগ।
সাথে আরও থাকছে মুখরোচক সব দেশীয় আর আদিবাসী খাবারের সুব্যবস্থা, রয়েছে ভ্যালির চূড়ায় বারবিকিউ পার্টির সুযোগ। রয়েছে সার্বক্ষণিক নিরাপত্তার ব্যবস্থাও।

এমন লোভনীয় বিজ্ঞাপনে কার না আগ্রহ জাগে সাজেকে ঘুরে আসার।
আসলে কারো পৌষ মাস তো কারো সর্বনাশ। সভ্যতার বিকাশ মানেই দুর্বলের উপর সবল মানুষদের ক্ষমতার অপব্যবহার। জন্মভূমি থেকে বিতাড়িত করে ভূমি দখল অতপর স্বপ্নের পুরী তৈরী পৃথিবীর সমস্ত ‘সভ্যতা’ সেভাবেই তৈরী হয়েছে।
বিশ্বের সবচেয়ে নৃশংস আগ্রাসন হলো মানুষকে তার জন্মভূমি থেকে উচ্ছেদ করা। একটা সময়ে গিয়ে এইসব সভ্যতার অগ্রযাত্রা থেমে যায়। ইয়োরোপীয়দের কলোনী বিস্তারও এক সময় থেমেছে। আসলে কিছু উন্নয়নকামী মানুষ উন্নয়ন বাসনায় নতুন করে মাথাচাড়া দেয় । তারা পাহাড় থেকে পাহাড়ের ভূমিসন্তানদের উচ্ছেদ করে প্রমোদ অঞ্চল বানায় । যেমনটি আজ সাজেক সৃষ্টি হলো ।
বলা যায় ওখানে আর আদিবাসী ভূমিপুত্রদের রক্তের দাগ নেই,নেই আর গামে ঝরা সবুজ শ্যামলী ফসলও । শহরের মত চার দেয়ালের রং হয়ে মাটির সাথে মিশে গেছে সেখানকার আদিবাসী মানুষদের জীবনযাত্রা । এখন আর লুসাই, ত্রিপুরা,মুরং,মিজু,পাংখু, চাকমা, বম শিশুগুলো আপনমনে দৌড়ে বেড়ায় না সেখানে । সমতলের মানুষ দেখলে ভয়ে লুকিয়ে থাকে। ভয়ার্ত চোখে বারবার তাকায়। তাদের মুখের দিকে তাকালে মনে হয় প্রকৃতিও যেন ভয়ে শান্ত হয়ে গেছে সেখানে ।
পাশে সমতলের ক্ষমতাবানরা বকা দেয়। তাদের জীবনযাপন নিয়ে উপহাস করে। আসলে তাদের ভাঙা হৃদয়ের আর্তনাদ কেউ বুঝে না বুঝতেও চাইনা। যদি কেউ অনুভব করে তাহলে শুনতে পাবে সাজেকের শত শত মানুষের হাহাকার করা আর্তনাদ। এটাই ভূমিপুত্রদের রক্তে ভেজা উপাখ্যান।
সূত্র: লাল সবুজ ৭১

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *