খাগড়াছড়ির স্বনির্ভর বাজারে হত্যাকাণ্ডের ২ বছর : খুনিরা এখনও ধরাছোঁয়ার বাইরে!

স্বনির্ভর বাজারে হত্যাকাণ্ডে নিহতদের লাশ। ফাইল ছবি

আজ ১৮ আগস্ট খাগড়াছড়ি জেলা সদরের স্বনির্ভর বাজারে প্রকাশ্যে দিবালোকে সংঘটিত হত্যাকাণ্ডের আজ ২ বছর পূর্ণ হলেও খুনিরা এখনও রয়েছে ধরাছোঁয়ার বাইরে।

২০১৮ সালের এই দিন সকালে সেনা মদদপুষ্ট সশস্ত্র সন্ত্রাসীরা এই নির্মম হত্যাকাণ্ড সংঘটিত করে। এতে ঘটনাস্থলে ইউপিডিএফের সহযোগী সংগঠন পিসিপি ও যুব ফোরামের তিন নেতাসহ ৬ জন নিহত হন।

ঘটনাস্থল স্বনির্ভর বাজার প্রশাসনের নিয়মিত নজরদারির একটি এলাকা। বাজারের একেবারেই ঘেষা একটি পুলিশ পোষ্ট। আর কয়েক গজ দূরত্বে রয়েছে বিজিবি সেক্টর হেডকোয়ার্টারের তল্লাশি চৌকি। এছাড়া প্রতিনিয়ত নানা গোয়েন্দা সংস্থার নজরদারিতো রয়েছেই। 

প্রশাসনের এমন নিরাপত্তা বেষ্টনি ও নজরদারির মধ্যেই সেদিন প্রকাশ্য দিবালোকে ইউপিডিএফের সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীদের ওপর সশস্ত্র হামলা চালায় ভারী অস্ত্রে সজ্জিত একদল সশস্ত্র সন্ত্রাসী। যাদেরকে জেএসএস এমএন লারমা (সংস্কার নামে পরিচিত) এর কর্মী বলেই প্রত্যক্ষদর্শী এলাকার লোকজন চিহ্নিত করেন। সন্ত্রাসীরা শহরের মহাজন পাড়া থেকে চেঙ্গী স্কোয়ার হয়ে টমটম গাড়িতে করে এসে এ হামলা চালায়। কিন্তু ঘটনার সময় পুলিশ ছিল নিরব দর্শকের ভূমিকায়।

এ হামলায় ঘটনাস্থলে ৬ জন নিহত হয়। নিহতরা হলেন- পিসিপি নেতা তপন চাকমা, এল্টন চাকমা ও যুব ফোরাম নেতা পলাশ চাকমা এবং তিন পথচারী উত্তর খবংপুজ্জে গ্রামের বাসিন্দা মহালছড়ি উপজেলা স্বাস্থ্য সহকারী জিতায়ন চাকমা ও ছাত্র রুপম চাকমা এবং পানছড়ি এলাকার বাসিন্দা প্রকৌশলী ধীরাজ চাকমা। এতে আরো বেশ কয়েকজন আহত হন।

সন্ত্রাসীরা প্রায় আধ ঘন্টার অধিক সশস্ত্র তান্ডব চালালেও ঘটনাস্থলের কাছে থাকা পুলিশ ও বিজিবি সদস্যরা কোন পদক্ষেপ নেয়নি। উপরন্তু সন্ত্রাসীদের পালিয়ে যেতে সহযোগিতা দেয়।

এ ঘটনার ঘন্টা দুয়েক যেতে না যেতেই সন্ত্রাসীরা আবারো পেরাছড়া এলাকায় বিক্ষোভরত জনসাধারণের ওপর হামলা চালায়। এতে ৭০ বছরের বৃদ্ধ সন কুমার চাকমা আহত হয়ে হাসপাতালে মারা যান এবং নারীসহ বেশ কয়েকজন আহত হন। এ নিয়ে নিহতের সংখ্যা দাঁড়ায় ৭ জনে।

এ ঘটনার আজ ২ বছর পূর্ণ হলেও রহস্যজনক কারণে খুনিরা রয়েছে এখনও ধরাছোঁয়ার বাইরে। যদিও খুনি সন্ত্রাসীরা প্রকাশ্যে ঘুরে বেড়ায় প্রশাসনের নাকের ডগায়।

এ ঘটনায় পুলিশ মামলা নিতে না চাইলেও খুনিদের বাঁচাতে তারাই নিজেরা বাদী হয়ে অজ্ঞাত কয়েকজনকে আসামি দেখিয়ে তড়িঘড়ি করে থানায় একটি মামলা দায়ের করে। ‍মুলত হামলার মূল হোতাদের আড়াল করাই ছিল পুলিশের এই মামলারর উদ্দেশ্য।

পরে পরিবার ও সংগঠনের পক্ষে আদালতে মামলা দায়ের করা হলেও সন্ত্রাসীদের গ্রেফতারে পুলিশের কোন তৎপরতা আজ পর্যন্ত লক্ষ্য করা যায়নি। ফলত সন্ত্রাসীরা এখন বীরদর্পে অপরাধ কর্ম চালিয়ে যাচ্ছে।

এদিকে উক্ত ঘটনা তদন্তে অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রট আবু ইউসুফ আলীকে প্রধান করে ৫ সদস্য বিশিষ্ট একটি তদন্ত কমিটি করা হয়। যদিও তিন সংগঠন (পিসিপি, যুব ফোরাম, হিল উইমেন্স ফেডারেশন) এই তদন্ত কমিটিকে প্রত্যাখ্যান করে বিচার বিভাগীয় তদন্তের দাবি জানিয়েছিল। প্রশাসনের গঠিত এই তদন্ত কমিটি আজ পর্যন্ত কোন প্রতিবেদন দিয়েছে বলে জানা যায়নি।

অপরদিকে জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের একটি তদন্ত দলও ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে। কিন্তু তারাও আজ পর্যন্ত কোন প্রতিবেদন দিতে পারেনি।

ঘটনাটির অধিকতর তদন্তের জন্য চট্টগ্রাম পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন(পিবিআই)-কে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে বলে বিভিন্ন মিডিয়ার মাধ্যমে জানা গেলেও পুলিশের এই সংস্থাটিকেও সন্ত্রাসীদের গ্রেফতারে কোনরূপ কার্যকর উদ্যোগ গ্রহণ করতে দেখা যায়নি।

ফলে এখন জনমনে প্রশ্ন দেখা দিয়েছে যে, এই খুনিরা কি এভাবেই পার পেয়ে যাবে? তাদের কি কোন বিচার হবে না? প্রশাসন কেন খুনিদের গ্রেফতারে কোন পদক্ষেপ নিচ্ছে না? তাহলে কী এই হত্যাকাণ্ডের সাথে প্রশাসন সংশ্লিষ্টা ছিল?

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *