রাঙামাটির কাউখালী উপজেলার ২ নং ফটিকছড়ি ইউনিয়নের ৭ নং ওয়ার্ডের নভাঙ্গা ও দোবা কাবা এ দু্’গ্রামের সীমান্তবর্তী স্থানে গতকাল রবিবার (২২ নভেম্বর ২০২০) বিকেল থেকে নতুন সেনা ক্যাম্প স্থাপন করা হচ্ছে।
সেনাবাহিনীর একদল সদস্য ১৫/১৬ জন সেটলার নিয়ে স্থানীয় লোকজনের সৃজিত বাগান কর্তনের মধ্য দিয়ে এ কাজ শুরু করেছে। স্থানীয় জনপ্রতিনিধি, হেডম্যান, কার্বারী, মুরুব্বী তথা জনগণের সাথে কোন আলাপ-আলোচনা এবং অনুমতি ছাড়াই ক্যাম্প স্থাপনের কাজ জোরপূর্বকভাবে চালিয়ে নেওয়া হচ্ছে বলে খবর পাওয়া গেছে।
দোবা কাবা গ্রামের নিতেন চাকমা জানান, তার বাবার সৃজিত সেগুন বাগানটি গতকাল থেকে কর্তন করা হচ্ছে। উপার্জনের একমাত্র অবলম্বন বাগানটি হাতছাড়া হলে তার জীবন জীবিকার পথ চিরতরে রুদ্ধ হয়ে যাবে বলে তিনি উল্লেখ করেন। একইভাবে নভাঙ্গা গ্রামের সুনির্মল চাকমার বাঁশ ও সেগুন বাগানটিও আজ(২৩ নভেম্বর) সকাল থেকে কর্তন করা হচ্ছে বলে এলাকাবাসী সূত্রে জানা গেছে।
স্থানীয় বয়োজ্যেষ্ঠ্ মুরুব্বী দয়াধন কার্বারী জানান, আমরা তো নিরাপদে ও নির্বিঘ্নে শান্তিতে বসবাস করে আসছি। অত্র এলাকায় কোন মারামারি, হানিহানি ও রক্তপাত নেই। তারপরেও কেন ক্যাম্প স্থাপন করা হচ্ছে তা আমাদের বোধগম্য হচ্ছে না।
তার আশঙ্কা সেনা ক্যাম্প স্থাপন হলে তারা গ্রাম থেকে উচ্ছেদের শিকার হবেন। নারীরা নিরাপত্তাহীনতায় থাকবে। তারা আর সেখানে ও ক্যাম্পের আশেপাশের জায়গায় যেতে পারবেন না, লাকড়ি ও বন্য শাকসবজি ও ফলমূল সংগ্রহ করতে পারবেন না, সেখানে গরু ছাগল চড়াতে পারবেন না। বাগানে কাজ করতে পারবেন না।
তিনি স্থানীয় এলাকার সকলকে নিয়ে ক্যাম্প স্থাপন বন্ধের উদ্যোগ নিবেন বলে জানান।
প্রত্যক্ষদর্শী অনেকে জানিয়েছেন, সেনারা গতকাল এসেই ক্যাম্প স্থাপনের উদ্যোগ নেয়। তাদের একজন বলেন, আর্মিরা আসে, জমি বেদখল করে এবং ক্যাম্প নির্মাণের জন্য গাছ বাঁশ কাটতে শুরু করে, যেন জমিটি তাদের বাপদাদার সম্পত্তি।
ক্যাম্প স্থাপনের কারণে ১০-১২ বছর আগে লাগানো সেগুন বাগান সম্পূর্ণ ধ্বংস হয়ে যাবে বলে তারা জানান।
আর্মিরা সম্পূর্ণ গায়ের জোরে, শক্তির জোরে এভাবে অন্যের জমি বেআইনীভাবে কেড়ে নিচ্ছে বলে এলাকাবাসী মন্তব্য করেছেন।
একজন স্থানীয় প্রাইমারী স্কুলের শিক্ষক বলেন, ‘সেনাবাহিনী নিজেদেরকে আইন প্রয়োগকারী সংস্থার লোক বলে দাবি করে। কিন্তু তারাই যদি বেআইনী কাজ করে তাহলে তো আমাদের বাঁচার কোন উপায় থাকবে না। তারা যা করছে (অন্যের জমি কেড়ে নিয়ে ক্যাম্প স্থাপন) তা কেবল আইন বিরুদ্ধ তাই নয়, তা একইসাথে অন্যায় এবং অমানবিকও। আমরা বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর কাছ থেকে এ ধরনের ভূমিদস্যুসুলভ আচরণ আশা করি না।’
তিনি জনগণের পক্ষে অবিলম্বে উক্ত ক্যাম্প স্থাপনের কাযক্রম বন্ধের দাবি জানান।