নিজস্ব প্রতিবেদক।। “পার্বত্য চট্টগ্রামসহ সারাদেশে রাষ্ট্রীয় হেফাজতে বিচার বহির্ভূত হত্যার নিরপেক্ষ তদন্ত ও সুবিচার নিশ্চিত কর” এই শ্লোগানে খাগড়াছড়ির দিঘীনালায় সেনাবাহিনী কর্তৃক ইউপিডিএফ সংগঠক নবায়ন চাকমা (সৌরভ)-কে হত্যার বিচারের দাবিতে এবং মহালছড়িতে সেটলার কর্তৃক পাহাড়িদের ঘরে অগ্নিসংযোগের প্রতিবাদে চট্টগ্রাম মহানগরীতে বিক্ষোভ সমাবেশ করেছে গণতান্ত্রিক যুব ফোরাম, পাহাড়ি ছাত্র পরিষদ, হিল উইমেন্স ফেডারেশন ও ইউনাইটেড ওয়ার্কার্স ডেমোক্রেটিক ফ্রন্ট।
আজ বৃহষ্পতিবার (১৭ মার্চ ২০২২) বিকাল সাড়ে ৩টায় নগরীর ডিসি হিল থেকে একটি বিক্ষোভ মিছিল বের করা হয়। মিছিলটি নন্দন কানন হয়ে প্রেসক্লাব ঘুরে চেরাগী পাহাড় মোড়ে এসে এক সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়।
গণতান্ত্রিক যুব ফোরামের নেতা শুভ চাক-এর সভাপতিত্বে পাহাড়ি ছাত্র পরিষদের চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় শাখার ছাত্রনেতা সুদেব চাকমার সঞ্চালনায় সমাবেশে বক্তব্য রাখেন বাংলাদেশ মুক্তি সংগ্রাম ও মুক্তিযুদ্ধ গবেষণা কেন্দ্রের চেয়ারম্যান মুক্তিযোদ্ধা ডা: মাহফুজুর রহমান, জাতীয় মুক্তি কাউন্সিল (পূর্ব-৩) চট্টগ্রাম অঞ্চলের সভাপতি এডভোকেট ভূলন লাল ভৌমিক, পাহাড়ি ছাত্র পরিষদের মহানগর শাখার সাধারণ সম্পাদক অমিত চাকমা, হিল উইমেন্স ফেডারেশনের জেসি চাকমা ও ইউনাইটেড ওয়ার্কার্স ডেমোক্রেটিক ফন্টের সংগঠক বিজয় চাকমা।
বাংলাদেশ মুক্তি সংগ্রাম ও মুক্তিযুদ্ধ গবেষণা কেন্দ্রের চেয়ারম্যান মুক্তিযোদ্ধা ডা: মাহফুজুর রহমান বলেন, স্বাধীন বাংলাদেশের লক্ষ্য ছিল বাংলাদেশের সকল জাতিসত্তার বিকাশ ঘটানো এবং সংস্কৃতির বিকাশ ঘটানো। এ লক্ষ্যে বাংলাদেশ সৃষ্টি হয়েছিল। ১৯৭১ সালে বাঙালি ছাড়াও বিভিন্ন জাতিসত্তার জনগণ মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ করেছিল। আমরা এটা (বিচার বহির্ভূত হত্যা) কখনো আশা করতে পারি না। কাউকে বিনা বিচারে হত্যা করা আইনত দন্ডনীয় অপরাধ। এটা মূলত সংবিধান পরিপন্থী। অপরাধ করলে গ্রেপ্তারের নিয়ম আছে। আমি বাংলাদেশ মুক্তি সংগ্রাম ও মুক্তিযুদ্ধ গবেষণা কেন্দ্রের পক্ষ থেকে তীব্র নিন্দা জানিয়ে জড়িতদের আইনের আওতায় আনার দাবি করছি।
জাতীয় মুক্তি কাউন্সিল (পূর্ব-৩) চট্টগ্রাম অঞ্চলের সভাপতি এডভোকেট ভূলন লাল ভৌমিক ইউপিডিএফ নেতা নবায়ন চাকমা (সৌরভ)-কে সেনা কর্তৃক শারিরীক নির্যাতন করে বিনা বিচারে হত্যার নিন্দা জানিয়ে বলেন, এদেশ স্বাধীন হয়েছিল শুধুমাত্র বাঙালি জাতিসত্তা অংশগ্রহণে নয়, এদেশ স্বাধীন হয়েছিল বাঙালি জাতিসহ বাংলাদেশের বসবাসরত সকল জাতিসত্তার অংশগ্রহণের মধ্য দিয়ে।
তিনি আরো বলেন, পাহাড়ে কোন মিঠুন চাকমা, নবায়ন চাকমাকে খুন করে কিংবা মাইকেল চাকমাকে গুম করে পাহাড়িদের ন্যায়্য আন্দোলনকে দমিয়ে রাখা যাবে না।
তিনি সরকারের প্রতি প্রশ্ন রেখে আরও বলেন, ১৯৭১ সালে ২৫ মার্চ পাকিস্তানীরা পূর্ব বাংলার জনগণের ওপর গণহত্যা চালিয়ে ন্যায্য আন্দোলন দমন করতে পেরেছিল? সুতরাং আপনারাও এসব দমন-পীড়ন, হত্যা, অগ্নিসংযোগ বন্ধ করে পাহাড়ের রাজনৈতিক সমস্যা সমাধান করুন।
বক্তারা অবিলম্বে ইউপিডিএফ নেতা নবায়ন চাকমাসহ পার্বত্য চট্টগ্রামে সংঘটিত হওয়া সকল বিচার বহির্র্ভূত হত্যাকান্ডের তদন্ত করে জড়িতদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি এবং মহালছড়িতে পাহাড়িদের ঘরবাড়িতে অগ্নিসংযোগের ঘটনায় জড়িত সেটলারদের আইনের আওতায় আনার দাবি জানান।