সেনা হেফাজতে ইউপিডিএফ নেতা নবায়ন চাকমা মিলনের মৃত্যু তদন্তের দাবি সিএইচটি কমিশনের

বিশেষ প্রতিনিধি।। আন্তর্জাতিক পার্বত্য চট্টগ্রাম কমিশন (সিএইচটি কমিশন) খাগড়াছড়ির দীঘিনালায় সেনাবাহিনীর হেফাজতে শারীরিক নির্যাতনে নিহত ইউপিডিএফ নেতা নবায়ন চাকমা মিলনের (সৌরভ, ৪৭) নিহত হওয়ার ঘটনার ‘দ্রুত, নিরপেক্ষ ও কার্যকর বিচার বিভাগীয় তদন্ত, দায়ীদের বিচার এবং নিহতের পরিবারকে ক্ষতিপূরণ প্রদানের’ দাবি জানিয়েছে।

গতকাল ২১ মার্চ ২০২২ সোমবার এক বিবৃতিতে কমিশনের তিন কো-চেয়ারপার্সন সুলতানা কামাল, এলসা স্ট্যামাটোপৌলৌ এবং মিরনা কানিংহাম কেইন এই দাবি জানান।

বিবৃতিতে তারা আরও বলেন, ‘বিভিন্ন সংবাদ মাধ্যমের রিপোর্ট মতে, ইউপিডিএফের প্রচার ও প্রকাশনা বিভাগের প্রধান নিরন চাকমা অভিযোগ করেছেন, গত ১৫ মার্চ ২০২২ গভীর রাত ৩:৩০টার সময় দীঘিনালা জোনের একদল সেনা সদস্য দীঘিনালা উপজেলার ১ নং ওয়ার্ডে বাগানপাড়া এলাকাধীন মনিভদ্র কার্বারী পাড়ায় হানা দেয়। এ সময় তারা গ্রামের একজন বাসিন্দা শান্তি জীবন চাকমার (৪৮) বাড়ি ঘেরাও করে বলে জানা যায় এবং চিকিৎসার জন্য উক্ত বাড়িতে অবস্থানরত ইউপিডিএফ সংগঠক মিলনকে গ্রেফতার করে। গ্রেফতারের পর সেনারা তার উপর শারীরিক নির্যাতন চালায় বলে অভিযোগ রয়েছে। তার অবস্থার অবনতি ঘটলে সেনারা মিলনকে দীঘিনালা উপজেলা হাসপাতালে নিয়ে আসলে সেখানে সকাল ৯টায় কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।’

কমিশন পার্বত্য চট্টগ্রামে আদিবাসী রাজনৈতিক কর্মীদের গুম, নির্যাতন ও হেফাজতী মৃত্যুর ঘটনাগুলোর তদন্ত না হওয়ায় উদ্বেগ প্রকাশ করে। বিবৃতিতে তারা এ ধরনের কয়েকটি ঘটনার উল্লেখ করেন, যেমন:

গত ১৬ এপ্রিল ২০১৯ ইউপিডিএফ কর্মী মাইকেল চাকমাকে (৪০) নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্যরা নারায়নগঞ্জ থেকে গ্রেফতার করে। (তার সন্ধান এখনো পাওয়া যায়নি।)

২৬ আগস্ট ২০১৯ নবীন জ্যোতি চাকমা (৩২), বুজেন্দ্র চাকমা (৫০) ও রুচিল চাকমা (২৬) নামে তিন ইউপিডিএফ কর্মীকে সেনাবাহিনী দীঘিনালার কৃপাপুর এলাকা থেকে তুলে নেয়, সেনারা পরে দাবি করে যে তারা গোলাগুলিতে নিহত হয়েছেন।

৩ এপ্রিল ২০১৯ পিসিজেএসএস সদস্য জ্ঞান শংকর চাকমা (৪৫) বান্দরবান জেলায় র‌্যাবের সাথে ক্রসফায়ারে নিহত হন। তবে পিসিজেএসএস দাবি করে যে, তাকে নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্যরা ইতিপূর্বে ১৪ মার্চ ২০১৯ তারিখ চট্টগ্রাম থেকে গ্রেফতার করেছিল।

৯ এপ্রিল ২০১৭ পাহাড়ি ছাত্র পরিষদ রাঙামাটি ইউনিটের সাধারণ সম্পাদক (ইউপিডিএফের সহযোগী সংগঠন) ও এইচএসসি পরীক্ষার্থী রমেল চাকমা (১৯) নিরাপত্তা বাহিনীর হেফাজতে থাকা অবস্থায় নির্যাতনে মারা যান।

২০১৪ সালের আগস্ট মাসে পিসিজেএসএস (এম. এন. লারমা গ্রুপ) কর্মী তিমির বরণ চাকমা বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর হেফাজতে শারীরিক নির্যাতনে মারা যান।পার্বত্য চট্টগ্রাম কমিশনের নেতৃবৃন্দ হেফাজতী মৃত্যুর ব্যাপারে অব্যাহত বিচারহীনতা এবং পার্বত্য চট্টগ্রামে সামরিকায়নের বিষয়ে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেন এবং এসব ঘটনার দ্রুত, নিরপেক্ষ ও স্বাধীন বিচার বিভাগীয় তদন্ত শুরু করা, জড়িতদের বিচারের আওতায় নিয়ে আসা এবং ভুক্তভোগীদের প্রতিকার প্রাপ্তি নিশ্চিত করার দাবি জানিয়েছেন।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *