সিএনসিআই ও টিসিএসএ ত্রিপুরার ১১টি স্থানে কালো দিবস পালন করেছে

চাকমা ন্যাশনাল কাউন্সিল অব ইন্ডিয়া (সিএনসিআই) ও ত্রিপুরা চাকমা স্টুডেন্টস এসোসিয়েশন (টিসিএসএ), যারা ২০১৬ সাল থেকে ‘১৭ আগস্ট’কে ‘কালো দিবস’ হিসেবে পালন করে আসছে, তারা এই বছর আগরতলা, কাঞ্চনপুর, পেচারতল, কুমারঘাট, মনু, শৈলেংতা, চৌমনু, গন্ডাছড়া, নতুন বাজার, শিলাছড়ি ও বীরচন্দ্রমনুসহ ত্রিপুরার ১১টি স্থানে প্রতিবাদ কর্মসূচি অনুষ্ঠিত করেছে।
ত্রিপুরা চ্যাপ্টারের সিএনসিআই’র সাধারণ সম্পাদক উদয় জ্যোতি চাকমা বলেন, ১৯৪৭ সালের অন্তর্ভুক্তির সময় পাকিস্তানের নিকট পার্বত্য চট্টগ্রামকে হস্তান্তরের ঐতিহাসিক অবিচারের বিরুদ্ধে প্রতিবাদে কালো দিবস পালন করা হয়।

নৃতাত্ত্বিক কমিটি’র (ethnic body) সহ-সভাপতি অনিরুদ্ধ চাকমা বলেন, ‘আমরা পার্বত্য চট্টগ্রামে চাকমাদের বিরুদ্ধে অবিচার, জাতিগত নির্মূলীকরণ ও অস্থিতিশীলতার কারণে সৃষ্ট নির্যাতন ও যন্ত্রণার বিরুদ্ধে পূর্বের বছরগুলোর ন্যায় এই কালো দিবস পালন করছি। আমরা পার্বত্য চট্টগ্রামকে ভারতের অবিচ্ছেদ্য অংশ বলে মনেকরি এবং আমরা ইন্টারন্যাশনাল কোর্ট অব জাস্টিস কাছে ন্যায়বিচার ও সহানুভুতি চাই।’

পার্বত্য চট্টগ্রাম ঐতিহ্যগতভাবে চাকমা, মারমা, ত্রিপুরা, চাক, মুরুং, খুমি, লুসাই, বম, খিয়াং, পাংখো ও তঞ্চঙ্গ্যাসহ ১১টি সংখ্যালঘু জাতিগোষ্ঠীর আবাসস্থল। ইহার আয়তন আনুমানিক ৫,১৩৮ বর্গ কিলোমিটার এবং ইহা উত্তরে ত্রিপুরা, দক্ষিণে মায়ানমারের আরাকার পাহাড়, পূর্বে মিজোরোমের লুসাই পাহাড় ও মায়ানমারের আরাকান পাহাড়, পশ্চিমে চট্টগ্রাম জেলা ধারা পরিবেষ্টিত। স্বাধীনতার সময় পার্বত্য চট্টগ্রামে বসবাসকারী ৯৮.৫% মানুষই ছিল বৌদ্ধ ও হিন্দু সম্প্রদায়ের, কিন্তু তবুও স্যার সিরিল র‌্যাডক্লিফ এর নেতৃত্বাধীন বাউন্ডারি কমিশন কর্তৃক পাক ভূখন্ড ঘোষণা করা হয়।

১৫ আগস্ট ১৯৪৭ চাকমা নেতা- স্নেহ কুমার চাকমা পার্বত্য চট্টগ্রামের জেলা সদরদপ্তর রাঙ্গামাটিতে ভারতীয় তেরঙা পতাকা উত্তোলন করেন। দুই দিন পর, রেডিওতে সরকারীভাবে ঘোষণা করা হয় যে, পার্বত্য চট্টগ্রাম পাকিস্তানে থাকবে এবং ২১ আগস্ট পাকিস্তানী বাহিনী কর্তৃক তেরঙা পতাকা নামানো হয়। তখন থেকে ১৯৭১ সালে পাকিস্তানী শাসন শেষ হওয়া এবং বাংলাদেশ জন্মলাভ করা পর্যন্ত চাকমা নেতাদের ভারতের সমর্থক হিসেবে চিহ্নিত করা হয়।

জাতিগত নিপীড়নের অভিযোগ তুলে, পূর্ব পাকিস্তানে অন্তর্ভুক্তির সময় থেকে কয়েকটি পর্যায়ে পার্বত্য চট্টগ্রাম থেকে চাকমারা ভারতীয় ভূখন্ডে আশ্রয় খোঁজে। ১৯৬০ দশকে কাপ্তাই বাঁধের ফলে উচ্ছেদের পর ৪০ হাজারের অধিক চাকমা ভারতে আশ্রয় গ্রহণ করে। তাদের সবাইকে পরে অরুণাচল প্রদেশে স্থানান্তর করা হয়। বাংলাদেশ সেনাবাহিনী ও মুসলিম সেটেলারদের কর্তৃক জুম্মদের উপর সাম্প্রদায়িক হামলাকে কেন্দ্র করে ১৯৮৬ সালে তাদের মধ্যে ৫০ হাজারের অধিক ত্রিপুরা ও মিজোরামের বিভিন্ন শরণার্থী ক্যাম্পে আশ্রয় দেয়া হয়। খাগড়াছড়িতে তাইন্দং সাম্প্রদায়িক ও অগ্নিসংযোগ হামলাকে কেন্দ্র করে ২০১৩ সালে জুম্ম শরণার্থীদের সর্বশেষ দলটি ত্রিপুরায় আশ্রয় চায়। পরে তাদেরকে ফেরৎ পাঠানো হয়।

বিক্ষুব্ধ চাকমাদের একটি দল এই দিন বিকালে টিবি এসোসিয়েশন হল- এ এক সমাবেশের আয়োজন করেন এবং কথিত ‘ঐতিহাসিক অবিচার’এর প্রতিবাদ জানিয়ে একটি মিছিল বের করেন। তারা বাংলাদেশের পার্বত্য চট্টগ্রামকে ভারতে পুনঃঅন্তর্ভুক্তির দাবিও জানান এবং সেখানে বসবাসকারী চাকমা ও অন্যান্য নৃতাত্ত্বিক ট্রাইবসমূহ এখনও ভারতকে তাদের ‘কল্পিত স্বদেশ’ মনে করেন।
চাকমা ন্যাশনাল কাউন্সিল অব ইন্ডিয়া (সিএনসিআই) ও ত্রিপুরা চাকমা স্টুডেন্টস এসোসিয়েশন (টিসিএসএ) তিন বছর যাবৎ ১৭ আগস্ট-এ ‘কালো দিবস’ পালন করে আসছে। স্বাধীনতার সাত দশক পর, ত্রিপুরায় বসবাসকারী চাকমা নৃতাত্ত্বিক সম্প্রদায়ের লোকজন পার্বত্য চট্টগ্রামকে ভারতের ‘অবিচ্ছেদ্য অংশ’ বলে দাবি করেছে এবং জাতিগত নিপীড়নের কারণ উল্লেখ করে আন্তর্জাতিক আদালত ‘ইন্টারন্যাশনাল কোর্ট অব জাস্টিস’ এর কাছ থেকে ন্যায় বিচারের দাবি জানান।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *