মিজোরামের কমলানগরে কালো দিবস পালিত

সমাজের বিভিন্ন অংশের লোকজনের অংশগ্রহণে ভারত মিজোরাম রাজ্য কমিটির চাকমা ন্যাশনাল কাউন্সিল এর আয়োজনে চাকমা অটোনোমাস ডিস্ট্রিক কাউন্সিলের (সিএডিসি) হেডকোয়ার্টার কমলানগরে এদিন ১৭ আগস্ট চাকমা কালো দিবস পালিত হয়। কমলানগরের সিএডিসি রেস্ট হাউস কমপ্লেক্স-এ অনুষ্ঠিত কর্মসূচিতে যোগদান করেন রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ, এনজিও কর্মী, ছাত্র-ছাত্রী, বুদ্ধিজীবী ও সিএডিসি’র কর্মচারীবৃন্দ। মিজোরামের চাকমারা চতুর্থবারের মত এই দিনটি পালন করছে।

সিএনসিআই’র সঙ্গীত ‘আমি চাকমা জাত, জাদর রাগেই মান..’ সমবেত কন্ঠে গেয়ে অনুষ্ঠান শুরু করা হয়।
দিবসটির তাৎপর্য নিয়ে বক্তব্য রাখেন মিজোরামের সিএনসিআই’র সভাপতি মি: রসিক মোহন চাকমা, সহ-সভাপতি মি: অমর স্মৃতি চাকমা, সিএনসিআই’র জাতীয় কমিটির সম্পাদক মি: দুর্যোধন চাকমা, MCSU(C) এর সভাপতি মি: জগদীশ চাকমা। দিনটির যৌক্তিকতার সাথে সংহতি জানিয়ে উপস্থিত সকলেই কালো ব্যাজ ধারণ করেন।

সমাবেশ বেঙ্গল বাউন্ডারি কমিশনের রেডক্লিফ সিদ্ধান্তকে নিন্দা জানায়, যা কমিশন ও ভারত স্বাধীনতা আইন ১৯৪৭ এর শর্তের বিরুদ্ধে ১৯৪৭ সালে ভারত উপমহাদেশ বিভাগের সময় অমুসলিম সংখ্যাগরিষ্ট পার্বত্য চট্টগ্রামকে পাকিস্তানের নিকট প্রদান করে। এছাড়া তারা ভারতের পক্ষে আইনসঙ্গত ও জোরালো যুক্তি থাকা সত্ত্বেও ভারতের শাসন এলাকায় পার্বত্য চট্টগ্রামের অন্তর্ভুক্তিকরণে প্রতিবাদহীন প্রচেষ্টার জন্য তৎকালীন ভারতীয় নেতৃত্বকে দোষারোপ করেন। বক্তারা ১৯০০ সালের পার্বত্য চট্টগ্রাম বিধিমালা ১ এর আওতায় একটি শাসনবহির্ভূত এলাকা হিসেবে পার্বত্য চট্টগ্রাম কিভাবে বেঙ্গল বাউন্ডারি কমিশনের আওতার বাইরে ছিল এবং সে কারণে ইহা বেঙ্গল এর অংশ হিসেবে বিবেচিত হতে পারত না তা উল্লেখ করেন। এই বাস্তবতার কারণে বেঙ্গল আইনসভায় পার্বত্য চট্টগ্রামের কোন প্রতিনিধি ছিল না। তারা দৃঢ়ভাবে উল্লেখ করে যে, বেঙ্গল বাউন্ডারি কমিশন কর্তৃক পার্বত্য চট্টগ্রামকে পাকিস্তানের নিকট প্রদান করা ছিল অবৈধ এবং আন্তর্জাতিক আদালতে আইনগতভাবে মোকাবেলাযোগ্য।

তৎকালীন ভারতীয় নেতৃত্বের ভারতের শাসনাধীনে চাকমাদের অন্তর্ভুক্ত করার ব্যর্থতা বাংলাদেশ ও ভারতে চাকমা ইস্যুটি সমাধানের জন্য বর্তমান ভারতের মূল নেতৃত্ব থেকে সক্রিয় পদক্ষেপ গ্রহণের দাবি জানানোর অধিকার চাকমাদের যোগান দেয়। এক বক্তা যোগ করে বলেন, ‘ভারতীয় নেতৃবৃন্দ ভারতের সাথে পার্বত্য চট্টগ্রামকে অন্তর্ভুক্ত করতে তাদের ব্যর্থতার জন্য তাদের কারণে সৃষ্ট চাকমাদের যন্ত্রণার ক্ষতিপূরণের জন্য চাকমাদের স্বার্থে কাজ করতে নৈতিকভাবে দায়বদ্ধ।’

এছাড়া কিভাবে বর্তমান মিজোরামের পশ্চিম ভাগ যেখানে চাকমাদের ঘনবসতি রয়েছে সেখানে ১৯০০ সালের পূর্বে একদা পার্বত্য চট্টগ্রামের অংশ ছিল এবং পরে ব্রিটিশ ভারত সরকারের প্রশাসনিক সুবিধার্থে দক্ষিণ লুসাই হিলের সাথে যুক্ত করা হয় তা স্মরণ করা হয়। সভায় মন্তব্য করা হয় যে, এটাই মিজোরামের চাকমাদের তাদের নিজেদের পিতৃভূমিতে বিদেশি বলে বিবেচনা করার কারণ হয়েছে। চাকমারা দ্বিতীয় শ্রেণির নাগরিক হিসেবে বিবেচিত হয়ে আসছে এবং এই ভুল পরিচয়ের কারণে অবর্ণনীয় বৈষম্যের শিকার হয়ে আসছে।

সূত্রঃ চাকমা ন্যাশনাল কাউন্সিল অব ইন্ডিয়া মিজোরাম স্টেট কমিটি, কমলানগর, মিজোরাম এর প্রেস রিলিজ

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *