বৃহত্তর পার্বত্য চট্টগ্রাম পাহাড়ি ছাত্র পরিষদ (পিসিপি)-এর কেন্দ্রীয় সভাপতি বিপুল চাকমা ও সাধারণ সম্পাদক সুনয়ন চাকমা আজ রবিবার (২৪ জানুয়ারি ২০২১) সংবাদ মাধ্যমে প্রদত্ত এক বিবৃতিতে সেনাবাহিনী কর্তৃক পিসিপি’র দীঘিনালা উপজেলা শাখার সভাপতি অনন্ত চাকমাকে আটকের পর ষড়যন্ত্রমূলকভাবে গাঁজা গুজিয়ে দিয়ে মিথ্যা মামলায় ফাঁসানোর তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়েছেন।
বিবৃতিতে নেতৃদ্বয় অভিযোগ করে বলেন, গতকাল শনিবার (২৩ জানুয়ারি ২০২১) সকাল ১০টায় পিসিপি’র দীঘিনালা উপজেলা শাখার সভাপতি অনন্ত চাকমা বাবুছড়া নতুন বাজার থেকে সাংগঠনিক কাজে মোটরসাইকেল যোগে দীঘিনালা সদর এলাকায় যাচ্ছিলেন। এ সময় বাবুছড়া পুরাতন বাজারে অবস্থিত সেনাবাহিনীর বাবুছড়া সাব জোনের চেকপোস্টে মোটর সাইকেল থামিয়ে দায়িত্বরত সেনা সদস্যরা তাকে আটক করে নিয়ে যায়। এরপর বেধড়ক শারিরীক নির্যাতন করার পর রাত প্রায় সাড়ে ১০টা দিকে তাকে সেনাবাহিনীর কাছে থাকা ৯শ গ্রাম গাঁজা গুজিয়ে দিয়ে দীঘিনালা থানায় হস্তান্তর করা হয়েছে। এ সময় সেনাবাহিনীর বাবুছড়া সাব জোনে অনন্ত চাকমার মুক্তির সুপারিশ নিয়ে যাওয়া মো. মতিন নামে এক বাঙালি ব্যবসায়ীকে বেঁধে রেখে শারিরীক নির্যাতন করা হয়।
নেতৃদ্বয় অভিযোগ করে আরো বলেন, পার্বত্য চট্টগ্রামে বিভিন্ন অঞ্চলে বিভিন্ন স্থানে মাদক ব্যবসায়ীরা সেনা-প্রশাসনের প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ সহযোগিতায় মাদক সরবরাহ, চোরা চালান ও ক্রয়-বিক্রয় করছে। সরকার দলীয় নেতা-কর্মী থেকে শুরু করে রাষ্ট্রীয় প্রশাসনের কর্মকর্তা-কর্মচারীরাও সেসব কাজে সরাসরি জড়িত রয়েছে। কিন্তু, সে সকল মাদক ব্যবসায়ীর গডফাদার, সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীরা প্রশাসনের ধরাশোয়ার বাহিরে। মূলত, পার্বত্য চট্টগ্রামে শাসকগোষ্ঠী তাদের হীনস্বার্থের জন্য ছাত্র-যুবকদের মাঝে মাদক ছড়িয়ে দিয়ে ছাত্র সমাজকে রসাতলে নিয়ে যাবার চক্রান্ত চালিয়ে যাচ্ছে। যারা জনগণের পক্ষে কাজ করছেন, জনগণের সুখ-দুখের পাশে দাঁড়াচ্ছেন সে সকল রাজনৈতিক নেতা-কর্মী ও সাধারণ মানুষকে অস্ত্র-মাদকসহ নানান ষড়যন্ত্রমূলক মিথ্যা মামলায় সাজিয়ে দমন-পীড়ন করা হচ্ছে।
নেতৃদ্বয় ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, অনন্ত চাকমা একজন আদর্শিক ধারার রাজনৈতিক ছাত্র সংগঠনের নেতা। তিনি পার্বত্য চট্টগ্রামসহ দেশের নিপীড়িত জনগণের পক্ষে এবং শাসকগোষ্ঠীর অন্যায়—অত্যাচারের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে নিয়োজিত রয়েছেন। সুতরাং তার কাছ থেকে গাঁজা পাওয়ার কোন প্রশ্নই উঠে না। এটি সম্পূর্ণ সাজানো, মিথ্যা ও ষড়যন্ত্রমূলক। মূলত পাহাড়ি ছাত্র পরিষদের মতো একটি আদর্শিক ছাত্র সংগঠনের ভাবমূর্তি ক্ষুন্ন করার জন্য সেনাবাহিনী ষড়যন্ত্রমূলকভাবে গাঁজা গুজিয়ে দিয়ে এই নাটক মঞ্চস্থ করেছে।
নেতৃদ্বয় আরো বলেন, পার্বত্য চট্টগ্রামে এক শ্রেণী সামরিক-বেসামরিক বাহিনীর কর্মকর্তাদের প্রমোশন বাণিজ্য চলছে। এর জন্য তারা মাদকসহ অবৈধ অস্ত্র চোরাচালানের কাজও চালিয়ে যাচ্ছে। আর তাদের এই প্রমোশন বাণিজ্যের বলি হচ্ছে পাহাড়ে সাধারণ মানুষসহ রাজনৈতিক সংগঠনের নেতা—কর্মীরা। নিরীহ লোকজনকে বেআইনিভাবে আটক করে কখনো তাদের সরবরাহকৃত অবৈধ অস্ত্র গুজিয়ে দিয়ে, কখনো মাদক গুজিয়ে দিয়ে মিথ্যা নাটক সাজিয়ে তারা স্বার্থ আদায়ে মরিয়া হয়ে উঠেছে। দিন-দুপুরে প্রকাশ্যে রাস্তা থেকে তুলে নিয়ে সাধারণ ছাত্র-যুবকদের মিথ্যাভাবে মাদক মামলায় ফাঁসানো হচ্ছে।
বিবৃতিতে নেতৃদ্বয়, অবিলম্বে পিসিপি নেতা অনন্ত চাকমাকে নিঃশর্ত মুক্তি প্রদান ও অস্ত্র-মাদক উদ্ধারের নামে রাষ্ট্রীয় বাহিনীর প্রমোশন বাণিজ্য বন্ধ করা, রাজনৈতিক নেতা-কর্মীদের বিরুদ্ধে দায়েরকৃত ষড়যন্ত্রমূলক সকল মিথ্যা মামলা প্রত্যাহার এবং পার্বত্য চট্টগ্রাম থেকে সেনাশাসন তুলে নিয়ে সুষ্ঠু গণতান্ত্রিক পরিবেশ সৃষ্টির দাবি জানান।