আজ ২৪ মার্চ ২০২২ দেশের ২৪ বিশিষ্ট নাগরিক ভূমিদস্যুদের কর্তৃক বান্দরবান পার্বত্য জেলায় আদিবাসী জুম্মদের জুমের বাগান, পাহাড় এবং ভূমি দখলের ঘটনায় উদ্বেগ প্রকাশ করে এবং ঘটনার নিরপেক্ষ তদন্ত পূর্বক নিজেদের ভূমির উপর আদিবাসীদের দখলসত্ত্ব নিশ্চিত করার দাবি জানিয়ে একটি বিবৃতি দিয়েছেন।
বিবৃতিতে বলা হয়, ‘সম্প্রতি গণমাধ্যমে প্রকাশিত সংবাদে জানা গেছে, ২০ মার্চ ২০২২ রোববার সকালে বান্দরবান জেলা প্রশাসন কার্যালয়ের সামনে মানববন্ধন ও বিক্ষোভ সমাবেশে দখল হয়ে যাওয়া জুমের বাগান, পাহাড় এবং ভূমি ফেরত পাওয়ার জন্য প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন বান্দরবানের লামা উপজেলার সরই ইউনিয়নের লাংকম ম্রো কার্বারী পাড়া, জয়চন্দ্র ত্রিপুরা কার্বারী পাড়া এবং রেংয়েন ম্রো কার্বারী পাড়ার বাসিন্দারা।’
বিবৃতিতে উল্লেখ করা হয়, ‘লামা রাবার ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেডের পরিচালক কামাল উদ্দিন কয়েকজন স্থানীয় ভূমিদস্যূদের সহায়তায় আদিবাসীদের প্রায় ৩০০ একর জুম ভূমি দখল করেছে। এর প্রতিবাদ করেেল বিভিন্ন সময় আদিবাসীদের বিরুদ্ধে এই কোম্পানি মিথ্যা মামলা করেছে।
সমতলের আদিবাসীদের ভূমির মালিকানা দেশের প্রচলিত আইনে নির্ধারণ করা হলেও তিন পার্বত্য জেলায় আদিবাসীদের ভূমি মালিকানা সামাজিক। ‘সার্বজনীন সম্পদ-সম্পত্তি মালিকানা অধিকার’ নীতিই হলো তাদের ভূমি মালিকানার ভিত্তি। ফলে এই মালিকানা বংশ পরম্পরায় মৌখিক। তিনটি সার্কেলের আওতায় পার্বত্য পাড়ার হেডম্যান এবং কারবারিরা এর ব্যবস্থাপনা করে থাকেন। কিন্তু গত ৩০ বছরে এই পার্বত্য পাড়ার নিয়ন্ত্রণাধীন ভূমির পরিমাণ শতকরা ৫১ ভাগ কমে গেছে। আরেক কথায় বলা যায়, পাহাড়িদের সামাজিক মালিকানার অর্ধেকেরও বেশি ভূমি ও ভূসম্পদ হাতছাড়া হয়ে গেছে।’
বিশিষ্ট নাগরিকগণ বলেন, ‘বান্দরবানের লামা উপজেলার সরই ইউনিয়নের লাংকম ম্রো কার্বারী পাড়া, জয়চন্দ্র ত্রিপুরা কার্বারী পাড়া এবং রেংয়েন ম্রো কার্বারী পাড়ার আদিবাসীদের জুমের বাগান এবং ভূমি দখল হয়ে যাওয়ার ঘটনায় প্রশাসনের দৃশ্যমান পদক্ষেপ না থাকার বিষয়টি আমাদের গভীরভাবে হতাশ করেছে; আমরা উদ্বিগ্ন। স্থানীয় ও প্রশাসনের পক্ষ থেকে ন্যায়বিচারের লক্ষ্যে কোনো প্রকার ব্যবস্থা কিংবা ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারের পাশে থেকে তাদের সহায়তার বিষয়ে কোন প্রকার আশ^স্তও করা হয়নি, যা আমাদের বিক্ষুব্ধ করেছে।’
তাঁরা আরও বলেন, ‘এমতাবস্থায় আমরা অনতিবিলম্বে বান্দরবানের লামা উপজেলার সরই ইউনিয়নের আদিবাসীদের দখল হয়ে যাওয়া জুমের বাগান, পাহাড় এবং ভূমি দখলের ঘটনায় আইনানুগ প্রতিকারের লক্ষ্যে ঘটনার নিরপেক্ষ তদন্ত সম্পন্ন করা, ভূমিদস্যূদের অবিলম্বে গ্রেফতার করে তার বিরুদ্ধে প্রচলিত আইনে ব্যবস্থা নেয়া এবং পাড়াগুলোতে ম্রো জনগোষ্ঠীর মানুষের দখলসত্ত্ব নিশ্চিত করার দাবি জানাচ্ছি।’
বিবৃতিতে স্বাক্ষরদানকারী নাগরিকগণ হলেন- পঙ্কজ ভট্টাচার্য, সভাপতি, ঐক্য ন্যাপ, রাশেদা কে. চৌধুরী, তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক উপদেষ্টা, রামেন্দু মজুমদার, সভাপতি মন্ডলীর সদস্য, সম্মিলিত সামাজিক আন্দোলন, ডা. সারওয়ার আলী, ট্রাস্টি, মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘর, ডা. ফওজিয়া মোসলেম, সভাপতি, বাংলাদেশ মহিলা পরিষদ, ড. নুর মোহাম্মদ তালুকদার, সদস্য সচিব, সাম্প্রদায়িকতা ও জঙ্গিবাদ বিরোধী মঞ্চ, এস.এম.এসবুর, সভাপতি, বাংলাদেশ কৃষক সমিতি, খুশী কবির, মানবাধিকার কর্মী, এম.এম. আকাশ, অধ্যাপক, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, রোবায়েত ফেরদৌস, অধ্যাপক, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, সালেহ আহমেদ, সাধারণ সম্পাদক, সম্মিলিত সামাজিক আন্দোলন, ডা. লেনিন চৌধুরী, জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ, রঞ্জিত কুমার সাহা, সিনেট সদস্য, ঢাকা বিশ^বিদ্যালয়, পারভেজ হাসেম, অ্যাডভোকেট, বাংলাদেশ সুপ্রীম কোর্ট, আবদুল ওয়াহেদ, কার্যকরী সভাপতি, জাতীয় শ্রমিক জোট, অ্যাডভোকেট জীবনানন্দ জয়ন্ত, সংগঠক, গণজাগরণমঞ্চ, ড. সেলু বাসিত, সংস্কৃতিকর্মি, রাজিয়া সামাদ ডালিয়া, সমাজকর্মী, এ কে আজাদ, সংস্কৃতিকর্মী অলক দাস গুপ্ত, সভাপতি, উঠোন সাংস্কৃতিক সংগঠন, দীপায়ন খীসা, তথ্য ও প্রচার সম্পাদক, বাংলাদেশ আদিবাসী ফোরাম, বিভূতী ভূষণ মাহাতো, সদস্য, জাতীয় আদিবাসী পরিষদ, কেন্দ্রীয় কমিটি, কাজী আব্দুল মোতালেব জুয়েল, সভাপতি, বাংলাদেশ ছাত্র মৈত্রী, গৌতম শীল, সভাপতি, বাংলাদেশ ছাত্রলীগ (বিসিএল)।