আজ ইউপিডিএফের কেন্দ্রীয় নেতা শহীদ রুইখই মারমার ১১তম মৃত্যুবার্ষিকী

আজ ২ অক্টোবর ইউপিডিএফ-এর কেন্দ্রীয় নেতা শহীদ রুইখই মারমার ১১তম মৃত্যুবার্ষিকী। ২০০৯ সালের এই দিনে খাগড়াছড়ির লক্ষ্মীছড়ি উপজেলার বর্মাছড়ি ইউনিয়নের বটতলী নামক স্থানে সেনাবাহিনীর সৃষ্ট সন্ত্রাসীদের সশস্ত্র হামলায় রুইখই মারমা শহীদ হন।

তৎসময়ে লক্ষ্মীছড়ি সেনা জোনে জোন কমাণ্ডার হিসেবে দায়িত্বে ছিলেন লে. কর্ণেল শরীফুল ইসলাম। তিনিই ‘সিএইচটিএনএফ’ নাম দিয়ে এই খুনি সন্ত্রাসী গ্রুপটি সৃষ্টি করেন। পরে স্থানীয় লোকজন এই সন্ত্রাসী গ্রুপটিকে ‘বোরখা পার্টি’ নাম দেয়। কারণ তারা বোরখা সদৃশ কাপড় ব্যবহার করে অপহরণ, চুরি, ডাকাতি, ছিনতাইসহ নানা অপরাধকর্ম সংঘটিত করতো। লক্ষ্মীছড়ি জোন কমাণ্ডার শরীফুল ইসলাম এই সন্ত্রাসী গ্রুপটিকে অস্ত্র সরবরাহ, নিরাপত্তা দেয়া থেকে শুরু করে সকল দেখাশুনা করতেন। এই সন্ত্রাসী গ্রুপটিকে দিয়েই রুইখই মারমাকে হত্যা করা হয়।

রুইখই মারমাকে হত্যার অন্যতম কারণ ছিল তিনি সে সময় লক্ষ্মীছড়ি, মানিকছড়ি ও রামগড়ে সেনা উস্কানিতে ভূমি বেদখলের মহোৎসব শুরু হলে তার বিরুদ্ধে জনগণকে সংগঠিত করে সক্রিয় প্রতিরোধ গড়ে তুলতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছিলেন। তার সুদক্ষ নেতৃত্বের কারণেই সেনাবাহিনী ও তাদের চর-এজেন্টর একের পর এক ষড়যন্ত্র ও চক্রান্তের জাল ছিন্নভিন্ন হয়ে যায়। এক কথায় রুইখই মারমা অপরিসীম দায়িত্বশীলতার সাথে এলাকার জনগণের স্বার্থের পাহারা দিয়েছিলেন। যার কারণেই তাকে হত্যা করা হয়।

রুইখই মারমা আগাগোড়া একজন সংগ্রামী ব্যক্তিত্বের নাম। ১৯৫২ সালে জন্মগ্রহণকারী এই নেতা ছাত্রজীবনে রাজনীতিতে জড়িয়ে পড়েন। পরে তিনি জনসংহতি সমিতিতে যোগ দেন। এরপর ১৯৮৩ সালে জনসংহতি সমিতির মধ্যে মতবিরোধ দেখা দিলে গৃহযুদ্ধের সূত্রপাত ঘটে। এই গৃহযুদ্ধ অবসানের পর তিনি দীর্ঘ সময় ধরে রাজনীতি থেকে দূরে অবস্থান করেন। ১৯৯৮ সালে ইউপিডিএফ গঠিত হলে তিনি এই দলে অন্তর্ভুক্ত হন এবং এই পার্টির বিকাশ ও শ্রীবৃদ্ধিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন। তিনি অত্যন্ত একনিষ্টতার সাথে ভাগ্য বিড়ম্বিত, লাঞ্ছিত-বঞ্চিত ও অধিকারহারা জনগণের অধিকার ও আত্মমর্যাদা প্রতিষ্ঠার জন্য আমৃত্যু নিরলসভাবে কাজ করে গেছেন।

রুইখই মারমাকে শারিরীকভাবে হত্যা করা গেলেও নিপীড়িত মানুষের মুক্তির যে স্বপ্ন তিনি দেখে গেছেন সেই স্বপ্নের কোন মৃত্যু নেই। যে আকাঙ্ক্ষা বুকে ধারণ করে তিনি আজীবন সংগ্রাম করে গেছেন, সে আকাঙ্ক্ষা চিরঞ্জীব–শত সহস্র মানুষের মিলিত সংগ্রামী চেতনার প্রতিধ্বনি।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *