গ্লাসগোর বন সংক্রান্ত ঘোষণাপত্রে স্বাক্ষর না করা বাংলাদেশের জন্য লজ্জাজনক

মিনার চাকমা- জাতিসংঘ আয়োজিত যুক্তরাজ্যের গ্লাসগোতে চলমান বিশ্ব জলবায়ু সম্মেলনে (কপ২৬) গত ২ নভেম্বর ১২৮টি দেশ Glasgow Leaders’ Declaration on Forests and Land Use এ স্বাক্ষর করেছে। অনেকে এই ঘোষণাপত্রকে প্রয়োজনের তুলনায় অপ্রতুল হলেও একটি সঠিক পদক্ষেপ বলে মন্তব্য করেছেন। কারণ বন হলো অনেকগুলো ইকো সিস্টেমের একটি, জলবায়ু পরিবর্তন রোধ করতে হলে যাকে আমাদের অবশ্যই রক্ষা ও পুনরুদ্ধার করতে হবে। (দেখুন: https://www.foodandlandusecoalition.org/glasgow-leaders-declaration-on-forests-and-land-use-a-step-in-the-right-direction-implementation-critical-and-urgent/)

গ্লাসগোর এই ঘোষণাপত্র ২০১৪ সালের নিউইয়র্ক ডিক্লারেশন অন ফরেস্ট-এর উন্নত সংস্করণ এবং এতে ২০৩০ সালের মধ্যে বনবিনাশ বন্ধ করার লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। এছাড়া এতে বন রক্ষায় ‘আদিবাসীদের’ ভূমিকার কথা স্বীকার করে তাদেরকে সমর্থনদানের প্রতিশ্রুতি দেয়া হয়েছে।
তিনটি বৃহৎ রাষ্ট্র রাশিয়া, চীন ও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং দক্ষিণ এশিয়ার পাকিস্তান, নেপাল ও ভূটানসহ বিশ্বের ১২৮টি দেশ এই ঐতিহাসিক ঘোষণাপত্রে স্বাক্ষর করে। এই দেশগুলো পৃথিবীর ৮৫% বনের প্রতিনিধিত্ব করে।

বাংলাদেশ বন ও পরিবেশ রক্ষায় অনর্গল প্রতিশ্রুতি বর্ষণ করলেও বন রক্ষার এই গুরুত্বপূর্ণ দলিলে স্বাক্ষর করেনি, ফলে আমরা একটি মহৎ লক্ষ্য অর্জনে বিশ্বের সাথে তাল মেলাতে ব্যর্থ হলাম, যা দেশের জন্য অত্যন্ত লজ্জার বিষয়। উল্লেখ্য, বাংলাদেশ এর আগে নিউইয়র্ক ডিক্লারেশন অন ফরেস্ট-এও স্বাক্ষর করা থেকে বিরত ছিল।

দুর্নীতি বিরোধী সংগঠন ট্রান্সফারেন্সি ইন্টারন্যাশন্যাল-বাংলাদেশ উক্ত দলিলে বাংলাদেশ স্বাক্ষর না করায় গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছে। সংগঠনটি বন বিনাশ রোধ ও বন পুনরুদ্ধারে সুনির্দিষ্ট পদক্ষেপ গ্রহণ এবং গ্লাসগো লিডার্স ডিক্লারেশন অন ফরেস্ট এন্ড ল্যান্ড ইউজ-এ স্বাক্ষর করতে সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে। টিআইবির নির্বাহী পরিচালক বাংলাদেশের এই ভূমিকাকে হতাশাব্যঞ্জক বলে অভিহিত করেন। (দেখুন: https://www.newagebd.net/article/153607/tib-concerned-as-bangladesh-not-signs-declaration-on-deforestation)

যে সমস্ত কারণ জলবায়ু পরিবর্তনের জন্য দায়ী তার মধ্যে বন বিনাশ অন্যতম। বন গ্রীন হাউজ এফেক্টে-এর জন্য দায়ী কার্বন নিঃসরণকারী গ্যাস শোষণ করে, ফলে বিশ্বে তাপমাত্রার ভারসাম্য রক্ষায় বনের গুরুত্ব অপরিসীম। বাংলাদেশ হলো Global Climate Risk Index (CRI) 2021 অনুযায়ী seventh most climate change vulnerable দেশ। তাই গ্লাসগোর বন সংক্রান্ত ঘোষণাপত্রে স্বাক্ষর না করার কোন কারণ ও যুক্তি বাংলাদেশের থাকতে পারে না।

আমরা ‘বন ও পরিবেশ বান্ধব’ আওয়ামী লীগ সরকারকে তার সিদ্ধান্ত পুনর্বিবেচনা পূর্বক গ্লাসগোর উক্ত গুরুত্বপূর্ণ ঘোষণাপত্রে স্বাক্ষর করার আহ্বান জানাচ্ছি।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *