শাসকগোষ্ঠীর মদদেই লামা রাবার ইন্ডাস্ট্রিজ বারবার ম্রো-ত্রিপুরাদের জুমভূমি বেদখলের চেষ্টা চালাচ্ছে

চট্টগ্রামে সচেতন নাগরিক সমাজের বিক্ষোভ সমাবেশে বক্তারা

নিজস্ব প্রতিনিধি।। “প্রাণ, প্রকৃতি ও পরিবেশ বিনষ্টকারী সকল রাবার বাগানের ইজারা বাতিল কর” এই স্লোগানে বান্দরবানের লামা উপজেলার সরই ইউনিয়নে ‘লামা রাবার ইন্ডাস্ট্রিজ’ কর্তৃক শ্রমিক লেলিয়ে দিয়ে জঙ্গল কেটে ত্রিপুরা ও ম্রোদের ভোগদখলীয় ৪০০ একর জুম ভূমি পুনরায় বেদখল প্রচেষ্টার প্রতিবাদে চট্টগ্রামে বিক্ষোভ সমাবেশ করেছে চট্টগ্রামস্থ সচেতন নাগরিক সমাজ।

আজ শুক্রবার (২৮ অক্টোবর ২০২২) বিকাল ৩ টায় মহানগরীর চেরাগি পাহাড় মোড়ে এই বিক্ষোভ সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়।সমাবেশের আগে একটি বিক্ষোভ মিছিল গুরুত্বপূর্ণ সড়ক প্রদক্ষিণ করে।

পাহাড়ি ছাত্র পরিষদের চট্টগ্রাম মহানগরের সাধারণ সম্পাদক অমিত চাকমা সঞ্চালনায় চট্টগ্রামস্থ সচেতন নাগরিক সমাজের আহবায়ক এডভোকেট ভূলন ভৌমিকের সভাপতিত্বে বিক্ষোভ সমাবেশে বক্তব্য রাখেন বাংলাদেশ ছাত্র ফেডারেশনের চট্টগ্রাম মহানগরের আহবায়ক সাইফুর রুদ্র, বাংলাদেশের সাম্যবাদী আন্দোলনের কেন্দ্রীয় নেতা ও চিকিৎসক ডাক্তার সুশান্ত বড়ুয়া, পাহাড়ি ছাত্র পরিষদের চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় শাখা সভাপতি মিটন চাকমা, হিল উইমেন্স ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক রিতা চাকমা, গণতান্ত্রিক যুব ফোরামের মহানগর ভারপ্রাপ্ত সভাপতি উচিংশৈ চাক শুভ।

বক্তারা বলেন, বাংলাদেশ রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার ৫০ বছর পরেও জাতিগত নিপীড়ন চলছে। এই নিপীড়নে শাসকগোষ্ঠী প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে মদদ যোগায়। শাসকগোষ্ঠীর মদদেই লামা রাবার ইন্ডাস্ট্রিজ বারবার ম্রো ও ত্রিপুরাদের ৪০০ একর জুম ভূমি বেদখলের প্রচেষ্টা চালাচ্ছে। শাসকগোষ্ঠির মদদ ছাড়া তারা এটা করতে পারতো না।

বক্তারা আরও বলেন, লামা সরই ইউনিয়নে রাবার ইন্ডাস্ট্রিজ কর্তৃক রেংয়েন ম্রো পাড়া, লাংকম ম্রো পাড়া ও জয়চন্ত্র ত্রিপুরা পাড়ায় বসবারসত ম্রো ও ত্রিপুরাদের জুম ভূমি জবরদখলের যে প্রচেষ্টা চালাচ্ছে তা সম্পূর্ণ বেআইনি ও জবরদস্তিমূলক। স্থানীয় প্রশাসন কর্তৃক গত ২৭ সেপ্টেম্বর জারিকৃত ১৪৪/৪৫ ধারা উপেক্ষা করে গত ২৩-২৬ অক্টোবর ৪ দিন ধরে রাবার কোম্পানির নিয়োজিত লোকজন রেংয়েন ম্রো পাড়া এলাকায় পূনরায় অনুপ্রবেশ করে ম্রো ও ত্রিপুরাদের ভোগদখলীয় জুমের বন ও ফলজ বাগান কেটে সাবাড় করে দিয়েছে।

বক্তারা বলেন, ভূমিপুত্র ম্রো-ত্রিপুরাদের বিতাড়িত করতে লামা সরই ভূমি রক্ষা সংগ্রাম কমিটির সদস্যদের বিরুদ্ধে একাধিক মামলা দায়ের, ভুক্তভোগীদের প্রাণে মারতে এলাকাবাসীর পানীয় জলের উৎসে বিষ প্রয়োগ, রোহিঙ্গা শ্রমিক লেলিয়ে দিয়ে জোরজবরদস্তি করে জঙ্গল কাটা ও জুমভূমিতে আগুন লাগিয়ে দিয়ে প্রাণ-প্রকৃতি, ক্ষেত, বাগান-বাগিচা ধ্বংস করে দেয়াসহ এমন কোনো হীন প্রচেষ্টা বাকি নেই যা ভূমিদস্যু রাবার কোম্পানি অব্যাহতভাবে চালিয়ে যাচ্ছে।

বক্তারা লামা সরই ইউনিয়নে ম্রো ও ত্রিপুরাদের ৪০০ একর জুম ভূমি রক্ষা না হওয়া পর্যন্ত আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দেন। তারা বলেন, পাহাড় ও সমতলে সবাইকে ঐক্যবদ্ধ হয়ে ভূমি দস্যু রাবার কোম্পানির বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াতে হবে।

বক্তারা অবিলম্বে আইন লঙ্ঘনকারী লামা রাবার ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেডের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ ও জমি ইজারা চুক্তি বাতিলপূর্বক কোম্পানির কার্যক্রম বন্ধ করে দেয়া এবং ম্রো ও ত্রিপুরাদের ৪০০ একর জুম ভূমি বেদখলের সকল ষড়যন্ত্র বন্ধের দাবি জানান।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *