লাকিংমে চাকমা স্মরণে প্রদীপ প্রজ্জ্বলন

লাকিংমে চাকমার মৃত্যুকে হত্যাকাণ্ড দাবি করে এর সঙ্গে জড়িতদের বিচারের দাবি জানানো হয়েছে চট্টগ্রামের এক প্রতিবাদ সমাবেশ থেকে।

বৃহস্পতিবার বিকালে নগরীর চেরাগী পাহাড় মোড়ে ‘লাকিংমের স্মরণে ভালোবাসার প্রদীপ প্রজ্জ্বলন’ শিরোনামে প্রতিবাদ কর্মসূচির আয়োজন করা হয়।

চট্টগ্রামের নাগরিক সমাজ, বাংলাদেশ আদিবাসী ফোরাম চট্টগ্রাম অঞ্চল এবং বাংলাদেশ নারী প্রগতি সংঘের যৌথ আয়োজনে এই কর্মসূচি পালন করা হয়।

সমাবেশে সভাপতির বক্তব্যে বাংলাদেশ আবৃত্তি সমন্বয় পরিষদের কেন্দ্রীয় যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক রাশেদ হাসান বলেন, “যদি দেশের সংবিধান সকল জাতিগোষ্ঠীর অধিকার স্বীকার করে, তাহলে কেন কিছু দিন পরপর অধিকারের দাবিতে আদিবাসীদের পথে নামতে হয়?

“মাত্র ১৫ বছরের কিশোরী লাকিংমেকে অপহরণ করা হয়। যদি তাকে বিয়েও করা হয়, সেটাও কখনোই আইনসম্মত নয়। একটি অন্যায়ের বিরুদ্ধে দাঁড়াতে না পারলে আরও অন্যায় হবে। লাকিংমে চাকমার হত্যার ঘটনার সাথে জড়িতদের দ্রুত বিচার দাবি করছি।”

সমাবেশে ওয়ার্কার্স পার্টির চট্টগ্রাম জেলার সাধারণ সম্পাদক শরীফ চৌহান বলেন, “পরিবার জানিয়েছে, অপ্রাপ্তবয়স্ক কিশোরী লাকিংমেকে জোরপূর্বক তুলে নেওয়া হয়। তাকে যদি বিয়েও করা হয়, তা আসলে ধর্ষণেরই নামান্তর। কারণ আইনত অপ্রাপ্তবয়স্কের বিয়ে হতে পারে না।

“আমরা লাকিংমে হত্যার সুষ্ঠু বিচার চাই। দোষীদের গ্রেপ্তার করা হোক। তাই নিয়মিত মামলা করে অনতিবিলম্বে অভিযুক্তদের গ্রেপ্তার ও বিচার করতে হবে। চরম নিরাপত্তাহীনতায় ভোগা লাকিংমের পরিবারের যথাযথ নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে।”

কক্সবাজারের টেকনাফ উপজেলার বাহারছড়া ইউনিয়নের শীলখালী গ্রামের চাকমা পাড়ার লালা অং চাকমার মেয়ে লাকিংমে চাকমা (১৫)।

গত বছরের ৫ জানুয়ারি লাকিংমেকে বাহারছড়া ইউনিয়নের মাথাভাঙ্গার আতাউল্লাহসহ চার-পাঁচ জন যুবক অপহরণ করে অজ্ঞাত স্থানে নিয়ে যায়।

এরপর তার বাবা টেকনাফ থানায় অপহরণের মামলা করার চেষ্টা করলেও থানা মামলা না নিয়ে তাদের আদালতে পাঠায়। এরপর ২৭ জানুয়ারি লাকিংমের বাবা নিজে বাদী হয়ে কক্সবাজার নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালে মামলা করেন।

এর প্রায় এক বছর পর গত ৯ ডিসেম্বর সন্ধ্যায় লাকিংমে চাকমাকে কয়েকজন যুবক কক্সবাজার সদর হাসপাতালের জরুরি বিভাগে নিয়ে যায়। সেদিন হাসপাতালে নেওয়ার আগেই লাকিংমের মৃত্যু হয়েছিল বলে চিকিৎসকরা জানান।

ময়নাতদন্তের পর আতাউল্লাহ নিজের স্ত্রী দাবি করে লাকিংমের লাশ তাকে হস্তান্তরের জন্য পুলিশের কাছে আবেদন করেন। অন্যদিকে মেয়ের অস্বাভাবিক মৃত্যুর খবর পেয়ে লাকিংমের বাবা লালা অংও হাসপাতালে এসে সন্তানের মরদেহ পাওয়ার আবেদন করেন। এরপর আইনি জটিলতা শুরু হওয়ায় লাকিংমের মরদেহ কাউকে দেওয়া হয়নি।

গত ১৫ ডিসেম্বর লালা অং চাকমা মরদেহ পেতে টেকনাফ বিচারিক হাকিম আদালতে আবেদন করেন। আদালত শুনানি করে আবেদনটি গ্রহণ করে লাকিংমের ধর্ম পরিচয় নিশ্চিত হয়ে তার শেষকৃত্য সম্পন্ন করতে র‌্যাবকে দায়িত্ব দেয়।

র‌্যাবের তদন্তকারী কর্মকর্তা র‌্যাব-১৫ কক্সবাজার ব্যাটেলিয়নের এসআই অর্জুন চৌধুরী জানান, তদন্তে লাকিংমে চাকমার বয়স নাবালিকা অর্থাৎ প্রচলিত আইনে বিয়ের উপযুক্ত হয়নি বলে সত্যতা পাওয়া গেছে। তার যদি বিয়ে হয়েও থাকে তা আইনগতভাবে অবৈধ।

তদন্তে এসব প্রমাণ হওয়ায় ৪ জানুয়ারি তার মরদেহ বাবা-মার কাছে হস্তান্তর করা হয়। এরমধ্যে পেরিয়ে গেছে ২৬ দিন। ততদিন মর্গেই ছিল লাকিংমের মরদেহ।

বৃহস্পতিবারের সমাবেশে চট্টগ্রাম প্রেসক্লাবের সাবেক সাধারণ সম্পাদক শুকলাল দাশ বলেন, “লাকিংমে চাকমাকে নির্মমভাবে ধর্ষণ ও খুন করা হয়েছে। তার পরিবার এর ন্যায্য বিচার পায়নি। লাকিংমে কোনো একক ঘটনা নয়। পাহাড়ে ও সমতলে এরকম অনেক ঘটনা ঘটছে।”

পাহাড়ি ছাত্র পরিষদ চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের নেতা শ্রাবণ চাকমার সঞ্চালনায় সমাবেশে বক্তব্য রাখেন মুক্তিযুদ্ধ গবেষণা কেন্দ্রের চেয়ারম্যান ডা. মাহফুজুর রহমান, নাট্যজন সাংবাদিক প্রদীপ দেওয়ানজী, ন্যাপের সাংগঠনিক সম্পাদক মিটুল দাশগুপ্ত, সাংস্কৃতিক সংগঠক সুনীল ধর, সাংবাদিক প্রীতম দাশ, সংগঠক শৈবাল পারিয়াল, সংগঠক হাবিবুল হক বিপ্লব, বাংলাদেশ মাইনরিটি ওয়াচ সাংগঠনিক সম্পাদক জুয়েল আইচ, পাহাড়ি শ্রমিক কল্যাণ পরিষদের সাধারণ সম্পাদক জগৎ চাকমা, সহ সভাপতি ডিয়াস তঞ্চঙ্গ্যা, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র সুখী কুমার তঞ্চঙ্গ্যা।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *