রাখাইনদের ঐতিহাসিক স্থান অধিগ্রহণ না করার দাবি

নিজস্ব প্রতিবেদক

পটুয়াখালীর কলাপাড়া উপজেলার রাখাইন ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠীর ঐতিহাসিক স্থান রক্ষার দাবি করেছেন ঢাকার একটি নাগরিক প্রতিনিধিদলের সদস্যরা। স্থানীয় প্রভাবশালী ও সাবেক ভূমি কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের সিন্ডিকেট ভেঙে দেওয়ারও দাবি জানান তাঁরা।
রাখাইনদের নানা সমস্যা সরেজমিনে দেখতে নাগরিক প্রতিনিধিদল পটুয়াখালীর কলাপাড়া উপজেলার কয়েকটি গ্রাম পরিদর্শন করে। এর মধ্যে ছিল টিয়াখালী ইউনিয়নের ছয়আনীপাড়া ও চৈয়াপাড়া, মিঠাগঞ্জ ইউনিয়নের তুলাতলীপাড়া ও মধুপাড়া, কুয়াকাটা পৌর এলাকার কেরানীপাড়া এবং লতাচাপলী ইউনিয়নের মিশ্রিপাড়া।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের অধ্যাপক রোবায়েত ফেরদৌস ১৪ সদস্যের এ প্রতিনিধিদলের নেতৃত্ব দেন। গত শুক্রবার সকালে প্রতিনিধিদলটি প্রথমে কলাপাড়া উপজেলার টিয়াখালী ইউনিয়নের ছয়আনীপাড়া ও চৈয়াপাড়া রাখাইনপল্লি ঘুরে দেখে। পরে তারা এখানকার রাখাইনদের সমস্যা নিয়ে পায়রা বন্দর কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কথা বলে।

রাখাইনদের অভিযোগ, ছয়আনীপাড়ার ছয়টি রাখাইন পরিবারকে অবকাঠামো বাবদ কিছু ক্ষতিপূরণ দিলেও পুনর্বাসনের ব্যবস্থা ও সুরাহা না করেই তাঁদের ভিটেমাটি থেকে উচ্ছেদ করা হয়েছে। এ জন্য তীব্র ক্ষোভ প্রকাশ করে প্রতিনিধিদলের প্রধান রোবায়েত ফেরদৌস আরও বলেন, পায়রা তৃতীয় সমুদ্রবন্দরের জন্য জমি অধিগ্রহণের আওতায় পড়ায় প্রায় তিন শ বছরের প্রাচীন আদিবাসী রাখাইনপল্লি আজ নিশ্চিহ্ন। বন্দরের জন্য জমি অধিগ্রহণের সময় পাড়াটিকে বাদ দেওয়ার দাবি জানিয়ে আসলেও কর্তৃপক্ষ তাঁদের দাবি তোয়াক্কা না করে কয়েক মাস আগে থেকে বারবার নোটিশ দিয়ে আসছিল। এর আগে বাড়িঘরসহ বিদ্যমান অবকাঠামোর বিপরীতে ক্ষতিপূরণ ও যথাযথ পুনর্বাসনের জন্য দাবি জানানো হলেও সেটির সুরাহা না করেই প্রতিদিন যন্ত্রপাতি নিয়ে একটু একটু করে গ্রামের বিভিন্ন জায়গা ভাঙা হয়। অথচ ছয়আনীপাড়া মাত্র ছয়টি রাখাইন পরিবারকে টিকিয়ে রেখেই পায়রা বন্দরের উন্নয়ন কর্মকাণ্ড পরিচালনা করা যেত।বিজ্ঞাপন

কলাপাড়া উপজেলার রাখাইনদের আরও কিছু সমস্যা নিয়ে নাগরিক প্রতিনিধিদলের সদস্যরা শনিবার বিকেল চারটায় কুয়াকাটা প্রেসক্লাবে স্থানীয় পর্যায়ে সংবাদ সম্মেলন করেন। রোবায়েত ফেরদৌস সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে রাখাইনপাড়ার রিজার্ভ পুকুর দখলমুক্ত করে নিজ নিজ রাখাইনপাড়া কর্তৃপক্ষকে ফিরিয়ে দেওয়ার দাবি করেন। রাখাইন সংস্কৃতি রক্ষা, বিকাশ ও চর্চার লক্ষ্যে কুয়াকাটার রাখাইন কালচারাল একাডেমিকে সক্রিয় করা, বিকৃত করা রাখাইন পাড়াগুলোর নাম নিজ নিজ ঐতিহ্যগত নামে ফিরিয়ে আনার ব্যবস্থা করারও দাবি জানান। যেসব রাখাইন অধ্যুষিত গ্রামে শ্মশানভূমি নেই, সেখানে অতি শিগগির মৃতদেহ সৎকারের জন্য রাষ্ট্রীয় উদ্যোগে জায়গা বরাদ্দ দেওয়ার দাবি করা হয় সংবাদ সম্মেলনে। এর পাশাপাশি ভূমিদস্যু, স্থানীয় প্রভাবশালী ও সাবেক ভূমি কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের সিন্ডিকেট ভেঙে দিয় অবৈধ হাউজিং ব্যবসা অবিলম্বে বন্ধ করার দাবি ওঠে। পার্বত্য চট্টগ্রামের বাইরে সমতলের ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠীর মানুষের জন্য পৃথক ভূমি কমিশন গঠনের প্রতিশ্রুতি দ্রুত বাস্তবায়ন করার দাবি জানানো হয়।

প্রতিনিধিদলে অন্যদের মধ্যে ছিলেন মানবাধিকারকর্মী নূর খান, নাগরিক উদ্যোগের প্রধান নির্বাহী জাকির হোসেন, বাংলাদেশ আদিবাসী ফোরামের তথ্য ও প্রচার সম্পাদক দীপায়ন খীসা, অ্যাসোসিয়েশন ফর ল্যান্ড রিফর্ম অ্যান্ড ডেভেলপমেন্টের (এএলআরডি) প্রোগ্রাম অফিসার আজিম হায়দার, হিউম্যান রাইটস সাপোর্ট সোসাইটির মনিটরিং অ্যান্ড ডকুমেন্টেশন কর্মকর্তা আজিজ আখতার, সংস্কৃতিকর্মী মাসুদ আলম, গণমাধ্যমকর্মী রাজিব নূর প্রমুখ।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *