বান্দরবানের চিম্বুকে পাঁচতারা হোটেল নির্মাণ বন্ধের দাবি জানিয়ে পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক মন্ত্রী বীর বাহাদুরকে চিঠি দিয়েছে বহুল পরিচিত প্রভাবশালী আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংগঠন অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল।
গতকাল ২২ নভেম্বর ২০২০ সংগঠনটির দক্ষিণ এশিয়া অঞ্চলের প্রধান ওমর ওয়ারইচ এই চিঠি দেন।
উক্ত চিঠিতে তিনি বলেন, চিম্বুক-থানচি রুটে বিলাসবহুল পাঁচতারা হোটেল নির্মাণ করা হলে অনেক গ্রাম নিশ্চিহ্ন হয়ে যাবে, এতে বিশাল সংখ্যক ম্রো জনগণ জোরপূর্বক উচ্ছেদের শিকার হবেন এবং তাদের সামাজিক, অর্থনৈতিক, ঐতিহ্যবাহী এবং সাংস্কৃতিক কাঠামো ধ্বংস হয়ে যাবে।
“ম্রো এবং অন্যান্য আদিবাসী সম্প্রদায়ের লোকজন এটাও আশঙ্কা করছেন যে, উক্ত হোটেল নির্মাণের ফলে তাদের পবিত্র স্থান, বন, পানীয় জলের উৎস এবং জীববৈচিত্র্য ক্ষতিগ্রস্ত হবে।”
‘এই অবস্থায় উক্ত পাঁচতারা হোটেল নির্মাণ হবে আদিবাসী জনগণের অধিকার সুরক্ষা করতে সরকারী কর্তৃপক্ষের যে দায়দায়িত্ব ও অঙ্গীকার রয়েছে তার লঙ্ঘন ‘ বলে চিঠিতে উল্লেখ করা হয়।
উক্ত চিঠিতে আরো বলা হয়, ‘ম্রো ও অন্যান্য আদিবাসী সম্প্রদায়ের জনগণ আরও জানিয়েছেন যে, হোটেল ও তার সাথে সম্পর্কিত আনুষঙ্গিক প্রকল্পের জন্য আদিবাসীদের প্রথাগত ভূমি আইন লঙ্ঘন করে সরাসরি ও পরোক্ষভাবে শেষ পযন্ত ম্রোদের ৮০০ একর জমি কেড়ে নেয়া হবে। এই উদ্যোগ আইএলও ইন্ডিজিনাস এন্ড ট্রাইবাল পপুলেশনস কনভেনশন ১৯৫৭ এর অধীনে ‘এই সকল জনগোষ্ঠীর প্রতিষ্ঠান, ব্যক্তি, সম্পত্তি ও শ্রম সুরক্ষার’ বাংলাদেশ সরকারের প্রদত্ত অঙ্গীকারের লঙ্ঘন। এই কনভেনশনের ১১ নং অনুচ্ছেদে আরও বলা হয়েছে যে, সংশ্লিষ্ট জনগোষ্ঠীর বংশ পরম্পরায় ভোগ দখল করা জমির উপর ব্যক্তিগত ও যৌথ মালিকানার অধিকারের স্বীকৃতি দেয়া হবে। অনুচ্ছেদ ১৩(২) এ উল্লেখ করা হয়েছে, জনগোষ্ঠীর সদস্যদের ভূমি স্বত্ব বা ভূমির ব্যবহার নিশ্চিত করতে আইন সম্পর্কে তাদের অজ্ঞতার অথবা তাদের প্রথাগত আইনের সুযোগ যাতে সংশ্লিষ্ট জনগোষ্ঠীর সদস্য নয় এমন ব্যক্তিগণ নিতে না পারে তার জন্য ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে।
অধিকন্তু এই হোটেল নির্মাণের ফলে বাংলাদেশ সংবিধানে উল্লেখিত ‘উপজাতি, ক্ষুদ্র জাতিসত্তা, নৃগোষ্ঠী ও সম্প্রদায়ের অনন্য বৈশিষ্ট্যপূর্ণ আঞ্চলিক সংস্কৃতি এবং ঐতিহ্য সংরক্ষণ, উন্নয়ন ও বিকাশের ব্যবস্থা গ্রহণের’ বাধ্যবাধকতাকে লঙ্ঘন করবে বলে চিঠিতে মন্তব্য করা হয়।
চিঠিতে সরকারের কাছে অবিলম্বে উক্ত হোটেল নির্মাণ প্রকল্প বাতিল এবং আদিবাসীদের জমিতে এ ধরনের স্থাপনা নির্মাণের আগে তাদের স্বাধীন, অগ্রিম ও জ্ঞাত সম্মতি নিশ্চিত করার দাবি জানানো হয়েছে।
তাছাড়া বাংলাদেশ সরকারের নিজ সংবিধান ও আন্তর্জাতিক মানবাধিকার আইনের প্রতি অঙ্গীকার মোতাবেক আদিবাসী জনগণের জীবন ও জীবিকার সুরক্ষা ও উন্নয়নের জন্য পদক্ষেপ গ্রহণেরও দাবি জানানো হয়েছে।
* মূল চিঠিটি পড়তে ক্লিক করুন এখানে।