নিজস্ব প্রতিনিধি।। খাগড়াছড়ির স্বনির্ভর বাজার-পেরাছড়ায় ছাত্র নেতা তপন, এল্টন চাকমা ও যুব নেতা পলাশ চাকমাসহ ৭ জনকে খুনের প্রধান হোতা ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মোত্তালেব ও তার লেলিয়ে দেয়া সন্ত্রাসীদের গ্রেফতার ও বিচারের দাবিতে বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ করেছে বৃহত্তর পার্বত্য চট্টগ্রাম পাহাড়ি ছাত্র পরিষদ, গণতান্ত্রিক যুব ফোরাম ও হিল উইমেন্স ফেডারেশন-এর খাগড়াছড়ি জেলা শাখা। “স্বনির্ভর হত্যাকাণ্ডের ৪ বছর” উপলক্ষে এই বিক্ষোভের আয়োজন করা হয়।
আজ বৃহস্পতিবার (১৮ আগস্ট ২০২২) বেলা ২.০০টার সময় খাগড়াছড়ির সদরের নারাঙহিয়ে থেকে একটি বিক্ষোভ মিছিল বের করা হয়। মিছিলটি জেলা পরিষদ হয়ে স্বনির্ভর বাজারে এসে অমর বিকাশ চাকমা সড়কে সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়।
সমাবেশে বক্তব্য রাখেন, বৃহত্তর পার্বত্য চট্টগ্রাম পাহাড়ি ছাত্র পরিষদ (পিসিপি) জেলা সভাপতি নরেশ ত্রিপুরা, গণতান্ত্রিক যুব ফোরাম-এর জেলা সাধারণ সম্পাদক শুভ চাকমা ও হিল উইমেন্স ফেডারেশন-এর জেলা আহ্বায়ক এন্টি চাকমা।
এন্টি চাকমা বলেন, পাহাড়ে নিপীড়নের মাত্রাকে অধিক থেকে অধিকতর করতে সেনাবাহিনীর পৃষ্ঠপোষকতায় দালাল-সুবিধাবাদীদের দিয়ে মুখোশ বাহিনী সৃষ্টি করে ন্যায্য আন্দোলনকে দমানোর লক্ষ্যে স্বনির্ভর বাজারের নৃশংসক হত্যাকাণ্ড সংঘটিত করা হয়েছিল। ন্যায়সঙ্গত ছাত্র গণ-আন্দোলনের ভয়ে ভীত সন্ত্রস্ত হয়ে শাসকগোষ্ঠী এমন মানবতাবিরোধী কর্মে জড়াতেও কুণ্ঠিত হয়নি।
যুবনেতা শুভ চাকমা বলেন, খুন-গুম করে যদি আন্দোলন দমানো যেত তাহলে ২০১৮ সালের ১৮ আগস্টের সন্ত্রাসী হামলার পর ছাত্রসমাজ হাত গুটিয়ে বসে থাকতো। ছাত্র-যুব নেতাদের রক্তে প্রতিবাদী চেতনার বীজ থাকার ফলে শত অন্যায়-অত্যাচার, দমন-পীড়নের পরও ছাত্র-যুবসমাজ রাজপথে থেকে ন্যায়সঙ্গত আন্দোলন চালিয়ে যাচ্ছে। শত দমন-পীড়ন ও খুন গুমের শিকার হলেও শাসকগোষ্ঠীর হুমকি ও অন্যায় অবিচারের বিরুদ্ধে লড়াই-সংগ্রাম অব্যাহত রেখেছে। কাজেই দমন-পীড়ন চালিয়ে জনগণের ন্যায়সঙ্গত আন্দোলন স্তব্ধ করা যাবে না বলে তিনি সরকার তথা শাসকগোষ্ঠীকে জানিয়ে দেন।
তিনি শাসকগোষ্ঠির দমন-পীড়ন ও অন্যায় অবিচারের বিরুদ্ধে লড়াই-সংগ্রাম জোরদার করতে ছাত্র, যুব ও নারী সমাজের প্রতি আহ্বান জানান।
নরেশ ত্রিপুরা বলেন,পার্বত্য চট্টগ্রামে পাহাড়ি জনগণের অস্তিত্ব রক্ষার আন্দোলন ভেস্তে দিতে স্বনির্ভর-পেরাছড়া এলাকায় রাষ্ট্রীয় বাহিনীর মদদে নির্বিঘ্নে দিবালোকে সন্ত্রাসীরা ব্রাশ ফায়ার করে হত্যাকাণ্ড ঘটিয়েছিল। নৃশংস এই হত্যাকাণ্ডের ৪ বছরেও মূল হোতা ও চিহ্নিত সন্ত্রাসীদের প্রশাসন গ্রেফতার করেনি। খুনি-সন্ত্রাসীরা প্রশাসনের নাকের ডগায় ঘুরে বেড়ালেও তাদের গ্রেফতার না করে বরং আশ্রয়-প্রশয়ে রেখে প্রতিনিয়ত খুন-গুম-অপহরণের মতো অপরাধ কর্মে উৎসাহিত করা হচ্ছে। পার্বত্য চট্টগ্রামে বিগ্রেডিয়ার জেনারেল মোত্তালেব এর মত সেনা কর্মকর্তারা সন্ত্রাসী পুষে রেখে খুন-গুম-অপহরণসহ মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘটনা করলেও আইনের আওতায় এনে বিচার না করে বরং রাষ্ট্র তাদের প্রমোশন দিচ্ছে।
তিনি আরো বলেন, রাষ্ট্র পার্বত্য চট্টগ্রামের সমস্যাকে রাজনৈতিকভাবে সমাধান না করে বরং সামরিক শাসন জারি রেখেছে। এর মাধ্যমে রাষ্ট্রীয় বাহিনী প্রতিনিয়ত মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘটনা ঘটিয়ে চলেছে।
সমাবেশ থেকে অবিলম্বে স্বনির্ভর হত্যাকাণ্ডে সাথে জড়িত মূলহোতা বিগ্রেডিয়ার জেনারেল মোত্তালেব ও তার লেলিয়ে দেয়া চিহ্নিত খুনি-সন্ত্রাসীদের গ্রেফতার ও বিচারের দাবি জানান। একই সাথে বক্তারা পার্বত্য চট্টগ্রাম থেকে সেনা শাসন প্রত্যাহার ও খুনি-সন্ত্রাসীদের সেনা মদদদান বন্ধ করার দাবি করেছেন।
উল্লেখ্য, ২০১৮ সালের ১৮ আগস্ট সকাল ৮টার সময় খাগড়াছড়ি সদরের স্বনির্ভর বাজারে পুলিশ ও বিজিবি সদস্যদের সামনে সেনা মদদপুষ্ট নব্যমুখোশ বাহিনীর সশস্ত্র সন্ত্রাসীরা ভারী অস্ত্রে হামলা চালিয়ে পিসিপি নেতা তপন চাকমা, এল্টন চাকমা, যুব ফোরাম নেতা পলাশ চাকমা এবং সাধারণ পথচারী জিতায়ন চাকমা, রূপম চাকমা ও ধীরাজ চাকমাকে নৃশংসভাবে গুলি করে হত্যা করে। উক্ত ঘটনার কিছু সময় পর সন্ত্রাসীরা একই কায়দায় পেরাছড়ায় বিক্ষোভরত জনতার ওপর সশস্ত্র হামলা চালায়। এতে গুরুতর আহত হয়ে ৭০ বছরের বৃদ্ধ শান কুমার চাকমা হাসপাতালে মারা যান।