মানুষ এখন আকাশে উড়ে বেড়াচ্ছে, পৌঁছে যাচ্ছে সাগরতলে। বাস্তবের বাইরে আছে ভার্চুয়াল জগৎ, যা একসময় কল্পনাও ছিল কষ্টসাধ্য। চারপাশে বিজ্ঞানের বিস্ময়। তবু চোখ ধাঁধানো এসব সৃষ্টির মধ্যে মানুষকে অন্য রকম অনুভূতি এনে দেয় প্রাচীন পৃথিবী, যেন অতীতের কোনো সভ্যতায় আমাদের বিচরণ ছিল। আমরা ছিলাম ‘বিম্বিসার অশোকের ধূসর জগতে’। তাই তো কবি জীবনানন্দ দাশ বলেন, ‘হাজার বছর ধরে আমি পথ হাঁটিতেছি পৃথিবীর পথে।’ অতীতের সভ্যতাগুলো আমাদেরই ফেলে আসা পথ; মানবজাতির সামগ্রিক ভ্রমণের অংশ। এ সময়ে যখন অতীতের কোনো শহর মাটি থেকে মাথা তোলে, তখন আমরাও অন্যমনস্ক হই। সম্প্রতি কাজাখস্তানের কাজাখ স্টেপ এলাকায় আবিষ্কৃত হয় ব্রোঞ্জ যুগের একটি শহর, যা সাড়ে তিন হাজার বছর মাটির নিচে সুপ্ত ছিল। ধুলো-মাটির আবরণ সরে গিয়ে ক্রমেই এটি দৃশ্যমান। গবেষকরা বলছেন, সেমিয়ার্কা নামের স্থানটিতে শহুরে জনপদ ছিল।
সম্প্রতি ইউনিভার্সিটি কলেজ লন্ডনের (ইউসিএল) গবেষকদের নেতৃত্বে একটি আন্তর্জাতিক প্রত্নতাত্ত্বিক দল কাজাখ স্টেপে ব্রোঞ্জ যুগের এ বিশাল বসতির ধ্বংসাবশেষ আবিষ্কার করেন। তাদের ধারণা, সেমিয়ার্কা সম্ভবত বৃহৎ আকারে ব্রোঞ্জ উৎপাদনের জন্য গুরুত্বপূর্ণ আঞ্চলিক কেন্দ্র ছিল, যা এটিকে ইউরেশিয়ার এ অংশে তখন সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ শিল্প কেন্দ্রগুলোর একটি করে তোলে।
এ নিয়ে বিস্তারিত অ্যান্টিকুইটি প্রজেক্ট গ্যালারিতে প্রকাশ হয়েছে। ডারহাম বিশ্ববিদ্যালয় ও কাজাখস্তানের তোরাইঘিরভ বিশ্ববিদ্যালয়ের যৌথ নেতৃত্বে নতুন গবেষণায় সেমিয়ার্কার প্রথম বিস্তৃত প্রত্নতাত্ত্বিক জরিপ উপস্থাপন করা হয়, যা প্রায় ১৪০ হেক্টরজুড়ে একটি এলাকায় পরিকল্পিত বসতি। তোরাইঘিরভ বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষকরা ২০০০-এর দশকের গোড়ার দিকে সেমিয়ার্কাকে প্রথম শনাক্ত করলেও অনেক বিষয় ছিল অজানা। প্রায় ১৬০০ খ্রিষ্টপূর্বাব্দের বসতিটি স্থানীয় যাযাবর গোষ্ঠীগুলোর জীবনযাপন সম্পর্কে বিরল আভাস দেয়।
গবেষণার প্রধান লেখক ইউসিএল প্রত্নতত্ত্ববিদ ড. মিলজানা রাদিভোজেভিচ বলেন, গত কয়েক দশকে এ অঞ্চলে সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য প্রত্নতাত্ত্বিক আবিষ্কারগুলোর একটি এটি। সেমিয়ার্কা তৎকালীন সমাজ সম্পর্কে আমাদের চিন্তাভাবনা বদলে দেয়।
প্রাচীন এ শহরের যা টিকে আছে, তার মধ্যে আছে আয়তাকার মাটির ঢিবির দুটি দীর্ঘ সারি। প্রতিটি প্রায় এক মিটার উঁচু। এসব নিচু ঢাল একসময় বেশ কয়েকটি কক্ষসহ ঘেরা বাড়ির ভিত্তি তৈরি করেছিল। এর কাছাকাছি প্রত্নতাত্ত্বিকরা একটি অনেক বড় ভবনের ধ্বংসাবশেষ শনাক্ত করেন। এ স্থাপনা কী কাজে ব্যবহৃত হতো, জানা যায়নি। তবে এটি হয়তো ধর্মীয় অনুষ্ঠানের জন্য ব্যবহৃত হতো। এ ছাড়া বিনোদন কেন্দ্র বা কোনো প্রভাবশালী পরিবার বা সম্প্রদায়ের প্রধানের বাসস্থানও হতে পারে।
সহ-লেখক ডারহাম বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড্যান লরেন্স বলেন, সেমিয়ার্কার স্থাপত্যের কাঠামো যা দেখেছি, তা বেশ আলাদা। বসতি অনেকটা পরিশীলিত ও পরিকল্পিত।