।। সঞ্জয় কুমার বড়ুয়া, বান্দরবান ।।
ভিটেমাটি থেকে উচ্ছেদ হয়ে গত প্রায় তিন বছর যাবৎ বান্দরবানের নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলার মধ্যম চাক পাড়ায় মানবেতর জীবন কাটছে পাহাড়ি চাক জনগোষ্ঠীর ১৫টি পরিবারের।
ভূমিদস্যুদের হুমকিতে প্রত্যন্ত শুই জাইং চাক পাড়ার নিজেদের বাড়ি আর জুমের জমি ছেড়ে ২০১৭ সালের ফেব্রুয়ারিতে শিশুসহ অন্তত ৮১ জন পালিয়ে আসতে বাধ্য হয় বলে জানান তারা।সেসময় চাক পরিবারের ঘরবাড়ি লুট এবং তাদের মারধর করা হয় বলেও জানিয়েছেন তারা।ক্ষতিগ্রস্তরা দাবি করেন, যে ভূমি দখলকারীরা ক্ষমতাসীন দলের নেতা।অভিযুক্ত ভূমি দখলকারীরা হলেন, নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি এবং নাইক্ষংছড়ি উপজেলা চেয়ারম্যান মো. শফিউল্লাহ এবং বান্দরবান জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও বান্দরবান পার্বত্য জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ক্য শৈ হ্লা।
“আগ্নেয়াস্ত্র এবং ধারালো অস্ত্রসহ আট থেকে দশ জন সন্ত্রাসীর একটি দল আমাদের পাড়ায় আসে, তারা আমাদের মারধর করে এবং পাড়া ছেড়ে চলে যাওয়ার হুমকি দেয়”, বলছিলেন ৭০ বছর বয়সী ভুক্তভোগী থুই হ্লা অং চাক।“আমরা হুমকির মুখে আমাদের গ্রাম ছেড়ে চলে এসেছি এবং এখন মধ্যম চাক পাড়ায় মানবেতর জীবন যাপন করছি”, বলছেন আরেক ভুক্তভোগী তিন সন্তানের মা উ মাই ইয়া চাক।জারুলিয়াছড়ি মৌজার প্রধান মং এয়াই মারমা বলেন,”শফিউল্লাহ এবং ক্য শৈ হ্লা জেলার নাইক্ষ্যংছড়িমৌজা, জারুলিয়াছড়ি মৌজা এবং সোনাইছড়ি মৌজার প্রায় এক হাজার একর জুম জমি দখল করেছে।”“পর্যটন ব্যবসার নামে তারা আমাদের জমি দখল করেছে”, বলছেন মং।নাইক্ষ্যংছড়ি মৌজার প্রধান বাশিং চাক বলেন, “জমি দখলকারীদের ক্রমাগত ভয় দেখানোর কারণে নিরীহ গ্রামবাসী বাড়িঘর ছেড়ে পালিয়ে গেছে”।এ পরিস্থিতিতে, তারা তাদের জীবনের ভয়ে থানায় অভিযোগ করার সাহসও পায়নি, জানিয়েছেন মৌজা প্রধান।যোগাযোগ করা হলে শফিউল্লাহ ১৫ চাক পরিবার উচ্ছেদের বিষয় অস্বীকার করে বলেন, “আমরা সরকারের খাস জমিতে পর্যটনকে সমৃদ্ধ করার কাজ করছি কেবল। “আর এ বিষয়ে কথা বলতে রাজি হননি ক্য শৈ হ্লা।২০ অক্টোবর, ২০১৯, বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী মো. মাহবুব আলী, সচিব মহিবুল হক এবং বাংলাদেশ পর্যটন কর্পোরেশনের চেয়ারম্যান রাম চন্দ্র দাসসহ একটি দল ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন।যোগাযোগ করা হলে, প্রতিমন্ত্রী মো. মাহবুব আলী বলেছেন, আমরা ওই এলাকা পরিদর্শন করেছি এবং সেখানকার সম্ভাব্যতা যাচাইয়ে সম্প্রতি পরামর্শক নিয়োগ দিয়েছি। পর্যটনের কারণে ক্ষুদ্র নৃ গোষ্ঠীর কাউকে জমি থেকে উচ্ছেদ করা হবে না”। মন্ত্রী বলেন, “শফিউল্লাহ এবং ক্য শৈ হ্লা যদি সরকারের নাম ব্যবহার করে শত একর জুমের জমি দখল করে নেয় তবে আমরা তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য স্থানীয় প্রশাসনকে নির্দেশ দেব।”বান্দরবানের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক মো. শফিউল আলম বলেছেন, “নাইক্ষ্যংছড়িতে পর্যটন সংক্রান্ত কোনো মন্ত্রণালয় বা অন্য কোথাও থেকে ভূমি অধিগ্রহণের কোনো চিঠি এখন পর্যন্ত তারা পাননি”।“অপরাধীদের বিরুদ্ধে অভিযোগ দায়ের না করায় পুলিশ কোনও ব্যবস্থা নেয়নি এটি খুবই দুঃখজনক”, বলেন শফিউল।৫ ডিসেম্বর, ২০১৯, স্থানীয়রা বান্দরবান জেলা প্রশাসকের মাধ্যমে শফিউল্লাহ এবং ক্য শৈ হ্লার বিরুদ্ধে প্রধানমন্ত্রীর কাছে একটি স্মারকলিপি পাঠিয়েছিল।চাক জনগোষ্ঠীর নেতা থোয়াই ক্য জাই চাক জানান, পার্বত্য চট্টগ্রাম শান্তি চুক্তি স্বাক্ষরিত হওয়ার পরে নাইক্ষংছড়ির বাদু্রঝিরি চাক পাড়া, লং-গদুচাক পাড়া এবং শুই জাইং চাক পাড়া থেকে কমপক্ষে ৫০ চাক পরিবারকে উচ্ছেদ করা হয়েছে।থোয়াই বলেন, “স্থানীয় প্রশাসন ক্ষমতাসীন দলের নেতাদের আমাদের জমি দখল করতে সহায়তা করছে বলে আমরা সত্যিই আতঙ্কিত।”তিনি আরও বলেন, উপজেলার অধিকাংশ চাক সম্প্রদায়ের মানুষও উচ্ছেদের ভয়ে আছেন।
সূত্র : The Daily star বাংলা