কল্পনা চাকমার অবস্থান সম্পর্কে তার ভাইকে জিজ্ঞাসাবাদ করেছে পুলিশ…
রাঙামাটি প্রতিনিধি ।। রাঙামাটি জেলা পুলিশের বিশেষ শাখার এক কর্মকর্তা প্রায় ২৫ বছর আগে সেনাবাহিনীর কমাণ্ডার লে. ফেরদৌস গং কর্তৃক অপহৃত হিল উইমেন্স ফেডারেশনের নেত্রী কল্পনা চাকমার অবস্থান সম্পর্কে তার বড় ভাই কালিন্দী কুমার চাকমাকে জিজ্ঞাসাবাদ করেছেন।
জানা গেছে, গতকাল মঙ্গলবার (১৬ ফেব্রুয়ারি ২০২১) বেলা আড়াইটার দিকে জেলা পুলিশের বিশেষ শাখার উপ-পরিদর্শক মতিউর রহমান কালিন্দী কুমার চাকমাকে বাঘাইছড়ি ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান সুনীল বিহারী চাকমার বাসায় ডাকেন। তিনি সেখানে গেলে পুলিশ কর্মকর্তা মতিউর রহমান তাঁর কাছ থেকে কল্পনা চাকমার বর্তমান অবস্থান সম্পর্কে কোনো তথ্য আছে কিনা জিজ্ঞাসা করেন। তাঁকে আধ ঘন্টারও বেশি পর্যন্ত জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়।
তাঁর কাছ থেকে জানতে চাওয়া হয়, “কল্পনা চাকমা যে ভারতের মিজোরামে নাগরিকত্ব নিয়েছেন সে ব্যাপারে পারিবারিকভাবে তারা কিছু জানেন কিনা”? এসময় পুলিশের পক্ষ থেকে “কল্পনা চাকমা বেঁচে আছেন” বলেও তাঁকে জানানো হয়!
কালিন্দী কুমার চাকমা পুলিশ অফিসারকে বলেন, ‘অপহৃত হওয়ার পর থেকে তাদের কাছে কল্পনা চাকমা বিষয়ে কোনও তথ্য নেই। দীর্ঘ প্রায় ২৫ বছর ধরে তাঁরা তাকে সন্ধান করে যাচ্ছেন। দেশের একজন নাগরিক হিসেবে তার সন্ধান দেওয়ার দায়িত্ব সরকারের’।
এদিকে, সচেতন মহল বলছেন, কল্পনা অপহরণ ঘটনা নিয়ে আদালতে মামলা চলমান রয়েছে। পুলিশ যদি কল্পনা চাকমার খোঁজ পেয়ে থাকে তাহলে পুলিশের উচিত লিখিতভাবে আদালতকে জানানো। তা না করে জিজ্ঞাসাবাদের নামে তার ভাইকে (মামলার বাদী) অহেতুক হয়রানি করা হচ্ছে কেন?
উল্লেখ্য, ১৯৯৬ সালের ১২ জুন হিল উইমেন্স ফেডারেশনের তৎকালীন সাংগঠনিক সম্পাদক কল্পনা সপ্তম জাতীয় নির্বাচনের কয়েক ঘন্টা আগে রাঙামাটির বাঘাইছড়ির নিউ লালিয়াঘোনার নিজ বাড়ি থেকে অপহৃত হন। এ অপহরণ ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী ছিলেন তার ভাই কালিন্দী কুমার চাকমা। তিনি অপহরণকারীদের তিন জনকে চিনতে পারেন। এরা হলেন কজইছড়ি আর্মি ক্যাম্পের সেই সময়কার কমাণ্ডার লে. ফেরদৌস, ভিডিপি সদস্য নুরুল হক ও সালেহ আহমেদ।
অপহরণ ঘটনার পর কালিন্দী কুমার চাকমা উক্ত তিন জনের নামে বাঘাইছড়ি থানায় মামলা দায়ের করেন। কিন্তু তৎকালীন থানার ওসি পরিকল্পিতভাবে অপহরণকারীদের নাম বাদ দিয়ে এফ.আই.আর (ফার্স্ট ইনফরমেশন রিপোর্ট) বা এজাহার লিপিবদ্ধ করেন।
উক্ত মামলার ৩৯তম তদন্ত কর্মকর্তা রাঙামাটি পুলিশ সুপার সাঈদ তারিকুল হাসান ২০১৬ সালের ৭ সেপ্টেম্বর আদালতে মামলাটির চূড়ান্ত প্রতিবেদন দাখিল করেন। এতে তিনি বলেন “আমার তদন্তকালে ভিকটিমের অবস্থান নিশ্চিত না হওয়ায় তাহাকে উদ্ধার করা সম্ভব হয় নাই। এই লক্ষে বিশ্বস্ত গুপ্তচর নিয়োগ ছাড়াও বাদীর পক্ষে এবং এলাকার লোকজনদের সহায়তা কামনা এবং বিভিন্ন মাধ্যমে চেষ্টা করিয়াও ভিক্টিম কল্পনা চাকমাকে উদ্ধার এবং মামলার রহস্য উদঘাটন হয় নাই”।
উক্ত চূড়ান্ত প্রতিবেদনে বাদী কালিন্দী কুমার চাকমা নারাজি আবেদন করায় মামলাটি বর্তমান পর্যন্ত চলমান রয়েছে।
কল্পনা চাকমার পরিবারের লোকজনের দাবি, অভিযুক্ত লে. ফেরদৌস, ভিডিপি সদস্য নুরুল হক এবং পুলিশ কনস্টেবল সালেহ আহমেদকে গ্রেফতার করে জিজ্ঞাসাবাদ করা হলে এতদিন নিশ্চয় কল্পনা চাকমা সম্পর্কে বিস্তারিত জানা যেতো। কিন্তু পুলিশ অভিযুক্ত কাউকে গ্রেফতার করেনি।