জাতিসংঘের নির্যাতন বিরোধী কমিটি ‘কমিটি এগেইনস্ট টর্চার’ (CAT) বলেছে, সাম্প্রতিক কয়েক মাসে বাংলাদেশে, বিশেষ ক্ষেত্রে আইন-প্রয়োগকরী বাহিনীর সাথে যুক্ত কথিত ক্রসফায়ার বা বন্দুকযুদ্ধে ৪২৯ জন মানুষকে হত্যা করা হয়েছে। হিউম্যান রাইটস সাপোর্ট সোসাইটি’র নতুন এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে যে, গত বছর অন্তত ৯২ ব্যক্তি জোরপূর্বক নিখোঁজের শিকার হয়েছেন। নিখোঁজের শিকারদের মধ্যে, ৩৮ জনকে নিখোঁজ হওয়ার পর আদালতে হাজির করা হয়েছে, ১৪ জনকে মৃত অবস্থায় পাওয়া গেছে, ১৭ জন বাড়িতে ফিরেছেন এবং ২৩ জন এখনও নিখোঁজ রয়েছেন।
প্রতিবেদনটি, অধিকাংশ ক্ষেত্রে আইনপ্রয়োগকারী বাহিনীর সাথে যুক্ত কথিত ক্রসফায়ার বা বন্দুকযুদ্ধে ৪২৯ জনের হত্যাসহ আরও কয়েকটি মানবাধিকার লংঘনের কথাও উল্লেখ করে এবং উল্লেখ করে যে, পুলিশ কর্তৃক নির্যাতনের ফলে ৭ ব্যক্তি মৃত্যুবরণ করেছেন, ৫ জনকে গুলি করে হত্যা করা হয়েছে এবং ৩৩ জন পুলিশী হেফাজতে মারা যান। যদিও এই প্রতিবেদনের তথ্যসমূহ নিজেরাই এক একটা যথেষ্ট ভয়াবহ, বাস্তবতা হচ্ছে যে, এটা কিন্তু কয়েকটি প্রতিবেদনের মধ্যে একটি যা একইসঙ্গে একটি অস্বাভাবিক চিত্র ফুটিয়ে তোলে।
মাত্র এক মাস আগে, জাতিসংঘের নির্যাতন বিরোধী কমিটি ‘ব্যাপক ও নিত্যনৈমিত্তিক নির্যাতন ও দুর্ব্যবহারের অভিযোগ করে ইহার প্রাপ্ত তথ্য নিয়ে’ উদ্বেগ প্রকাশ করেছে, যা দেশে সংঘটিত হয়ে চলেছে। ইহা কথিত মানবাধিকার লংঘনের ঘটনাসমূহের ক্ষেত্রে তদন্তের অভাবে হতাশাও ব্যক্ত করেছে।
এই ধরনের অভিযোগ বছর বছর ধরে বজায় রয়েছে এবং একইভাবে সরকারের অস্বীকৃতিও রয়েছে। কয়েক বছর যাবৎ আমরা শুনেছি, আইনপ্রয়োগকারী সংস্থাসমূহ একইভাবে অধিকার লংঘনের ঘটনার সাথে কোন প্রকার জড়িত থাকা অস্বীকার করে আসছে, এমনকি ক্ষতিগ্রস্তদের পরিবারের সদস্যরা প্রত্যক্ষভাবে তাদের সম্পৃক্ততা দেখার দাবি করলেও।
এমনকি যদি সংস্থাগুলোকে সন্দেহের সুবিধা আমাদেরকে দিতে হয়, বাস্তবতা হচ্ছে যে, নাগরিকদের অধিকার রক্ষা করা এবং যারা প্রকৃতপক্ষে জড়িত তাদের চিহ্নিত করার জন্য অধিকার লংঘনের সকল অভিযোগ তদন্ত করা রাষ্ট্রেরই দায়িত্ব। একটি গুপ্ত গোষ্ঠী কি দেশের মধ্যে ক্রিয়াশীল রয়েছে যারা এটা করছে? এই প্রশ্নের জবাব খুঁজের বের করাও রাষ্ট্রের দায়িত্ব। আইন-প্রয়োগকারী সংস্থার বিশ্বাসযোগ্যতার ক্ষেত্রেও তাই।
একটা সময় যখন অনেক অর্জনের জন্য বাংলাদেশ প্রশংসিত হচ্ছে, দেশটির মানবাধিকার অবস্থা তখন আন্তর্জাতিকভাবে ইহার ভাবমূর্তিকে নিষ্প্রভ করে দিচ্ছে। সরকারের এটা চিহ্নিত করা উচিত এবং এই সংকট মোকাবেলার জন্য জরুরি পদক্ষেপ গ্রহণ করা উচিত।
অপরদিকে, কাপেং ফাউন্ডেশনের প্রতিবেদন অনুসারে, কেবল জানুয়ারি-অক্টোবর ২০১৯ এর মধ্যে পার্বত্য চট্টগ্রামে ক্রসফায়ারের নামে ৭টি বিচার-বহির্ভূত হত্যাকান্ড ঘটেছে। একইভাবে, সাদা পোশাকধারী আইনপ্রয়োগকারী ও নিরাপত্তা বাহিনী কর্তৃক ৪ ব্যক্তি জোরপুর্বক নিখোঁজের শিকার হয়েছেন, যাদের মধ্যে ২ জনকে অজ্ঞাত স্থানে আটকাবস্থায় রাখার কয়েকদিন পর মুক্তি দেওয়া হয়েছে, কিন্তু দুই ব্যক্তি এখনও নিখোঁজ অবস্থায় রয়েছে।
সূত্র: দ্য ডেইলি স্টার, ৩০ সেপ্টেম্বর ২০১৯ এবং কাপেং ফাউন্ডেশনের তথ্য-বিমিময় রিপোর্ট, ১৬ অক্টোবর ২০১৯