বৌদ্ধরা বিভিন্ন রকমের ধর্মীয় উৎসব ও অনুষ্ঠান পালন করে থাকে। ধর্মীয় উৎসব ও অনুষ্ঠানের মাধ্যমে পুণ্য অর্জন হয়। পুণ্য দ্বারা সংসার জীবনে সুখ আসে। এজন্য বৌদ্ধরা শ্রদ্ধার সাথে বিভিন্ন পুণ্য তিথি পালন করে।ধর্মীয় উৎসব সম্পর্কে তোমরা দ্বিতীয় ও তৃতীয় শ্রেণিতে জেনেছ। এখন তোমরা ধর্মীয় আচার-অনুষ্ঠান সম্পর্কে জানবে। উৎসবের পাশাপাশি ধর্মীয় অনুষ্ঠান বৌদ্ধধর্মে প্রচলিত। যেমন— সংঘদান, অষ্টপরিষ্কার দান, প্রব্রজ্যা, উপসম্পদা, প্রবারণা এবং কঠিন চীবর দান প্রভৃতি। পরিত্রাণ ও নবরত্ন সূত্র পাঠ, বহুচক্র মেলাও ধর্মীয় উৎসব ও অনুষ্ঠানের অন্তর্গত। এ ছাড়া পরিবাস বা ওয়াইক, জন্ম-জয়ন্তী, অন্ত্যেষ্টিক্রিয়া, আরও অনেক রকম ধর্মীয় আচার-অনুষ্ঠান পালিত হয়।
বৌদ্ধরা বুদ্ধের প্রবর্তিত ধর্মের অনুসারী। এজন্য বৌদ্ধরা সুখ লাভের আশায় বিভিন্ন রকমের ধর্মীয় উৎসব ও অনুষ্ঠান করে থাকে। এসব শুভ কর্মের দ্বারা মন হতে পাপ দূরীভূত হয়। মনে পুণ্য সঞ্চিত হয়। পুণ্য প্রভাবে মানুষ দুঃখ হতে মুক্তি লাভ করতে সক্ষম হয়।প্রতিটি বিহারে পূর্ণিমার দিন বিভিন্ন ধর্মীয় অনুষ্ঠান হয়। পূর্ণিমা ছাড়াও অন্যান্য পার্বণ দিনেও বিহারে ধর্মীয় অনুষ্ঠান হয়। পারিবারিকভাবে সংঘদান, অষ্টপরিষ্কার দান, প্রব্রজ্যাসহ আরও নানা অনুষ্ঠান হয়ে থাকে। এসব উৎসব অনুষ্ঠানে বিহারে কিংবা গৃহে অনেক লোকের সমাগম হয় । এসব উৎসব অনুষ্ঠানে যোগদান করলে একজনের সাথে অন্যজনের সাক্ষাৎ হয়। সাক্ষাতে কুশল বিনিময় হয়। ভাব বিনিময় হয়। এতে জ্ঞাতি মিলন হয়। স্বজন পরিজনসহ নিজেদের মধ্যে সৌহার্দ্যভাব সৃষ্টি হয়। নিজেদের মধ্যে মৈত্রীভাব জাগ্রত হয়। সৌহার্দ্যভাব সৃষ্টি হলে সমাজের বিভিন্ন সমস্যা দূরীভূত হয়ে শান্তি প্রতিষ্ঠা হয়। নিজেদের মনের মলিনতা দূর হয়। মন উদার হয়। সামাজিক ঐক্য- সংহতি প্রতিষ্ঠিত হয়। এ কারণে প্রত্যেককে নানা ধর্মীয় অনুষ্ঠান, পূজা-পার্বণ ও আচার- অনুষ্ঠানে যোগদান করা কর্তব্য।
সংঘদান:
বৌদ্ধদের ধর্মীয় অনুষ্ঠানের মধ্যে সংঘদান অন্যতম। বৌদ্ধরা যেকোনো শুভ ও মঙ্গল কর্মে সংঘদান করে থাকে। ভগবান বুদ্ধ সংঘকে বিশুদ্ধ ক্ষেত্র বলেছেন। কারণ তাঁরা শীলবান ও ঋজু প্রতিপন্ন। তাই সংঘকে দান করলে মহাফল লাভ হয়। কেউ মারা গেলে মৃত ব্যক্তির উদ্দেশ্যেও সংঘদান করা হয়। এ ছাড়া বিবাহ অনুষ্ঠান, নব জাতকের অন্নপ্রাশনের সময়, প্রব্রজ্যা অনুষ্ঠানে সংঘদান করা হয়। এ দান বছরের যেকোনো সময় করা যায়। সংঘদান উপলক্ষে কমপক্ষে ৪ জন ভিক্ষুকে নিমন্ত্রণ বা ফাং করতে হয়।
সংঘদানে নিমন্ত্রিত ভিক্ষুসংঘের মধ্যে যিনি বয়োজ্যেষ্ঠ তিনিই পঞ্চশীল প্রদান করেন। সংঘদান উৎসবের মন্ত্র হলো “ইমং ভিক্খং সপরিকখারং ভিকখু সংঘস দেমা পূজেমা”— মন্ত্র বলে সংঘদান উৎসর্গ করেন। সংঘদান অনুষ্ঠানে জ্ঞানী পণ্ডিত ভিক্ষুরা সংঘদানের তাৎপর্য নিয়ে ধর্মদেশনা করেন। সংঘদানের পুণ্য ফল ব্যাখ্যা করেন ।যেকোনো ধর্মীয় অনুষ্ঠানের জন্য বিভিন্ন উপকরণের প্রয়োজন হয়। সংঘদানের জন্যও দাতারা ভিক্ষুদের ব্যবহার উপযোগী বিভিন্ন দানের উপকরণ দিয়ে থাকে। অনেকে সংঘদানের সময় ভিক্ষুদের নিত্য প্রয়োজনীয় অষ্টপরিষ্কারও দান করে থাকেন ।