নিজস্ব প্রতিবেদক।। খাগড়াছড়ির মানিকছড়িতে পার্বত্য চট্টগ্রামে পাক (পাকিস্তান) আগ্রাসনের ৭৫ বছর উপলক্ষে আজ ২০ আগস্ট ২০২২, শনিবার সকাল ১০টায় ইউপিডিএফ, গণতান্ত্রিক যুব ফোরাম (ডিওয়াইএফ) ও পাহাড়ি ছাত্র পরিষদ (পিসিপি)-এর উদ্যোগে আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে।
“দেশ বিভাগের” নামে পাহাড়িদের সাথে প্রতারণার প্রকৃত ঘটনা উদ্ঘাটন করুন, ভূমিদস্যুদের আগ্রাসন, রাষ্ট্রীয় দমন-নিপীড়ন ও জাতীয় অস্তিত্ব ধ্বংসের ষড়যন্ত্র রুখে দিন” এই আহ্বানে অনুষ্ঠিত আলোচনা সভায় পিসিপি’র মানিকছড়ি থানা শাখার সাংগঠনিক সম্পাদক ঈশান মারমার সঞ্চালনায় ও ইউপিডিএফ’র মানিকিছড়ি ইউনিটের সমন্বয়ক ক্যহ্লাচিং মারমার সভাপতিত্বে বক্তব্য রাখেন, গণতান্ত্রিক যুব ফোরামের মানিকছড়ি উপজেলা সভাপতি অংচাই রোয়াজা, পিসিপির খাগড়াছড়ি জেলা শাখার সদস্য অংসালা মারমা ও পিসিপি’র মানিকছড়ি থানা শাখার সভাপতি অংক্য মারমা।
বক্তারা বলেন, আজকের দিনটি পার্বত্য চট্টগ্রামের জন্য এক অভিশপ্ত দিন। আজ থেকে ৭৫ বছর আগে ১৯৪৭ সালের আজকের এই দিনে (২০ আগস্ট) ব্রিটিশ ঔপনিবেশিক শাসন থেকে সবেমাত্র মুক্তি পাওয়া পাকিস্তান সরকার বেলুচ রেজিমেন্টকে দিয়ে সশস্ত্র আগ্রাসন চালিয়ে পার্বত্য চট্টগ্রাম দখল করে নিয়েছিল। আর এর পরবর্তী থেকে পার্বত্য চট্টগ্রামের জনগণের ওপর নিপীড়ন-নির্যাতনের বেদনাবিধুর ইতিহাসের সূচনা হয়।
বক্তারা আরো বলেন, পার্বত্য চট্টগ্রাম এক সময় স্বাধীন রাজ্য ছিলো। কিন্তু ১৮৬০ সালে ব্রিটিশ ঔপনিবেশিক শাসকরা ‘জেলায়’ রূপান্তরের মাধ্যমে এই স্বাধীন রাজ্যের মর্যাদা কেড়ে নিয়েছিলো। আর এই ব্রিটিশ শাসকরাই দ্বি-জাতিতত্ত্বের ভিত্তিতে দেশবিভাগের নামে পরিকল্পিতভাবে পার্বত্য চট্টগ্রামকে মুসলিম অধ্যুষিত পাকিস্তানে অন্তর্ভুক্ত করেছিলো। যদিও পার্বত্য চট্টগ্রামের জনগণ তা মানেনি।
পার্বত্য চট্টগ্রামে আজকের এই দুর্দশার জন্য ব্রিটিশ ঔপনিবেশিক শাসকরাই দায়ি মন্তব্য করে বক্তারা বলেন, দেশ বিভাগের নামে পার্বত্য চট্টগ্রামের পাহাড়িদের সাথে যে প্রতারণা করা হয়েছিল সে বিষয়ে নতুন প্রজন্মকে প্রকৃত কারণ উদ্ঘাটন করতে হবে।
বক্তারা বলেন, ১৯৭১ সালে রক্তক্ষয়ী যুদ্ধের মাধ্যমে পাকিস্তানের কবল থেকে বাংলাদেশ স্বাধীনতা লাভ করলেও পার্বত্য চট্টগ্রামে নিপীড়ন-নির্যাতন বন্ধ হয়নি। স্বাধীনতার পর ’৭২ সালে রচিত সংবিধানে পাহাড়ি জনগণসহ এদেশে বসবাসরত ভিন্ন ভাষাভাষী জাতিসত্তাগুলোর ওপর উগ্রবাঙালি জাতীয়তা চাপিয়ে দেওয়া হয় এবং পার্বত্য চট্টগ্রামে সেনাবাহিনী মোতায়েন করা হয়। যার ফলে পাহাড়ি জনগণের ওপর পাকিস্তানি আমল থেকেও নিপীড়নের মাত্রা বৃদ্ধি পায়। ’৮০’র দশকে চার লক্ষাধিক বাঙালি সেটলারকে অনুপ্রবেশ ঘটিয়ে পাহাড়িদের জায়গা-জমি কেড়ে নেওয়া হয়। সামরিক শাসনের মাধ্যমে চালানো হয় হত্যাযজ্ঞ। যার কারণে লক্ষ লক্ষ পাহাড়িকে নিজ বসতভিটা থেকে উচ্ছেদের শিকার হতে হয়। ১৯৯৭ সালে জনসংহতি সমিতির সাথে সরকারের চুক্তি স্বাক্ষর হওয়ার পরও নিপীড়নের মাত্রা বেড়েছে বৈ কমেনি।
বক্তারা আরো বলেন, বর্তমান ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ সরকার একের পর এক কালাকানুন জারির মাধ্যমে পাহাড়ি জনগণকে নিশ্চিহ্ন করে দেয়ার পাঁয়তারা চালাচ্ছে। ২০১১ সালের ৩০ জুন সংবিধানের পঞ্চদশ সংশোধনীর মাধ্যমে পূনরায় বাঙালি জাতীয়তা আরোপ এবং ২০১৫ সালে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রণালয়ের দমনমূলক ১১ নির্দেশনা জারির মাধ্যমে পার্বত্য চট্টগ্রামে নিপীড়ন-নির্যাতন আগের চেয়েও ভয়াবহ আকার ধারণ করেছে। প্রতিনিয়ত বিচার বহির্ভুত হত্যা, খুন-অপহরণ, ভূমি বেদখল, নারী নির্যাতন যেন নিত্যনৈমিত্তিক ঘটনায় পরিণত হয়েছে।
বক্তারা রাষ্ট্রীয় দমন-পীড়ন ও অস্তিত্ব ধ্বংসের ষড়যন্ত্রের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ানোর আহ্বান জানিয়ে বলেন, পার্বত্য চট্টগ্রামে পাহাড়ি জনগণের ওপর চলমান অন্যায়-অবিচারের বিরুদ্ধে ছাত্র-যুব-জনতাকে ঐক্যবদ্ধভাবে রুখে দাঁড়াতে হবে এবং আন্দোলনে সামিল হতে হবে।