চিম্বুকে হোটেল নির্মাণ বিষয়ে বান্দরবান জেলা পরিষদ চেয়ারম্যানের মিথ্যাচারের প্রতিবাদ তিন সংগঠনের

বান্দরবানের চিম্বুক পাহাড়ে ম্রো জনগোষ্ঠীদের ভোগদখলীয় আনুমানিক এক হাজার একর জমি জোরপূর্বক দখল করে সেনাবাহিনীর প্রত্যক্ষ তত্ত্বাবধানে সিকদার গ্রুপের অন্যতম প্রতিষ্ঠান ‘আর এন্ড আর হোল্ডিংস’ কর্তৃক পাঁচতারকা হোটেল ও বিনোদন পার্ক নির্মাণ বিষয়ে বান্দরবান জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান ক্য শৈ হ্লা গত ২২ নভেম্বর সংবাদ সম্মেলনে প্রকল্পটির পক্ষে সাফাই গেয়ে যে বক্তব্য দিয়েছেন তা মনগড়া ও মিথ্যাচার মন্তব্য করে এর নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়েছে বৃহত্তর পার্বত্য চট্টগ্রাম পাহাড়ি ছাত্র পরিষদ, গণতান্ত্রিক যুব ফোরাম ও হিল উইমেন্স ফেডারেশন।

আজ বুধবার (২৫ নভেম্বর ২০২০) সংবাদ মাধ্যমে প্রেরিত এক বিবৃতিতে পাহাড়ি ছাত্র পরিষদের সভাপতি বিপুল চাকমা, গণতান্ত্রিক যুব ফোরামের সভাপতি অংগ্য মারমা ও হিল উইমেন্স ফেডারেশনের সভাপতি নিরূপা চাকমা এই নিন্দা ও প্রতিবাদ জানান।

বিবৃতিতে তারা বলেন, উক্ত সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান ক্য শৈ হ্লা একদিকে ‘চিম্বুকের নাইতং পাহাড়ে বর্তমানে ও পূর্বে কোনো ম্রো বসতি ছিল না’ বলে উল্লেখ করেছেন, অপরদিকে তিনি বলেছেন, “উক্ত জমিতে পরিষদের তত্ত্বাবধানে কৃষি প্রযুক্তি ও উন্নত চাষাবাদ পদ্ধতি প্রদর্শনীর মাধ্যমে সেখানকার স্থানীয় জনগণের কৃষিভিত্তিক জীবিকা নির্বাহের পথ সুগম করার লক্ষ্যে ২০১১ সালে স্থানীয় ম্রো নেতৃবৃন্দের সাথে আলাপ-আলোচনার মাধ্যমে ২০ (বিশ) একর ৩য় শ্রেণীর ভূমি পরিষদের নামে বন্দোবস্তি নেওয়ার জন্য প্রক্রিয়া গ্রহণ করা হয়।”

জেলা পরিষদ চেয়ারম্যানের পরষ্পর বিপরীতমুখী এই দ্বিচারিতামূলক বক্তব্যের নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়ে তিন সংগঠনের নেতৃবৃন্দ বলেন, ‘এটা স্পষ্ট যে শাসকগোষ্ঠীকে লাভবান করতে এবং পরিষদে নিজের চেয়ার আরও পাকাপোক্ত করতে তিনি এই সংবাদ সম্মেলন করেছেন’। নেতৃবৃন্দ জেলা পরিষদ চেয়ারম্যানের এই উদ্দেশ্যপ্রনোদিত বক্তব্য প্রত্যাহারের আহ্বান জানান।

বিবতিতে নেতৃবৃন্দ আরো বলেন,  সংবাদ সম্মেলনে জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান ক্য শৈ হ্লা উক্ত জমিটি জেলা পরিষদের নামে এখনো বন্দোবস্তি হয়নি বলে উল্লেখ করলেও, কোন অধিকারে জেলা পরিষদ সেনাবাহিনীর সাথে চুক্তি করে উক্ত জমি ৪০ বছরের জন্য তাদের কাছে লীজ দিয়েছে তা জানাতে পারেননি। আর সেনাবাহিনীর সাথে চুক্তিতে ১৮ টি শর্তের কথা বলা হলেও, মাত্র ৬টি শর্ত প্রকাশ করেছেন। বাকী শর্তগুলো কী ছিল তা যথেষ্ট সন্দেহ ও আতঙ্ক উদ্রেক করে।

বিবৃতিতে তিন সংগঠনের নেতৃবৃন্দ চিম্বুক পাহাড়ে পাঁচতারকা হোটেল ও বিনোদন পার্ক নির্মাণ প্রকল্পটি বাতিলের দাবি জানিয়ে বলেন, ইতিমধ্যে চিম্বুক পাহাড়ে ম্রোদের দৈনন্দিন কাজে বাধা প্রদান করা হচ্ছে এবং সীমানা পিলার ও খুঁটি গেড়ে প্রকল্পটি বাস্তবায়নের কাজ আরম্ভ করা হয়েছে বলে আমরা স্থানীয় সূত্রে জানতে পেরেছি। এমতাবস্থায়, আমরা বান্দরবান জেলা পরিষদ ও সেনাবাহিনীর মধ্যেকার সম্পাদিত চুক্তি বাতিল পূর্বক বান্দরবানের নাইতং পাহাড়ে ম্রোদের উচ্ছেদ করে পাঁচতারকা হোটেল নিমার্ণ ও বিনোদন পার্ক নিমার্ণ প্রকল্প বন্ধ করার এবং স্থানীয় ম্রো জাতিসত্তাদের নিজ ভূমিতে শান্তিপূর্ণ বসবাসের নিশ্চয়তা প্রদানের আহ্বান জানাচ্ছি।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *