খাগড়াছড়ি ও বান্দরবানে পাহাড়ি স্কুলছাত্রীদের ওপর যৌন নিপীড়নের নিন্দা ও প্রতিবাদ

খাগড়াছড়ির মানিকছড়িতে দশম শ্রেণীতে পড়ুয়া পাহাড়ি স্কুলছাত্রীকে সেটলার কর্তৃক ধর্ষণ চেষ্টা ও বান্দরবানের রুমায় প্রধান শিক্ষক কর্তৃক এক পাহাড়ি ছাত্রীকে ধর্ষণ ও ধর্ষণের ভিডিও ধারণ করে ব্ল্যাকমেইল ও মহালছড়িতে শিক্ষক কর্তৃক ছাত্রীকে যৌন হয়রানির ঘটনায় তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়েছে হিল উইমেন্স ফেডারেশন (এইচডব্লিউএফ) ও বৃহত্তর পার্বত্য চট্টগ্রাম পাহাড়ি ছাত্র পরিষদ (পিসিপি)।

আজ সোমবার (২৭ সেপ্টেম্বর ২০২১) হিল উইমেন্স ফেডারেশনের খাগড়াছড়ি জেলা শাখা আহ্বায়ক এন্টি চাকমা ও পাহাড়ি ছাত্র পরিষদের খাগড়াছড়ি জেলা সভাপতি সমর চাকমা সংবাদ মাধ্যমে দেওয়া যৌথ বিবৃতিতে এই নিন্দা ও প্রতিবাদ জানান।

বিবৃতিতে নেতৃদ্বয় বলেন, পার্বত্য চট্টগ্রামসহ সারাদেশে নারীদের উপর যেভাবে ধর্ষণ ও নিপীড়নের মাত্রা বৃদ্ধি পাচ্ছে তা উদ্বেগজনক। শিক্ষকের হাত থেকে পর্যন্ত রেহাই পাচ্ছে না নারী শিক্ষার্থীরা। এমনকি নারী শিশুরাও রক্ষা পাচ্ছে না এসব নিপীড়ন থেকে।

নেতৃদ্বয় পার্বত্য চট্টগ্রামের সাম্প্রতিক যৌন নিপীড়নের চিত্র তুলে ধরে বলেন, বান্দরবানের রুমায় এক ছাত্রীকে ধর্ষণ ও ধর্ষণের ভিডিও ধারণ করে ব্ল্যাকমেইল করার অভিযোগে গত ২৪ সেপ্টেম্বর পুলিশ রুমা জুনিয়র হাইস্কুলের প্রধান শিক্ষক সমর কান্তি দত্তকে গ্রেফতার করেছে। গত ২৫ সেপ্টেম্বর খাগড়াছড়ির মানিকছড়িতে মো. হোসেন উদ্দিন নামে এক সেটলার কর্তৃক ধর্ষণ চেষ্টার শিকার হয়েছেন দশম শ্রেণীতে পড়ুয়া এক পাহাড়ি ছাত্রী। আজ ২৭ সেপ্টেম্বর এলাকাবাসী তাকে আটক করে পুলিশে সোপর্দ করেছে। অপরদিকে খাগড়াছড়ির মহালছড়ি উপজেলার সিঙ্গিনালা উচ্চ বিদ্যালয়ের শিক্ষক হরি রঞ্জন দে’র বিরুদ্ধে যৌন হয়রানির অভিযোগ করেছেন এক ছাত্রী।  

নেতৃদ্বয় ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, পাহাড়ি স্কুল-কলেজের ছাত্রী ও নারীরা প্রতিনয়ত কখনো সেটলার বাঙালি, কখনো শিক্ষক, কখনো রাষ্ট্রীয় বাহিনী কর্তৃক ধর্ষণ, ধর্ষণ চেষ্টা ও নিপীড়নের শিকার হচ্ছেন। কিন্তু এসব ঘটনার সঠিক বিচার ও অপরাধীদের দৃষ্টান্তমূলক সাজা হচ্ছে না। কিছু অপরাধীকে গ্রেফতার করা হলেও ধর্ষণের ঘটনায় মেডিকেল রিপোর্টের উপর গোপন নিষেধাজ্ঞা জারি থাকার কারণে সহজেই জামিনে মুক্তি পেয়ে যাচ্ছে। অনেকে ক্ষেত্রে রাষ্ট্র ও তার প্রশাসন এসব অপরাধীদের আশ্রয়-প্রশ্রয় দিয়ে থাকে। ফলে অপরাধীরা আরো উৎসাহিত হয়ে নতুন করে এসব অপরাধে জড়িয়ে পড়ছে।

বিবৃতিতে তারা বলেন, সমতলে ধর্ষণের মতো জঘন্য অপরাধের বিচার হলেও পাহাড়ের ক্ষেত্রে তার উল্টোটাই ঘটে। এ যাবত যত পাহাড়ি নারী খুন, ধর্ষণের শিকার হয়েছেন তার কোন ঘটনারই সঠিক বিচার হয়নি এবং অপরাধীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দেওয়া হয়নি। গোপন নিষেধাজ্ঞার কারণে ধর্ষণের ঘটনায় মেডিকেল রিপোর্টে নেগেটিভ রিপোর্ট দেয়ার কারণে অপরাধীরা সহজেই পার পেয়ে যায়।

নেতৃদ্বয় বান্দরবানে ছাত্রীকে ধর্ষণ ও ধর্ষণের ভিডিও ধারণে অভিযুক্ত শিক্ষক সমর কা্ন্তি দত্ত, মানিকছড়িতে ছাত্রীকে ধর্ষণের চেষ্টাকারী মো. হোসেন উদ্দিনের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি এবং  মহালছড়িতে ছাত্রীকে যৌন হয়রানির ঘটনায় অভিযুক্ত শিক্ষক হরি রঞ্জন দে’কে আইনের আওতায় আনার দাবি জানান। একই সাথে তারা পার্বত্য চট্টগ্রামে ধর্ষণের মেডিকেল রিপোর্টের উপর গোপন নিষেধাজ্ঞা তুলে নেয়াসহ এ যাবত সংঘটিত ধর্ষণ-খুনের ঘটনা সুষ্ঠু তদন্ত সাপেক্ষে সঠিক বিচার ও ঘটনায় জড়িত অপরাধীদের দৃষ্টান্তমূলক সাজা দেয়ারও আহ্বান জানিয়েছেন।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *