আজ ইউপিডিএফের ২২তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী

আজ ২৬ ডিসেম্বর ২০২০ পার্বত্য চট্টগ্রামে পূর্ণস্বায়ত্তশাসনের দাবিতে আন্দোলনরত রাজনৈতিক দল ইউনাইটেড পিপলস ডেমোডিক্রেটিক ফ্রন্ট (ইউপিডিএফ) এর ২২তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী। ১৯৯৮ সালের এই দিনে ঢাকায় পার্বত্য চট্টগ্রামের তিন গণতান্ত্রিক সংগঠন (পাহাড়ি ছাত্র পরিষদ, পাহাড়ি গণপরিষদ ও হিল উইমেন্স ফেডারেশন) এর যৌথ উদ্যোগে এক পার্টি প্রস্তুতি সম্মেলনের মাধ্যমে গঠিত হয় ইউপিডিএফ।

গঠনলগ্ন থেকে নানা বাধা-বিপত্তি অতিক্রম করে ইউপিডিএফকে এগিয়ে যেতে হচ্ছে। নিষ্ঠুর রাজনৈতিক দমন-পীড়ন ও নানা ষড়যন্ত্র মোকাবেলা করে অভিষ্ট লক্ষ্য পূর্ণস্বায়ত্তশাসন আদায়ে লড়াই-সংগ্রামে অবিচল রয়েছে ইউপিডিএফ।

পার্বত্য চট্টগ্রামে ভূমি বেদখল, নারী নির্যাতন, অন্যায় দমন-পীড়নসহ সকল ধরনের নিপীড়ন-নির্যাতনের বিরুদ্ধে ইউপিডিএফ সব সময় সোচ্চার ভূমিকা পালন করে যাচ্ছে। অব্যাহত দমন-পীড়ন, জেল-জুলুম, তিন শতাধিক নেতা-কর্মী-সমর্থক খুন-গুমের শিকার হওয়ার পরও ইউপিডিএফ দমে যায়নি।

ইউপিডিএফ পার্বত্য চট্টগ্রামে বসবাসরত জাতিসত্তাসমূহের অধিকার প্রতিষ্ঠার লড়াইয়ের পাশাপাশি দেশের কৃষক, শ্রমিক, মেহনতি জনগণসহ সমতলের সকল জাতিসত্তাসমূহের ভাগ্য পরিবর্তনের লড়াইয়েও সমানভাবে সক্রিয় ভূমিকা পালন করছে। বিশ্বের সকল নিপীড়িত জনগণের সাথেও ইউপিডিএফ একাত্মতা প্রদর্শন করে আসছে।

একটি গণতান্ত্রিক রাজনৈতিক দল হিসেবে ইউপিডিএফ দেশের অষ্টম, নবম, দশম ও একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশগ্রহণ করেছে। এতে দলটি বিপুল জনসমর্থন লাভ করতে সক্ষম হয়েছে।

বিগত ২০০৬ সালে জাতীয় কংগ্রেস আয়োজনের মাধ্যমে ইউপিডিএফ ৬ দফা মৌলিক দাবিনামা, ১৬ দফা সম্পুরক দাবিনামা ও ২০ দফা কর্মসূচি গ্রহণ করে। তারই ভিত্তিতে ইউপিডিএফ তার কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছে।

ইউপিডিএফ’র মৌলিক দাবিনামাগুলো হচ্ছে– ১. পররাষ্ট্র, মূদ্রা, প্রতিরক্ষা ও ভারী শিল্প ব্যতীত রাষ্ট্রীয় প্রশাসনের সকল বিষয় পার্বত্য চট্টগ্রামের স্থায়ী বাসিন্দাদের প্রত্যক্ষ ভোটে নির্বাচিত একটি আঞ্চলিক সংস্থার নিকট হস্তান্তরিত করার মাধ্যমে পূর্ণস্বায়ত্তশাসন কায়েম করা; ২. পার্বত্য চট্টগ্রামে বসবাসরত চাকমা, মারমা, ত্রিপুরা, মুরুং, খুমি, চাক, খিয়াং, লুসাই, পাংখো, বম, তনচংগ্যা, সাঁওতাল, গুর্খা, অহোমী ও রাখাইন জাতিসত্তাগুলোকে সংবিধানে স্বীকৃতি প্রদান করা এবং বাংলাদেশে বসবাসরত সকল জাতি ও জাতিসত্তা সমানাধিকার ও সমমর্যাদা ভোগ করবে এই নিশ্চয়তা সংবিধানে লিপিবদ্ধ করা; ৩. বাংলাদেশের জাতীয় সংসদে সংখ্যালঘু জাতিসত্তাগুলোর জন্য সংরক্ষিত আসনের (মহিলা আসনসহ) বিধান করা ও উক্ত আসনসমূহে সরাসরি নির্বাচনের মাধ্যমে প্রতিনিধি নির্বাচনের ব্যবস্থা করা;  ৪. অপারেশন উত্তরণের নামে বলবৎ সেনাশাসন বন্ধ করে সেনাবাহিনীকে পার্বত্য চট্টগ্রাম থেকে প্রত্যাহার করা; ৫. রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে পুনর্বাসিত সেটলারদেরকে জাতিগত নিপীড়নের হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার বন্ধ করা এবং তাদেরকে পার্বত্য চট্টগ্রাম থেকে সরিয়ে নিয়ে তাদের স্ব স্ব জেলায় অথবা অন্য কোন সমতল জেলায় জীবিকার নিশ্চয়তাসহ সম্মানজনক পুনর্বাসনের ব্যবস্থা করা। নতুন সেটলার অনুপ্রবেশ ও পুনর্বাসন বন্ধ করা ও ৬. প্রথাগত ভূমি অধিকারের স্বীকৃতি ও পার্বত্য চট্টগ্রামে ভূমি ব্যবস্থাপনার পূর্ণ অধিকার প্রদান করা।

পার্বত্য চট্টগ্রামে নিপীড়িত জনগণের বৃহত্তর ঐক্য প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে পূর্ণস্বায়ত্তশাসন আদায়ের লড়াই চালিয়ে যেতে ইউপিডিএফ বদ্ধ পরিকর। যতই নিপীড়ন-নির্যাতন নেমে আসুক না কেন ইউপিডিএফের ন্যায়সঙ্গত আন্দোলন কিছুতেই স্তব্ধ করা যাবে না– এমনই প্রত্যয় দলটির নেতা-কর্মীদের।

এদিকে, ২২তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে ‘কর্মী বাহিনী ও জনগণের উদ্দেশ্যে ইউপিডিএফ কেন্দ্রীয় কমিটির বার্তা’ শিরোনামে একটি প্রচারপত্র প্রকাশ করা হয়েছে। এতে ইউপিডিএফ’র আদর্শ সমুন্নত রেখে লড়াই সংগ্রাম জোরদার করার আহ্বান জানানো হয়েছে এবং অধিকার আদায়ের সংগ্রাম এগিয়ে নেয়ার দৃঢ় প্রত্যয় পুনর্ব্যক্ত করা হয়েছে।

উক্ত প্রচারপত্রে ঐক্যবদ্ধ আন্দোলনের আহ্বান জানিয়ে বলা হয়েছে, বর্তমান সময়ের বাস্তবতা হচ্ছে এই, কারও একক প্রচেষ্টা বা সাংগঠনিক শক্তিতে চুক্তি বাস্তবায়ন বা জনগণের অধিকার প্রতিষ্ঠার আন্দোলন জোরদার করা সম্ভব নয়। অতীতে যাই হোক, জাতীয় অস্তিত্ব হুমকির মুখে পার্বত্য চট্টগ্রামের জনগণের সকল শক্তি সন্নিবেশিত করে ঐক্যবদ্ধ আন্দোলন জোরদার করা ভিন্ন অন্য কোন পথ নেই। তাই ইউপিডিএফ পার্বত্য চট্টগ্রামের গণতান্ত্রিক চেতনাসম্পন্ন ব্যক্তি—সংগঠন নির্বিশেষে সকলকে জাতিসত্তার স্বীকৃতি, ভূমি বেদখল প্রতিরোধ, বাস্তুভিটা রক্ষা, নারীর নিরাপত্তা নিশ্চিতকরণের দাবিতে এগিয়ে এসে সোচ্চার হবার আহ্বান জানায়। একই সাথে ইউপিডিএফ চুক্তি বাস্তবায়নের দাবিতে জনসংহতি সমিতিকে বক্তব্য বিবৃতিদানের মধ্যে সীমাবদ্ধ না থেকে আন্দোলনের কর্মসূচি দেয়ার আহ্বান জানাচ্ছে এবং এতে প্রয়োজনীয় সহায়তা দেয়ার ঘোষণা দিচ্ছে।

করোনা মহামারি পরিস্থিতির কারণে ইউপিডিএফ এবারের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীতে বড় ধরনের কোন কর্মসূচির আয়োজন না করলেও বিভিন্ন ইউনিটে স্থানীয়ভাবে ছোট পরিসরে নানা কর্মসূচি পালন করা হবে বলে জানা গেছে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *