দেড় লাখ টাকা মুক্তিপণে ছাড়া পেলো গুইমারায় অপহৃত স্কুলছাত্র স্বপন চাকমা

সেনা মদদপুষ্ট সন্ত্রাসীরা দেড় লাখ টাকা মুক্তিপণের বিনিময়ে অপহৃত গুইমারা কলেজিয়েট উচ্চ বিদ্যালয়ের ১০ম শ্রেণির ছাত্র স্বপন চাকমাকে ছেড়ে দিয়েছে বলে খবর পাওয়া গেছে।

মুক্তিপণ ছাড়াও ‘ইউপিডিএফের কোন সংগঠনের সাথে সম্পৃক্ত না হওয়া ও বিহারে শ্রমণ করিয়ে দেয়ার’ শর্তও জুড়ে দেওয়া হয়েছে।

গতকাল সোমবার (০৪ জানুয়ারি ২০২১) সন্ধ্যা ৭টার দিকে তাকে খাগড়াছড়ির তেঁতলতলা থেকে ছেড়ে দেওয়া হয় বলে নিশ্চিত হওয়া গেছে।

অপহৃত স্বপন চাকমার বাড়ি রামগড় উপজেলার পাতাছড়া ইউনিয়নের হৃদয়মনি কার্বারি পাড়ায়। তার পিতার নাম চন্দ্রমুনি চাকমা।

উল্লেখ্য, গত রবিবার (০৩ জানুয়ারি) সকালে ভর্তি সংক্রান্ত কাজে বিদ্যালয়ে যাবার পথে গুইমারা বাজার এলাকা থেকে সুলেন ও নবীন চাকমাসহ কয়েকজন সেনা মদদপুষ্ট সন্ত্রাসী স্বপন চাকমাকে অপহরণ করে। অপহরণের পর সন্ত্রাসীরা তাকে খাগড়াছড়ির তেঁতুলতলা এলাকায় নিয়ে গিয়ে আটকে রাখে এবং তার পরিবারের কাছ থেকে ৩ লক্ষ টাকা মুক্তিপণ দাবি করে।

পরে ঘটনাটি ব্যাপকভাবে জানাজানি হয়। বিভিন্ন মিডিয়ায়ও এ নিয়ে খবর প্রকাশিত হয়। অপহরণকারীদের মধ্যে নবীন চাকমা নামের এক সন্ত্রাসী মিডিয়ার কাছে অপহরণের বিষয়টি স্বীকার করলেও রহস্যজনক কারণে প্রশাসন অপহৃত স্কুলছাত্রকে উদ্ধার ও অপহরণকারীদের বিরুদ্ধে কোন পদক্ষেপই গ্রহণ করেনি।

এদিকে, উক্ত অপহরণ ঘটনার প্রতিবাদে গতকাল সোমবার খাগড়াছড়ি জেলার বিভিন্ন উপজেলায় স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থীরা বিক্ষোভ মিছিল করেন এবং অপহৃত স্বপন চাকমাকে উদ্ধারের দাবি জানান। এ সময় তারা প্রশাসনের রহস্যজনক ভূমিকা নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেন।

এরপর গতকাল সন্ধ্যা ৭টার দিকে সন্ত্রাসীরা দেড় লাখ টাকা মুক্তিপণের বিনিময়ে খাগড়াছড়ির তেঁতুলতলা থেকে স্বপন চাকমাকে ছেড়ে দিয়ে তার বাবা-মা ও স্থানীয় মুরুব্বীদের হাতে তুলে দেয়।

অপহরণ ঘটনার বর্ণনা দিয়ে স্বপন চাকমা এ প্রতিবেদকে বলেন, ‘গত রবিবার সকালে আমি স্কুলে ভর্তি হওয়ার জন্য বাড়ি থেকে গুইমারা বাজারের পুলিশ বক্সের সন্নিকটে পৌছলে ৩-৪ জন অস্ত্রধারী অপরিচিত লোক আমাকে ঘিরে ধরে। তার ৪০-৫০ গজের মধ্যে সেনাবাহিনীর একটি টহল টীম ছিল। সেনা টহল এবং পুলিশ বক্সের সামনে থেকে অস্ত্রের মুখে জোর করে আমাকে মোটর সাইকেল তুলে মাটিরাঙ্গায় ‘ভাই ভাই’ নামের একটি বোডিংয়ে নিয়ে যায়। মাটিরাঙ্গার ঐ বোডিংয়ে সুলেন চাকমা, নবীন চাকমাসহ আরো কয়েকজন আমাকে অশ্রাব্য ভাষায় গালি গালাজ করে। প্রায় ৩০ মিনিট পর সেখান থেকে খাগড়াছড়িতে নিয়ে যায়। পরে জানতে পারি খাগড়াছড়ির সে জায়গাটির নাম তেঁতুলতলা। সেখানে তারা আমাকে মারধর করে বিভিন্ন জিজ্ঞাসাবাদ করে। এক পর্যায়ে তারা বলেন ‘তুমি তো পিসিপি’র বড় নেতা, গুইমারায় তুমি নেতৃত্ব দাও, ফেসবুকে বিভিন্ন ধরনের স্ট্যাটাস দাও, তোমার মুক্তির দাবিতে বিভিন্ন স্থানে মিছিল সমাবেশ করা হচ্ছে, ভবিষ্যতে আর যাতে প্রতিবাদ করতে না পারো আজ সে ব্যবস্থা করবো’।

স্বপন চাকমার মা পাইক্রা মার্মা বলেন, গত রবিবার আমার ছেলে ১০ম শ্রেণিতে ভর্তি হওয়ার জন্য স্কুলে যায়। বিকেল পেরিয়ে গেলেও বাড়িতে না ফিরলে বাড়ির সকলে ছেলেকে ফোন করতে থাকি, কিন্ত তার ফোনে সংযোগ পাওয়া যাচ্ছিল না। এক পর্যায়ে সন্ধ্যা ৬ টার দিকে তার নম্বর থেকে কল করে অপরিচিত একজন বলে ‘তোমার ছেলেকে আমরা অপহরণ করেছি। ছেলেকে যদি জীবিত ফেরত চান তাহলে কালকের মধ্যে ৩ লক্ষ টকা নিয়ে আসো, যদি না পারো সাতদিন্নে (সাপ্তাহিক ক্রিয়া) দিয়ে দিও’।

এক পর্যায়ে আমি সে লোকটিকে প্রশ্ন করে করে বলি ‘আমার ছেলে আপনাদের কী ক্ষতি করেছে, যে তাকে অপহরণ করেছেন’। প্রতি উত্তরে ঐ লোকটি বলেন ‘তোমার ছেলে বেশি বাড়াবাড়ি করছে, বড় নেতা হয়েছে’। এভাবে কিছুক্ষণ কথা বলার পর সে লোকটি বলেন ‘বেশি কথা না বলে হয় টাকা নিয়ে আসো, নয় তো আপনার ছেলেকে মেরে ফেলবো’। এরপর ছেলেকে বাঁচানোর জন্য জায়গা-জমি বিক্রি করে ৫০ হাজার টাকা এবং ১ লক্ষ টাকা ধার (সুদের) নিয়ে দেড় লক্ষ টাকা দিয়ে ও বিভিন্ন শর্ত মেনে ছেলেকে খাগড়াছড়ি থেকে ছাড়িয়ে নিয়ে আসি।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *