রাঙামাটির কাউখালী উপজেলার ফটিকছড়ি ইউনিয়নের দোবাকাবা ও নভাঙ্গায় সেনা ক্যাম্প স্থাপনের কাজ বন্ধের দাবিতে এবং ছড়ায় বাঁধ নির্মাণে বাধাদানের প্রতিবাদে মানববন্ধন করেছে এলাকাবাসী।
‘আমরা সেনা ক্যাম্প চাই না’ এই শ্লোগানে আজ বুধবার (২৩ নভেম্বর ২০২০) দুপুর ১টার দিকে দোবাকাবা-নভাঙ্গা এলাকায় তারা এ মানববন্ধন কর্মসূচি পালন করেন।
মানববন্ধনে দোবাকাবা ও নভাঙ্গা গ্রামের আপামর জনগণ অংশ নেন।
এ সময় তারা “আমাদের নিজ জমির ভোগ দখল থেকে বঞ্চিত করবেন না”, “সেনা ক্যাম্প দিয়ে আমাদের জীবন যাত্রা ব্যাহত করবেন না”, “নদীতে গাছ বাঁশ নিতে না দিলে খাব কি? সেনা প্রধানের জবাব চাই”, “জীবিকার অবলম্বন বাঁধ নির্মাণে বাধা কেন? কর্তৃপক্ষের জবাব চাই”, “Army Camp = Destruction Of Our Land”, “সেনা ক্যাম্পের নামে ভূমি বেদখল বন্ধ কর” প্রভৃতি শ্লোগান সম্বলিত প্ল্যাকার্ড প্রদর্শন করেন।
মানববন্ধনে অংশগ্রহণকারী সুরতি মালা চাকমা এ প্রতিবেদককে বলেন, “সেনা ক্যাম্প স্থাপনের পর থেকে আমরা আর লাকড়ি সংগ্রহ করতে পারছি না। কারণ যেখান থেকে আমরা লাকড়ি সংগ্রহ করি সেখানে এখন ক্যাম্প হয়েছে। ছড়াতেও (নদীতে) যেতে পারি না। দূর থেকে পানি আনতে হচ্ছে। আমাদের নানা ধরণের অবাঞ্ছিত প্রশ্ন করে। আবার এলাকায় রোহিঙ্গাও নিয়ে আসবে বলে থাকে”।
আরেক অংশগ্রহণকারী ফদাংতাং চাকমা জানান, “এখানে ক্যাম্প হলে বনজ সম্পদ উজার হবে। বনমন্ত্রী যেখানে বন রক্ষার কথা বলে থাকেন তাহলে এখানে ক্যাম্প হবে কেন? তাদের প্রদত্ত কম্বল আমাদের দরকার নেই। এতোদিন আমরা নিজের পায়ে দাঁড়িয়ে আছি। কম্বল বিতরণের মাধ্যমে তারা জনগণের সাথে ঘনিষ্ঠ হতে চেয়েছে। কিন্তু আগে আমাদের জায়গা কেড়ে নিয়েই তা করছে। তা না বুঝার কোন কারণ নেই। এ যেন গরু মেরে জুতা দান”।
উল্লেখ্য, এর আগে গত ২৬ নভেম্বর এলাকাবাসী ক্যাম্প স্থাপনের বিরুদ্ধে নভাঙ্গা এলাকায় বিক্ষোভ প্রদর্শন করেন এবং ৩০ নভেম্বর রাঙামাটি শহরের জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের সামনে মানববন্ধন করে ক্যাম্প স্থাপনের কাজ বন্ধের দাবি জানান।
এছাড়া ২৪ নভেম্বর ক্যাম্প নির্মাণ স্থলে গিয়ে কাউখালি ক্যাম্পের এক ক্যাপ্টেনের কাছে এবং ২১ ডিসেম্বর উপজেলা নির্বাহি কর্মকর্তার মাধ্যমে তারা সেনা প্রধানের বরাবর স্মারকলিপি দিয়ে ক্যাম্প স্থাপনের কাজ বন্ধের দাবি জানিয়েছেন। একই দাবিতে গত ২৫ নভেম্বর এলাকার জনপ্রতিনিধিরাও সেনাপ্রধানের বরাবর স্মারকলিপি প্রদান করেছেন।
কিন্তু এলাকাবাসীর আপত্তি সত্ত্বেও ক্যাম্প স্থাপনের কাজ এখনো বহাল রয়েছে। ফলে এলাকাবাসী এখন চরম অনিরাপত্তার মধ্যে দিনযাপন করতে বাধ্য হচ্ছেন।
কম্বল না নিলে ব্যবস্থা নেওয়ার হুমকি
এদিকে, গতকাল (মঙ্গলবার) দোবাকাবা ও নভাঙ্গা গ্রামবাসীরা সেনাবাহিনীর প্রদত্ত কম্বলগুলো ফেরত দেওয়ায় সেনারা বেজায় ক্ষেপেছেন বলে জানা গেছে। আজ সারাদিন সেনারা নভাঙ্গা ও দোবাকাবা গ্রামে এদিক সেদিক ঘোরাঘুরি করেছে। তারা নভাঙ্গা গ্রামের কার্বারি দয়াধন চাকমার বাড়িতে গিয়ে তাকে ক্যাম্পে ডেকে নিয়ে যায়।
সেনারা কার্বারীকে আগামী ৩ দিনের মধ্যে তাদের প্রদত্ত কম্বলগুলো না নিলে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়ার হুমকি প্রদান করে।
প্রসঙ্গত, দোবাকাবা ও নভাঙ্গা এলাকায় সেনা ক্যাম্প স্থাপনের পর থেকে নানা হয়রানিমূলক কর্মকাণ্ডের কারণে গ্রামবাসীদের মধ্যে অসন্তোষ সৃষ্টি হয়। ফলে সেনারা গ্রামবাসীদের সন্তুষ্ট করার লক্ষ্যে গত ১৬ ডিসেম্বর ২০২০ এলাকার কিছু লোকজনকে জড়ো করে তাদের হাতে জোরপূর্বক কম্বল বিতরণ করে। কিন্তু এলাকাবাসী তাদের এলাকায় জমি দখল করে ক্যাম্প স্থাপন ও সামাজিক বাঁধটির পানি ব্যবহার করতে না দেওয়ার প্রতিবাদ জানিয়ে গতকাল সেনাবাহিনীর প্রদত্ত উক্ত কম্বলগুলো ফেরত দেয়।