ঢাকা শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের ওপর ছাত্রলীগ ও পুলিশের বর্বর হামলার প্রতিবাদে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বিক্ষোভ মিছিল ও প্রতিবাদ সমাবেশ করেছে বৃহত্তর পার্বত্য চট্টগ্রাম পাহাড়ি ছাত্র পরিষদ (পিসিপি)সহ প্রগতিশীল ছাত্র সংগঠনসমূহ।
আজ সোমবার (১৭ জানুয়ারি ২০২২) দুপুর ১টায় মিছিলটি ঢাবির টিএসসি থেকে শুরু হয়ে রাজু ভাস্কর্য হয়ে ডাকসু ভবনে গিয়ে এক প্রতিবাদ সমাবেশের মাধ্যমে শেষ হয়।
সমাবেশে বক্তব্য রাখেন বাংলাদেশ ছাত্র ফেডারেশনের সভাপতি মিঠু সরকার, সমাজতান্ত্রিক ছাত্র ফ্রন্ট (মার্কসবাদী) ভারপ্রাপ্ত সভাপতি জয়দীপ ভট্টাচার্য, বাংলাদেশ ছাত্র ফেডারেশনের সভাপতি গোলাম মোস্তফা, বাংলাদেশ ছাত্র ইউনিয়নের সহ-সভাপতি জয় রায়, বিপ্লবী ছাত্র মৈত্রীর সাধরণ সম্পাদক দীলিপ রায়, গণতান্ত্রিক ছাত্র কাউন্সিলে সহ-সভাপতি সাঈদুল হক বিটন, সমাজতান্ত্রিক ছাত্র ফন্ট-এর কেন্দ্রীয় অর্থ সম্পাদক মুক্তা বারৈই, বৃহত্তর পার্বত্য চট্টগ্রাম পাহাড়ি ছাত্র পরিষদের কেন্দ্রীয় তথ্য প্রচার সম্পাদক রিপন জ্যোতি চাকমা, বিপ্লবী ছাত্র-যুব আন্দোলনের তথ্য প্রচার সম্পাদক সোহবত শোভন প্রমুখ।
ছাত্র ফেডারেশনের সভাপতি মিঠু সরকার বলেন, শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রীদের হলে প্রভোস্টকে অপসারণসহ তিন দফা দাবি আদায়ের লক্ষে শিক্ষার্থীরা আন্দোলন করেছিল। শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের ওপর ছাত্রলীগ ও পুলিশ বর্বর হামলা চালিয়ে শিক্ষার্থীদের মাথায় আঘাত করে মাথা ফাঁটিয়ে দিয়েছেন, ছাত্রীদের ওপর নির্যাতন চালানো হয়েছে, রক্তাক্ত ক্যাম্পাসে পরিণত করেছে, রাবার বুলেটের আঘাতে শিক্ষার্থীদের বুক ঝাঝড়া হয়ে গিয়েছে। ক্যাম্পাসে প্রবেশ করে শিক্ষার্থীদের ওপর এই বর্বরোচিত এই হামলায় চালাতে পুলিশকে কারা অনুমোতি দিয়েছিল, বিশ্ববিদ্যালয়ের মত একটি জায়গায় এমন ঘটনা ঘটাতে তারা কিভাবে সাহস পায়?
তিনি, ছাত্রলীগ ও পুলিশের হামলার শিকার হয়েও সাহসের সাথে প্রতিরোধ গড়ে তোলার জন্য শাবিপ্রবির শিক্ষার্থীদের প্রতি সংগ্রামী অভিবাদন জানান।
পিসিপি নেতা রিপন চাকমা বলেন, ২০১৮ সালে একতরফা নির্বাচনের রাতের আঁধারে ভোটের মাধ্যমে অবৈধভাবে ক্ষমতা দখল করে ফ্যাসিস্ট সরকার জনগণের গায়ের ওপর চেপে বসে আছে। এরপর থেকে সারাদেশে খুন-গুম, ধর্ষণের মতো ঘটনা প্রতিনিয়ত ঘটছে।
তিনি আরো বলেন, ফ্যাসিস্ট সরকার সারাদেশে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে মাধ্যমে দখলদারিত্ব জারি রেখেছে এবং প্রতিটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানকে সরকারের নিয়োগকৃত ক্যাডার বাহিনীর আস্তানায় পরিণত করা হয়েছে। প্রতিষ্ঠানে শিক্ষক ও ভিসি পদে যাদেরকে নিয়োগ দেয়া হচ্ছে তারা ক্ষমতাসীন সরকার দলীয় লেজুড়বৃত্তি ছাড়া কিছুই করে না। সুতরাং তাদের কাছ থেকে সাধারণ শিক্ষার্থীরা ভালো কোন কিছু আশা করতে পারে না।
তিনি বলেন, শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীদের ন্যায্য আন্দোলনের ওপর ছাত্রলীগ ও পুলিশের হামলার ঘটনা নতুন নয়। দেশের যেখানে শিক্ষার্থীরা তাদের ন্যায্য অধিকারের জন্য আন্দোলন করেছেন সেখানে ফ্যাসিস্ট সরকারের এই পুলিশ বাহিনী ও হেলমেট বাহিনী নামধারী ছাত্রলীগ দুর্বৃত্তরা হামলা চালিয়েছে। ২০১৮ সালে নিরাপদ সড়কের দাবিতে শিক্ষার্থীদের আন্দোলনে হেলমেট পরে ছাত্রলীগ-যুবলীগের দুর্বৃত্তরা যৌথভাবে হামলা চালানোর ঘটনা এদেশের মানুষ ভুলে যায়নি।
সমাবেশ তিনি ছাত্রলীগ ও পুলিশ দিয়ে ন্যাক্কারজনক হামলা করে, মামলা দিয়ে শিক্ষার্থীদের ন্যায়সঙ্গত আন্দোলনকে স্তিমিত করতে পারবে না বলে হুশিয়ারি উচ্চারণ করেন। তিনি ফ্যাসিস্ট সরকারের বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধ হয়ে লড়াই সংগ্রামের অবতীর্ন হতে ছাত্র সমাজের প্রতি আহ্বান জানান এবং শাবিপ্রবির শিক্ষার্থীদের ন্যায্য আন্দোলনের প্রতি পূর্ণ সংহতি প্রকাশ করেন।
সমাবেশ থেকে বক্তারা শাবিপ্রবি’র ভিসির পদত্যাগসহ শিক্ষার্থীদের সকল দাবি মেনে নেওয়া এবং শিক্ষার্থীদের ওপর হামলাকারী ছাত্রলীগ ও পুলিশ সদস্যদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দেয়ার দাবি জানান।