লামায় ম্রো-ত্রিপুরাদের জুমভূমি বেদখলের ষড়যন্ত্রের প্রতিবাদে ঢাকায় পিসিপি’র বিক্ষোভ

মামলা-হামলা ও পানিতে বিষ প্রয়োগ করে হত্যার ষড়যন্ত্র নয়, অবিলম্বে ম্রো-ত্রিপুরাদের ৪০০ একর ভূমি বেদখলের পাঁয়তারা বন্ধ করুন : অমল ত্রিপুরা

নিজস্ব প্রতিনিধি।। বৃহত্তর পার্বত্য চট্টগ্রাম পাহাড়ি ছাত্র পরিষদের কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক অমল ত্রিপুরা বলেছেন, মামলা-হামলা ও পানিতে বিষ প্রয়োগ করে ম্রো ও ত্রিপুরাদের হত্যার ষড়যন্ত্র নয়, অবিলম্বে তাদের ৪০০ একর জুমভুমি বেদখলের পাঁয়তারা বন্ধ করতে হবে।

আজ শনিবার (১৭ সেপ্টেম্বর ২০২২) বিকাল সাড়ে ৫টায় ঢাকা জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে আয়োজিত এক বিক্ষোভ সমাবেশে তিনি এই কথা বলেন।

“পার্বত্য চট্টগ্রামে পাহাড়িদের প্রথাগত ভূমি অধিকারের স্বীকৃতি দাও” এই স্লোগানে লামা রাবার ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেড কর্তৃক বান্দরবানের লামায় সরই ইউনিয়নের রেংয়েন পাড়াবাসীর একমাত্র পানির উৎস ঝিরিতে বিষ প্রয়োগের সঙ্গে জড়িতদের গ্রেপ্তার ও দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি এবং আন্দোলনকারীদের নামে ষড়যন্ত্রমূলক মিথ্যা মামলা প্রত্যাহার, পরিবেশ বিনষ্টকারী সকল রাবার বাগানের ইজারা বাতিলের দাবিতে এবং ত্রিপুরা ও ম্রোদের ৪০০ একর ভূমি বেদখলের ষড়যন্ত্রের প্রতিবাদে পিসিপি’র ঢাকা শাখার উদ্যোগে উক্ত বিক্ষোভ সমাবেশের আয়োজন করা হয়।

তিনি অভিযোগ করে বলেন, বান্দরবানের লামা উপজেলার সরই ইউনিয়নে লামা রাবার ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেড কর্তৃক ম্রো ও ত্রিপুরাদের ৪০০ একর ভূমি বেদখলের জন্য একের পর এক ষড়যন্ত্র করা হচ্ছে। সকল ষড়যন্ত্র মোকাবেলা করে স্থানীয় গ্রামবাসীরা নিজেদের বাস্তুভিটা ও ভূমি রক্ষার্থে আন্দোলন সংগ্রাম জারি রেখেছে। এই আন্দোলন দমানোর জন্য আন্দোলনকারীদের নামে ষড়যন্ত্রমূলকভাবে তিনটি মিথ্যা মামলা দায়ের করা হয়েছে। শুধু তাই নয়, ভূমি রক্ষা সংগ্রাম কমিটির আহ্বায়ক রংধজন ত্রিপুরার ওপর হামলা, ভূমিদস্যুদের কর্তৃক গ্রামবাসীদের ক্ষেত থেকে মিষ্টি কুমড়া লুটপাট ও রেংয়েন পাড়াবাসীর একমাত্র পানির উৎস ঝিড়ির ছড়া পনিতে বিষ প্রয়োগের মাধ্যমে হত্যার চেষ্টা ও হুমকি প্রদানসহ একের পর এক ষড়যন্ত্র অব্যাহত রেখেছে। তিনি ষড়যন্ত্র না করে অবিলম্বে লাংকম ম্রো, জয় চন্দ্র ত্রিপুরা ও রেংয়েন ম্রো পাড়ার গ্রামবাসীদের ৪০০ একর ভূমি বেদখলের পাঁয়তারা বন্ধ করে পরিবেশ বিনষ্টকারী সকল রাবার বাগানের ইজারা বাতিলের দাবি জানান।



তিনি আরো বলের, পাবর্ত্য চট্টগ্রামে প্রধান সমস্যা হল ভূমি। কিন্তু সরকার সে সমস্যার সুষ্ঠু সমাধান না করে উন্নয়নের নাম-বেনামে পাহাড়িদের ভূমি বেদখল করে যাচ্ছে। পর্যটন, ইকোপার্ক, সেনা-পুলিশ-র‌্যাব-আর্মড পুলিশ ব্যাটালিয়নসহ সামরিক-বেসামরিক বাহিনীর ক্যাম্প স্থাপন ও সম্প্রসারণ করছে। সাম্প্রতিক সময়ে মাটিরাঙ্গা-পানছড়ি-দীঘিনালা-সাজেক-বাঘাইছড়ি-বরকলসহ বিভিন্নস্থানে পাহাড়, টিলা, বন ধ্বংস করে সীমান্ত সড়ক নির্মাণ করছে। এতে ফসল ধ্বংস করা সহ ব্যাপকভাবে পাহাড় কেটে পরিবেশের ভারসাম্য নষ্ট করা হচ্ছে। এই সড়ক নির্মাণের ফলে অনেক জায়গা থেকে পাহাড়িরা নিজ বাস্তুভিটা থেকে উচ্ছেদেরও শিকার হচ্ছেন।

পার্বত্য চট্টগ্রামে পাহাড়িদের প্রথাগত ভূমি অধিকারের স্বীকৃতি দিয়ে ভূমি সমস্যার সমাধান করতে হবে উল্লেখ করে অমল ত্রিপুরা বলেন, যুগ যুগ ধরে পার্বত্য চট্টগ্রামে পাহাড়িরা তাদের প্রথাগত রীতি নীতি অনুযায়ী তাদের জায়গা, জমি ভোগ দখল করে আসছে। তাদের কাছে নেই কোন বন্দোবস্তি কাগজপত্র। এই সুযোগে সরকার প্রচলিত নিয়ম অনুযায়ী পাহাড়ে অধিকাংশ ভূমি খাস দেখিয়ে বা সরকারের সম্পত্তি দেখিয়ে জবরদখল করছে। বিশেষ করে ৮০ দশকের পর থেকে বহিরাগত সেটলার বাঙালিদের অনুপ্রবেশ ঘটিয়ে এবং পাহাড়িদের ভূমিতে তাদের পুনর্বাসন করে ভূমি সমস্যাকে আরো জটিল করে তুলেছে। ভূমি সমস্যা সমাধানের জন্য পার্বত্য চট্টগ্রাম ভূমি কমিশন গঠন করা হলেও এর কোন কার্যকারিতা নেই। বরং পাহাড়ে বাষ্ট্রীয় বাহিনীগুলো বহিরাগতদের সেটলারদের উস্কানি দিয়ে ভূমি সমস্যা সমাধানের পথকে রুদ্ধ করার অপপ্রয়াস চালাচ্ছে। তিনি পার্বত্য চট্টগ্রামের ভূমি সমস্যা সমাধানের লক্ষ্যে পাহাড়িদের প্রথাগত ভূমি অধিকারের স্বীকৃতি দেয়ার জন্য সরকারে প্রতি আহ্বান জানান।

সমাবেশ থেকে বক্তারা, লামা রাবার ইন্ডাস্ট্রিজ ও মহালছড়িতে বহিরাগত সেটলার বাঙালিদের কর্তৃক পাহাড়িদের ভূমি বেদখলের চেষ্টা বন্ধসহ পার্বত্য চট্টগ্রামে সামরিক-বেসামরিক বাহিনীর ক্যাম্প সম্প্রসারণ বন্ধ করা, আর্মড পুলিশ ব্যাটেলিয়ন ক্যাম্প স্থাপনের সিদ্ধান্ত বাতিল করা, লামা সরইয়ে ভূমি রক্ষা আন্দোলনকারীদের নামে মিথ্যা মামলা প্রত্যাহার, পানির উৎসে বিষ প্রয়োগের সাথে জড়িতদের গ্রেফতারপূর্বক দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি প্রদান, জুম পুড়িয়ে দেওয়া ও ক্ষেত থেকে ফসল নিয়ে যাওয়ার ফলে ক্ষতিগ্রস্ত গ্রামবাসীদের যথাযথ ক্ষতিপূরণ দেয়া, রাবার কোম্পানি কর্তৃক ম্রো-ত্রিপুরা গ্রামবাসীদের হয়রানি বন্ধসহ অবিলম্বে ভূমিদস্যু লামা রাবার ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেডের মোয়াজ্জেম হোসেন ও কামাল উদ্দিন গংদের বিচার এবং লাংকম. জয় চন্দ্র ও রেংয়েন ম্রো পাড়াবাসীর ৪০০ একর ভূমি বেদখলের চেষ্টা বন্ধের দাবি জানান।

প্রতিবাদ সমাবেশে পাহাড়ি ছাত্র পরিষদের ঢাকা শাখার ভারপ্রাপ্ত সভাপতি রনেল চাকমার সভাপতিত্বে সাধারণ সম্পাদক অর্ণব চাকমার সঞ্চালনায় আরো বক্তব্য রাখেন হিল উইমেন্স ফেডারেশনের কেন্দ্রীয় সদস্য রূপসী চাকমা প্রমুখ।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *