পাকিস্তান কর্তৃক পার্বত্য চট্টগ্রাম আগ্রাসনের ৭৫ বছর উপলক্ষে ঢাকায় পিসিপি’র আলোচনা সভা

নিজস্ব প্রতিবেদক।। “দেশ ভাগের বেদীতে পার্বত্যবাসীদের বলিদান” শ্লোগানে পাকিস্তানের বেলুচ রেজিমেন্ট কর্তৃক পার্বত্য চট্টগ্রামের রাঙ্গামাটি-বান্দরবান আগ্রাসনের ৭৫ বছর উপলক্ষে ঢাকায় আলোচনা সভা করেছে বৃহত্তর পার্বত্য চট্টগ্রাম পাহাড়ি ছাত্র পরিষদ (পিসিপি) ঢাকা শাখা।

আজ শুক্রবার (১৯ আগস্ট ২০২২) বিকাল সাড়ে ৩ টায় ঢাকার পল্টন এলাকায় এই আলোচনা সভা করা হয়।

আত্মরক্ষার্থে ছাত্র-যুব জনতা সংগঠিত হোন, আন্দোলন গড়ে তুলুন” এই আহ্বানে অনুষ্ঠিত আলোচনা সভায় পিসিপি’র ঢাকা শাখার সহ-সভাপতি রুপসী চাকমার সভাপতিত্বে ও সাধারণ সম্পাদক অর্ণব চাকমার সঞ্চালনায় আলোচনা করেন ইউনাইটেড ওয়ার্কার্স ডেমোক্রেটিক ফ্রন্টের সহ-সাধারণ সম্পাদক প্রমোদ জ্যোতি চাকমা, গণতান্ত্রিক যুব ফোরামের সাধারণ সম্পাদক জিকো ত্রিপুরা ও পাহাড়ি ছাত্র পরিষদে কেন্দ্রীয় দপ্তর সম্পাদক শুভাশীষ চাকমা প্রমুখ।

আলোচনা সভায় আলোচকবৃন্দ বলেন, পার্বত্য চট্টগ্রাম এক সময় স্বশাসিত ছিল। ব্রিটিশরা পার্বত্য চট্টগ্রামের স্বাতন্ত্র্যকে মেনে নেয়। ব্রিটিশদের কর প্রদান করলেও ১৮৬০ সাল পর্যন্ত পার্বত্যবাসীরা ব্রিটিশের প্রজা ছিলেন না। ১৮৬০ সালে তাদের রাজ্যগ্রাসী নীতির কারণে পার্বত্য চট্টগ্রামকে তারা অধিনস্ত করে জেলায় পরিণত করে।

তারা আরো বলেন, ১৯৪৭ সালে ভারত বিভক্তি আইন অনুসারে পার্বত্য চট্টগ্রাম পাকিস্তানের অন্তর্ভূক্ত হওয়ার কথা ছিল না। শিখদের খুশি করার জন্য পাঞ্জাবের দু’টি অঞ্চল ফিরোজপুর ও জিরা ভারতের অন্তর্ভূক্ত করে দেয়া হয়েছিল, অন্যদিকে পাকিস্তানের ক্ষতি পুষিয়ে দিতে পার্বত্য চট্টগ্রামকে পাকিস্তানে অন্তর্ভূক্ত করা হয়েছিল। তবে পার্বত্য চট্টগ্রামের জনগণ কখনো এই অন্তর্ভূক্তি মেনে নিতে পারেনি। যার কারণে ১৫ আগস্ট রাঙামাটিতে ভারতীয় পতাকা এবং বান্দরবানে বার্মা পতাকা উত্তোলন করা হয়। কিন্তু ২০ আগস্ট পাকিস্তানের বেলুচ রেজিমেন্ট সশস্ত্র আগ্রাসন চালিয়ে রাঙামাটি থেকে ভারতীয় পতাকা ও বান্দরবান থেকে বার্মা পতাকা নামিয়ে দিয়ে পার্বত্য চট্টগ্রাম দখল করে নেয়। 

তারা বলেন, ফজলুল কাদের চৌধুরী গং ১৯৫৫ সালে পার্বত্য চট্টগ্রামকে পূর্ব পাকিস্তানের একটি সাধারণ জেলায় পরিণত করার ষড়যন্ত্র করেছিলেন। ১৯৬২ সালে আইয়ুব খানের চীন সফর কালে ফজলুল কাদের চৌধুরী একদিনের জন্য পাকিস্তানের ভারপ্রাপ্ত রাষ্ট্রপতি হলে ঐদিনেই তিনি পার্বত্য চট্টগ্রামের “বিশেষ অঞ্চলের” মর্যাদা খারিজ করে তার আগের ষড়যন্ত্র সফল করেন।

সভায় আলোচকবৃন্দ আরো বলেন, বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পর ৭২’র সংবিধানে পার্বত্য চট্টগ্রাম একটি “বিশেষ অঞ্চল” তা সম্পূর্ণ উপেক্ষা করা হয় এবং বাঙালি জাতীয়তা চাপিয়ে দেওয়া হয়। একইভাবে ২০১১ সালে ৩০শে জুন সংবিধানের পঞ্চদশ সংশোধনীতেও বাংলাদেশে বসবাসরত সকল জাতি গোষ্ঠিকে বাঙালি বানানো হয়েছে। যা পার্বত্য চট্টগ্রামের জাতিসত্তাসমূহের জন্য অবমাননাকর। আশির দশক থেকে রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে সমতলের চার লক্ষাধিক সাধারণ বাঙালি জনগণকে রেশনিং ব্যবস্থাসহ পাহাড়িদের জায়গা-জমি দখল করে বসতি করে দেয়া হয়। যার ফলে সেখানে ভূমি বেদখল, সাম্প্রদায়িক হামলা ও নারী নির্যাতনের ঘটনা নিত্য নৈমিত্তিক ঘটনায় পরিণত হয়।

পার্বত্য চট্টগ্রামের বর্তমান পরিস্থিতি খুবই নাজুক উল্লেখ করে বক্তারা বলেন, সেখানে রাষ্ট্রীয় নিপীড়ন এখন মারাত্মক রূপ ধারণ করেছে। সেনাশাসন “অপারেশন উত্তরণ” ও অগণতান্ত্রিক ১১ নির্দেশনা জারির মাধ্যমে অধিকারের দাবিতে আন্দোলনকারী নেতা-কর্মী ও জনগণের ওপর প্রতিনিয়ত জুলুম, নিপীড়ন চালানো হচ্ছে।

আলোচনা সভায় বক্তারা, পাহাড়ের বর্তমান পরিস্থিতিতে ছাত্র-যুব-নারী সমাজের পক্ষ থেকে আন্দোলনে অংশগ্রহণ গুরুত্বপূর্ণ হয়ে দাঁড়িয়েছে বলে মন্তব্য তারা বলেন, পার্বত্য চট্টগ্রামের অতীত ইতিহাস থেকে শিক্ষা নিয়ে বর্তমান সময়ে রাষ্ট্রীয় দমন-পীড়ন, খুন-গুম, ভূমি বেদখল, নারী নির্যাতনের বিরুদ্ধে সংগঠিত হতে হবে এবং জাতীয় অস্তিত্ব ও আত্মরক্ষার্থে ছাত্র-যুব-নারী-জনতাকে ঐক্যবদ্ধ হয়ে আন্দেলন গড়ে তুলতে হবে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *