খাগড়াছড়িতে পাহাড়ি ছাত্র পরিষদের আলোচনা সভা ও স্থিরচিত্র প্রদর্শনী


‘৩০ অক্টোবর অপশক্তি প্রতিরোধ দিবস’ উপলক্ষে খাগড়াছড়িতে আলোচনা সভা ও স্থিরচিত্র প্রদর্শনীর আয়োজন করেছে বৃহত্তর পার্বত্য চট্টগ্রাম পাহাড়ি ছাত্র পরিষদ (পিসিপি) খাগড়াছড়ি জেলা শাখা।

সভার ব্যানারে দাবি সম্বলিত শ্লোগান ছিল “কুমিল্লা, রংপুর, কক্সবাজারের উখিয়াসহ পাহাড় ও সমতলে সংখ্যালঘু জাতির ওপর সাম্প্রদায়িক হামলা বন্ধ কর, দুর্বৃত্তদের বিশেষ ট্রাইব্যুনালে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাও”।

আজ শুক্রবার (২৯ অক্টোবর ২০২১) বেলা ২টার সময় অনুষ্ঠিত আলোচনা সভা ও স্থিরচিত্র প্রদর্শনী অনুষ্ঠানে পিসিপির খাগড়াছড়ি জেলা শাখার সাংগঠনিক সম্পাদক নরেশ ত্রিপুরার সভাপতিত্বে ও অর্থ সম্পাদক শান্ত চাকমার সঞ্চালনায় বক্তব্য রাখেন ইউপিডিএফের খাগড়াছড়ি জেলা সংগঠক অংগ্য মারমা, যুব প্রতিনিধি রজেন্টু চাকমা ও হিল উইমেন্স ফেডারেশনের খাগড়াছড়ি জেলা আহ্বায়ক এন্টি চাকমা।

সভায় ছাত্র-ছাত্রীসহ এলাকার জনসাধারণ অংশগ্রহণ করেন।

৩০ অক্টোবর থেকে শিক্ষা নিন, শাসকগোষ্ঠী, কায়েমী স্বার্থবাদী সেনা-গোয়েন্দা চক্রের ষড়যন্ত্র ভেস্তে দিন, তাদের মদদপুষ্ট সন্ত্রাসীদের প্রতিহত করতে সাহসী হোন’ এই আহ্বানে আয়োজিত সমাবেশে বক্তারা ‘অশুভ শক্তি প্রতিরোধ দিবস’ সম্পর্কে বলেন, ১৯৯৩ সালের অক্টোবরে তৎকালীন পাহাড়ি ছাত্র পরিষদের নেতৃবৃন্দ রাঙামাটির নান্যাচর এলাকায় সাংগঠনিক সফরে গেলে নান্যাচর বাজারের লঞ্চঘাটে সেনাবাহিনী কর্তৃক হেনস্থার শিকার হন। এ ঘটনার প্রতিবাদে সেসময় পাহাড়ি ছাত্র পরিষদ বিভিন্ন জায়গায় বিক্ষোভ সমাবেশ ও ৩০ অক্টোবর ‘৯৩ খাগড়াছড়ি জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের সামনে অবস্থান ধর্মঘট কর্মসূচির আয়োজন করে। উক্ত কর্মসূচিতে মিছিল সহকারে যাবার সময় খেজুড়বাগান এলাকায় (বর্তমানে উপজেলা পরিষদ এলাকা) পুলিশ বিনা উস্কানিতে পিসিপি নেতা-কর্মীদের ওপর হামলা, লাঠিচার্জ ও টিয়ারশেল নিক্ষেপ করে। এতে অনেকে আহত হন এবং বেশ কয়েকজনকে আটক করা হয়। পরে ছাত্র-জনতা তীব্র প্রতিরোধ আন্দোলন গড়ে তুললে পরে প্রশাসন আলোচনায় বসতে ও আটককৃত নেতাকর্মীদের মুক্তি দিতে বাধ্য হয়। এরপর ছাত্র-জনতা খাগড়াছড়ি সদরের নারাঙহিয়া চৌরাস্তা মোড়ে মুক্তিপ্রাপ্ত নেতাকর্মীদের সংবর্ধনা দেয় এবং নারাঙহিয়া মোড়কে রেডস্কোয়ার ঘোষণা করে। মূলত এ ঘটনার প্রেক্ষাপটে “৩০ অক্টোবর অপশক্তি প্রতিরোধ দিবস” হিসেবে পালন করা হয়ে থাকে।

বক্তারা ছাত্র-জনতার এই ঐক্যবদ্ধ প্রতিরোধ সংগ্রাম থেকে শিক্ষা নিয়ে শাসকগোষ্ঠীর সকল ষড়যন্ত্র রুখে দিতে ও পার্বত্য চট্টগ্রামে চলমান পূর্ণস্বায়ত্তশাসন প্রতিষ্ঠার লড়াই জোরদার করার জন্য আহ্বান জানান। 

সভায় বক্তারা দেশের সামগ্রিক পরিস্থিতি তুলে ধরে বলেন, ১৯৭১ সালে মহান মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে বাংলাদেশ স্বাধীনতা লাভ করেছিল মূলত একটি শোষণহীন ও বৈষম্যহীন গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার লক্ষে। কিন্তু স্বাধীনতার অর্ধশতাব্দির পরেও দেশে শোষণহীন ও বৈষম্যহীন সমাজ প্রতিষ্ঠিত হয়নি। উপরন্তু আওয়ামী লীগ সরকার রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানগুলো দলীয়করণের মধ্য দিয়ে স্বৈরাচারী রুপ ধারণ করেছে। যার ফলে দেশে মানবাধিকার লঙ্ঘন, নারী নির্যাতন, অপহরণ, হত্যা ও রাষ্ট্রীয় বাহিনী কর্তৃক গুমের ঘটনা অহরহ ঘটছে। সাম্প্রতিক সময়ে সংখ্যালঘু হিন্দু সম্প্রদায়ের প্রধান ধর্মীয় উৎসব দূর্গাপূজা অনুষ্ঠান চলাকালীন কুমিল্লা, রংপুরসহ দেশের বিভিন্ন জেলা উপজেলায় পূজামন্ডপ-মন্দিরে হামলার ঘটনা ঘটেছে। দেশে আইনের যথাযথ প্রয়োগ ও দোষীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির ব্যবস্থা না থাকায় এ ধরনের ঘটনা দিন দিন বেড়ে যাচ্ছে।

বক্তারা বলেন, পার্বত্য চট্টগ্রামের পরিস্থিতি বলতে গেলে আরো বেশি নাজুক। এখানে গণতান্ত্রিক কর্মসূচি মিটিং, মিছিল ও সমাবেশ পর্যন্ত নিরাপদে-নির্বিঘ্নে সম্পন্ন করা যায় না। সর্বত্র সেনা নজরদারি ও তাদের মদদপুষ্ট সন্ত্রাসীগোষ্ঠীর হামলা-অত্যাচার অব্যাহত রয়েছে।

বক্তারা অবিলম্বে কুমিল্লা, রংপুর ও কক্সবাজারের উখিয়াসহ পাহাড় ও সমতলের সংখ্যালঘু জাতির ওপর সাম্প্রদায়িক হামলা বন্ধ ও দুর্বৃত্তদের বিশেষ ট্রাইব্যুনালে দৃষ্টান্তমুলক শাস্তির দাবি জানান।

সভা শেষে পার্বত্য চট্টগ্রামের লড়াই-সংগ্রামসহ বিশ্বের সফল আন্দোলনের বিভিন্ন স্থিরচিত্র প্রদর্শনীর আয়োজন করা হয়।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *