অবিলম্বে ইউপিডিএফ নেতা মাইকেল চাকমার সন্ধান ও মুক্তির দাবিতে ঢাকায় সংবাদ সম্মেলন করেছে পাহাড়ি ছাত্র পরিষদ, গণতান্ত্রিক যুব ফোরাম, হিল উইমেন্স ফেডারেশন ও ইউনাইটেড ওয়ার্কার্স ডেমোক্রেটিক ফ্রন্ট।
আজ বুধবার (১৫ জানুয়ারি) সকাল ১১টায় জাতীয় প্রেসক্লাবের জহুর হোসেন মিলনায়তনে অনুষ্ঠিত সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন পাহাড়ি ছাত্র পরিষদের সাধারণ সম্পাদক সুনয়ন চাকমা।
সংবাদ সম্মেলন থেকে অবিলম্বে মাইকেল চাকমাকে উদ্ধারপূর্বক সুস্থ শরীরে ও নিরাপদে তার পরিবারের নিকট ফিরিয়ে দেয়াসহ ৫ দফা দাবি জানানো হয়েছে।
সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন হিল উইমেন্স ফেডারেশনের সভাপতি নিরূপা চাকমা, গণতান্ত্রিক যুব ফোরামের সাধারণ সম্পাদক জিকো ত্রিপুরা ও ইউনাইটেড ওয়ার্কার্স ডেমোক্রেটিক ফ্রন্টের সহসাধারণ সম্পাদক প্রমোদ জ্যোতি চাকমা, মাইকেল চাকমার বড় বোন সুভদ্রা চাকমা।
এছাড়া সংহতি জানিয়ে মঞ্চে উপস্থিত ছিলেন এবং বক্তব্য রাখেন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক অধ্যাপক আকমল হোসেন, জাতীয় মুক্তি কাউন্সিলের সম্পাদক ফয়জুল হাকিম, নয়াগণতান্ত্রিক গণমোর্চার সভাপতি জাফর হোসেন, বাসদ মার্কবাদীর কেন্দ্রীয় সদস্য মানস নন্দী, শ্রমজীবী নারী মৈত্রীর সভাপতি বহ্নি শিকা জামালী, কবি হাসান ফকরি এবং লেখক ওমর তারেক চৌধুরী।
এছাড়াও সংহতি জানিয়ে আরো উপস্থিত ছিলেন, জাতীয় গণতান্ত্রিক গণমঞ্চের সভাপতি মাসুদ খান,বাংলাদেশের নারী মুক্তি কেন্দ্রের সদস্য সুস্মিতা সুপ্তি, ব্যারিষ্টার সাদিয়া আরমান, মানবাধিকার সংগঠন অধিকারের পরিচালক নাসির উদ্দিন এলান, লেখক ও গবেষক রেহনুমা আহম্মেদ, লেখক শিবিরের সাধারণ সম্পাদক কাজী ইকবাল, খনন পত্রিকার সম্পাদক বাদল শাহ আলম, আদিবাসী সমিতির সাধারণ সম্পাদক অমলি কিস্কু, ল্যাম্পোস্টের সাধারণ সম্পাদক নাহিদ সুলতানা লিসা, বিবর্তন সাংস্কৃতিক কেন্দ্রের সাধারণ সম্পাদক মফিজুর রহমান লাল্টু, নাগরিক ছাত্র ঐক্যের আহ্বায়ক সাকিব আনোয়ার, গার্মেন্ট শ্রমিক ট্রেড ইউনিয়ন কেন্দ্রের সদস্য মঞ্জুর মঈন, বিপ্লবী নারী মুক্তি কেন্দ্রের আহ্বায়ক নাসিমা নাজনীন, একটিভিস্ট মাহাতাব উদ্দিনসহ আরো অনেকে।
সংবাদ সম্মেলনে বক্তারা বলেন, মাইকেল চাকমা রাজনৈতিক কারণে নিখোঁজ হয়েছেন। মানুষের জানমালের নিরাপত্তা রক্ষার দায়িত্ব রয়েছে সরকার আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কিন্তু সরকার ও আইন শৃঙ্খলাবাহিনী তা করছে না। বক্তারা, খুন-গুম-ক্রসফায়ার ও ধর্ষণের বিরুদ্ধে সবাইকে সম্মিলিতভাবে আন্দোলনে নামার আহ্বান জানান।
সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে অভিযোগ করে বলা হয়, মাইকেল চাকমা বিগত ৯ এপ্রিল ’১৯ নিখোঁজের পর দীর্ঘ ৯ মাসের অধিক সময় পার হলেও এখনো তার সন্ধান পাওয়া যায়নি। তার সন্ধানের দাবিতে বহু কর্মসূচী অনুষ্ঠিত হয়েছে, হাইকোর্টেও রিট করা হয়েছে। হাইকোর্ট সোনারগাঁ ওসিকে মাইকেল চাকমার নিখোঁজের বিষয়ে সাধারণ ডায়েরি নথিভুক্ত করে তদন্তেরও নির্দেশ দিয়েছেন। কিন্তু তা সত্ত্বেও সরকার-প্রশাসন-আইনশৃঙ্খলা বাহিনী তার সন্ধানের জন্য এখনো উপযুক্ত পদক্ষেপ গ্রহণ করেনি।
সংবাদ সম্মেলনে আরো অভিযোগ করে বলা হয়, মাইকেল চাকমা নিখোঁজের পর সোনারগাঁ থানায় অভিযোগ দিলেও তাকে উদ্ধারের জন্য কোন উপযুক্ত পদক্ষেপ গ্রহণ না করে নানা টালবাহানা করছে পুলিশ। এমনকি হাইকোর্টের নির্দেশনা সত্ত্বেও সাধারণ ডায়েরি পর্যন্ত নেয়া হচ্ছে না। দেশের যে কোন নাগরিকের নিরাপত্তা বিধানের দায়িত্ব পুলিশের। কিন্তু মাইকেল চাকমাকে সন্ধানের ক্ষেত্রে পুলিশের ভূমিকা খুবই দুঃখ জনক। আইনশৃঙ্খলা বাহিনী চাইলে যে কোন ঘটনার কুল-কিনারা করতে সক্ষম। সম্প্রতি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের এক শিক্ষার্থীর ধর্ষককে গ্রেফতার তারই নজির। আইনশৃঙ্খলা বাহিনী চাইলে মাইকেল চাকমাকে উদ্ধার করা সম্ভব হবে বলে সংবাদ সম্মেলনে মন্তব্য করা হয়। এছাড়া সংবাদ সম্মেলন থেকে মন্তব্য করা হয়, পুলিশ উপযুক্ত পদক্ষেপ নিলে মাইকেল চাকমার সন্ধান লাভ কঠিন কোন কাজ নয়। পুলিশের আচরণ ও কথাবার্তায় আমাদের আশঙ্কা হয় যে, মাইকেল চাকমা কোন না কোন রাষ্ট্রীয় সংস্থার হাতে গুমের শিকার হয়ে থাকতে পারেন।’’
সংবাদ সম্মেলনে প্রশ্ন করে বলা হয়, পুলিশের ভাষ্যমতে মাইকেল চাকমার মোবাইলের সর্বশেষ অবস্থান ছিল ঢাকা শহরের কাফরুলস্থ কচুক্ষেতের মমতা শপিং কমপ্লেক্সে। তার মোবাইলের সর্বশেষ লোকেশন পাওয়ার পরও কেন পুলিশ তদন্ত করলো না?
সংবাদ সম্মেলনে আরো বলা হয়, মাইকেল চাকমা যে কোন অন্যায়ের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করতেন। মূলত তার প্রতিবাদীকন্ঠ স্তব্ধ করে দিতে তাকে তুলে নেয়া হয়েছে। মাইকেল চাকমার মত একজন রাজনৈতিক ব্যক্তির নিখোঁজ বা অপহরণ ঘটনা– পুরো দেশের রাজনৈতিক দল ও গণতান্ত্রিক চেতনা-মুক্তবুদ্ধিসম্পন্ন ব্যক্তির জন্য অশনি সংকেত। মাইকেল চাকমার সন্ধান কেবল পাহাড়ের মানুষের নয়, সমস্ত প্রগতিশীল ও গণতান্ত্রিক চেতনাসম্পন্ন মানুষের দাবিতে পরিণত হয়েছে।
সংবাদ সম্মেলন থেকে নিন্মোক্ত দাবি জানানো হয়:
১. অবিলম্বে হাইকোর্টের নির্দেশনা মতো মাইকেল চাকমার নিখোঁজ বিষয়ে সোনারগাঁ থানায় জিডি নিতে হবে।
২. অবিলম্বে মাইকেল চাকমাকে উদ্ধারপূর্বক সুস্থ শরীরে ও নিরাপদে তার পরিবারের নিকট ফিরিয়ে দিতে হবে।
৩. রাষ্ট্রীয় পৃষ্ঠপোষকতায় খুন-গুম-ক্রসফায়ার বন্ধে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতে হবে।
৪. পার্বত্য চট্টগ্রামসহ সারাদেশে শান্তিপূর্ণ সভা-সমাবেশের ওপর বিধি নিষেধ তুলে নিয়ে মুক্তবুদ্ধি চর্চা ও গণতান্ত্রিক পরিবেশ নিশ্চিত করতে হবে।
৫. পার্বত্য চট্টগ্রামে অন্যায় ধরপাকড়-নির্যাতন বন্ধ করতে হবে।