হিল উইমেন্স ফেডারেশনের রাঙামাটি জেলা শাখার ৫ম কাউন্সিল সম্পন্ন

নিজস্ব প্রতিনিধি।। হিল উইমেন্স ফেডাবেশনের রাঙামাটি জেলা শাখার ৫ম কাউন্সিল গত ১৫ জুলাই ২০২২ সদর উপজেলার কুদুকছড়িতে সম্পন্ন হয়েছে। কাউন্সিলে রিমি চাকমাকে সভাপতি, ইসা চাকমাকে সাধারণ সম্পাদক এবং নিখী চাকমাকে সাংগঠনিক সম্পাদক নির্বাচিত করে ১৩ সদস্য বিশিষ্ট নতুন কমিটি গঠন করা হয়েছে।

”বাঙালি নই’ সরকারি পত্রে ‘বেগম’ সম্বোধন মানিনা ব্যবহার বন্ধ কর; পাহাড় ও সমতলে নারীর নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে” এই শ্লোগানে এবং “নারী ধর্ষণ ও ভূমি বেদখল প্রতিরোধ তথা পার্বত্য চট্টগ্রামে জাতীয় অস্তিত্ব লড়াইয়ে হিল উইমেন্স ফেডারেশনের সাথে যুক্ত হোন” এই আহ্বানে উক্ত কাউন্সিল অনুষ্ঠিত হয়।

সকল শহীদদের স্মরণে ১ মিনিট নিরবতা পালনের মধ্যে দিয়ে কাউন্সিন অধিবেশেন শুরু হয়।


কাউন্সিলে সভাপতিত্ব করেন রূপসী চাকমা।  সাধারণ সম্পাদক দয়াসোনা চাকমার সঞ্চালনায় কাউন্সিল অধিবেশনে উপস্থিত থেকে বক্তব্য রাখেন হিল উইমেন্স ফেডারেশন কেন্দ্রীয় কমিটির সভাপতি নীতি চাকমা, পার্বত্য চট্টগ্রাম নারী সংঘের রাঙামাটি জেলা শাখার সভাপতি রিনিশা চাকমা, পাহাড়ি ছাত্র পরিষদের কেন্দ্রীয় কমিটির দপ্তর সম্পাদক শুভাশিষ চাকমা, গণতান্ত্রিক যুব ফোরামের রাঙামাটি জেলা শাখার সভাপতি ললিত চাকমা ও ইউনাইটেড পিপলস ডেমোক্রেটিক ফ্রন্টের প্রতিনিধি বিপীণ চাকমা। এতে স্বাগত বক্তব্য রাখেন জেসি চাকমা।

বক্তারা বলেন, স্বাধীনতার পরবর্তী এদেশের সরকার প্রতিনয়ত সংখ্যালঘু জাতি নিধনের কাজ চালিয়ে নিয়ে যাচ্ছে। অন্যায় দমন-পীড়ন, নারী ধর্ষণ-নির্যাতন, সংস্কৃতিক আগ্রাসন, গণহত্যা,  ভূমি বেদখল অব্যাহত রয়েছে। ফলে পার্বত্য চট্টগ্রামে বসবাসরত জাতিসত্তাসমূহের অস্তিত্ব  হুমকির সম্মুখীন হয়ে পড়েছে।

বক্তারা পার্বত্য চট্টগ্রামের বর্তমান পরিস্থিতি তুলে ধরে বলেন, শাসকগোষ্ঠি ‘ভাগ করে শাসন কর’ নীতি প্রয়োগের মাধ্যমে  পার্বত্য চট্টগ্রামে এক অরাজক পরিস্থিতি তৈরি করে রেখেছে। ভ্রাতৃঘাতী সংঘাত বাঁধিয়ে দিয়ে স্বার্থ হাসিল করতে শাসকচক্র মরিয়া হয়ে উঠেছে।  যার কারণে
ইউপিডিএফ ও তার সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীদের কর্মীদের উপর হামলা, বিনা বিচারে হত্যা করা হচ্ছে, অন্যায়ভাবে গ্রেফতার করে মিথ্যা মামলায় ফাঁসিয় বছরের পর বছর ধরে জেলে বন্দী করে রাখা হচ্ছে।

বক্তারা বলেন, পাহাড়িদের নিজ ভূমি থেকে বিতাড়নের মাধ্যমে নিশ্চিহ্ন করে দিতে ষড়যন্ত্রের শেষ নেই। গত ৫ জুলাই মহালছড়িতে সেটলার কর্তৃক পাহাড়িদের ৩৭টি ঘরবাড়ি পুড়িয়ে দেয়া, গত ১৩ জুলাই বান্দরবানেন লামায় ভূমি রক্ষা আন্দোলনের সংগঠক রংধজন ত্রিপুরার ওপর হামলা, লংগদু থানার এক এএসআই কর্তৃক চাকমা সম্প্রদায়ের বাদীকে মো: সম্বোধন করে নোটিশ দেওয়া এ ষড়যন্ত্রেরই আলামত বহন করে।

বক্তারা নারী ধর্ষণ-নির্যাতনের সাম্প্রতিক ঘটনা তুলে ধরে বলেন, গত ২৭ জুন খাগড়াছড়ির ভাইবোনছড়ায় সেনা মদদপুষ্ট দুর্বৃত্ত কর্তৃক এক গৃহবধূকে ক্লাবে নিয়ে গণধর্ষণ-নির্যাতন, ৯ জুলাই মানিকছড়িতে গৃহবধুকে ধর্ষণ চেষ্টা ব্যর্থ হয়ে হত্যার চেষ্টা, ১১ জুলাই কাউখালীর কলমপতি ইউনিয়নে এক নারীকে সেটলার কর্তৃক ধর্ষণ–প্রতিনিয়ত এমন জঘন্য ঘটনা ঘটেই চলেছে। কিন্তু এদেশের সরকার-প্রশাসন এসব ঘটনায় একেবারেই নির্বিকার, বিচারতো দূরের কথা।

বক্তারা অপহৃত কল্পনা চাকমার কথা তুলে ধরে আরো বলেন,২৬ বছর অতিবাহিত হলেও সরকার কল্পনার হুদিস এখনও দিতে পারেনি। বরং ঘটনায় জড়িতদের রক্ষায় এখনো নানা চক্রান্ত চালিয়ে যাচ্ছে।

বক্তারা পার্বত্য চট্টগ্রামসহ সারা দেশে নারী নির্যাতন বন্ধ ও নারীর নিরাপত্তা নিশ্চিত করার দাবি জানান।

বক্তারা নারীর ওপর নিপীড়নসহ সকল ধরনের নিপীড়ন-নির্যাতন ও জাতীয় অস্তিত্ব রক্ষার্থে আন্দোলনে সামিল হতে নারী সমাজসহ সর্বস্তরের জনগণের প্রতি আহ্বান জানান।

কাউন্সিলের ২য় অধিবেশনে উপস্থিত সকলের সর্বসম্মতিক্রমে রিমি চাকমাকে সভাপতি, ইসা চাকমাকে সাধারণ সম্পাদক এবং নিখী চাকমাকে সাংগঠনিক সম্পাদক নির্বাচিত করে ১৩ সদস্য বিশিষ্ট নতুন কমিটি গঠন করা হয়।

Leave a Reply

Your email address will not be published.