নিজস্ব প্রতিবেদক।। খাগড়াছড়ির দীঘিনালায় পার্বত্য চট্টগ্রামে গণতান্ত্রিক আন্দোলনের প্রথম শহীদ ভরদ্বাজ মুনির আত্মবলিদানের ৩ দশক স্মরণে আয়োজিত প্রীতি ফুটবল ম্যাচের পুরস্কার বিতরণী অনুষ্ঠান সম্পন্ন হয়েছে।
আজ মঙ্গলবার (১৮ অক্টোবর ২০২২) বেলা ২টায় এই পুরস্কার বিতরণ অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়।
গত ১৩ অক্টোবর প্রীতি ফুটবল ম্যাচটি উদ্বোধন করা হয়। এতে উপজেলার ৬টি টিম অংশগ্রহণ করে। ১৬ অক্টোবর বড়াদাম টিম ও তুলি পাড়া টিমের মধ্যে ফাইনাল খেলা অনুষ্ঠিত হয়। এতে বড়াদাম টিম চ্যাম্পিয়ন ও তুলি পাড়া টিম রানার্সআপ হয়।
পুরস্কার বিতরণ অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন ইউপিডিএফ’র দীঘিনালা ইউনিটের সমন্বয়ক মিলটন চাকমা।
ইউপিডিএফ সংগঠক সজীব চাকমার সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন বাবুছড়া ইউনিয়ন পরিষদের সদস্য গগন বিকাশ চাকমা, ইউপিডিএফ সংগঠক অতল চাকমা, পাহাড়ি ছাত্র পরিষদের খাগড়াছড়ি জেলা শাখার সাংগঠনিক সম্পাদক মিঠুন চাকমা, গণতান্ত্রিক যুব ফোরামের দীঘিনালা উপজেলা সভাপতি জ্ঞান প্রসাদ চাকমা ও বিশিষ্ট ব্যবসায়ি কৃপা প্রিয় চাকমা প্রমুখ।
অনুষ্ঠানে ইউপিডএফ নেতা মিলটন চাকমা তার বক্তব্যে বলেন, শহীদ ভরদ্বাজ মুনির আত্মবলিদানের ৩ দশক স্মরণে আয়োজিত প্রীতি ফুটবল ম্যাচে পরিস্থিতির কারণে আমাদের পক্ষ থেকে সরাসরি উপস্থিত থাকতে না পারলেও যারা খেলা পরিচালনা করেছেন তারা খুবই ভালোভাবে খেলাটি শেষ করতে পেরেছেন। এর জন্য তিনি খেলা পরিচালনাকারীদের ধন্যবাদ জানান।
পার্বত্য চট্টগ্রামের বর্তমান পরিস্থিতি খুবই নাজুক উল্লেখ করে তিনি বলেন, খেলাধুলা ও চিত্ত বিনোদনের জন্য সুন্দর পরিবেশ-পরিস্থিতি দরকার। কিন্তু এদেশের শাসকগোষ্ঠি পার্বত্য চট্টগ্রামে একদিকে দমন-পীড়ন জারি রেখেছে, অন্যদিকে ছাত্র-যুব সমাজকে মাদক, জুয়ায় আসক্ত করে রাখাসহ ভ্রাতৃঘাতি সংঘাত জিইয়ে রাখতে নানা চক্রান্ত করে যাচ্ছে। ছাত্র-যুব সমাজকে শাসকগোষ্ঠির এই ধ্বংসাত্মক চক্রান্ত থেকে সতর্ক ও সাবধান থাকতে হবে।
মিল্টন চাকমা বলেন, ছাত্র-যুব সমাজ জাতিকে ধ্বংসের হাত থেকে রক্ষা করতে পারে। তাই আজকের ছাত্র-যুব সমাজকেই জাতির ভবিষ্যত কাণ্ডারীর ভূমিকা পালন করতে হবে। তিনি ইউপিডিএফের নেতৃত্বে ঐক্যবদ্ধ ও সংগঠিত হয়ে পার্বত্য চট্টগ্রামে অস্তিত্ব রক্ষার সংগ্রামকে বেগবান করার আহ্বান জানান।
ইউপি সদস্য গগন বিকাশ চাকমা বলেন, বর্তমানে যুব সমাজ নিষ্কর্মা, মদ্যপানসহ বিভিন্ন নেশা দ্রব্যে আসক্ত হচ্ছে। সমাজে সামাজিক কাজে এখন যুব সমাজের ভূমিকা খুবই নগন্য বলা যায়।
তিনি বলেন, বিশ্বের প্রতিটি রাষ্ট্রের মূল চাবিকাঠি হচ্ছে যুবসমাজ। তাই যুব সমাজকে মাদক, জুয়াসহ সামাজিক অবক্ষয় থেকে মুক্ত থেকে খেলাধুলার মাধ্যমে নিজেদেরকে সুদৃঢ় করে গড়ে তুলতে হবে। জাতির অস্তিত্ব রক্ষার্থে যুবকদেরকে এগিয়ে আসতে হবে।
পিসিপি নেতা মিঠুন চাকমা বলেন, পার্বত্য চট্টগ্রামে যদি গণতান্ত্রিক পরিবেশ থাকতো তাহলে আরো জাকজমকভাবে খেলাটি আয়োজন করা যেত। কিন্তু বর্তমান ফ্যাসিস্ট সরকার ‘ভাগ কর শাসন কর’ নীতিতে পার্বত্য চট্টগ্রামে শাসন-শোষণ চালাচ্ছে। ফলে আমাদের খেলাধুলা, চিত্ত বিনোদনের ক্ষেত্রে চরম ব্যাঘাত ঘটছে।
তিনি পার্বত্য চট্টগ্রামে সুষ্ঠু গণতান্ত্রিক পরিবেশ নিশ্চিত করা ও অস্তিত্ব রক্ষার্থে জাতির দায়িত্ব কাঁধে তুলে নিতে প্রস্তুত হওয়ার জন্য ছাত্র-যুব সমাজের প্রতি আহ্বান জানান।
অনুষ্ঠানে ১ম পুরষ্কার গ্রহণ করেন বড়াদাম টিম ম্যানেজার রচিল চাকমা ও দীপন চাকমা। তাদের হাতে পুরস্কার তুলে দেন অতল চাকমা ও গগন বিকাশ চাকমা। ২য় পুরস্কার গ্রহণ করেন তুলি পাড়া টিম ম্যানেজার প্রতিরূপ চাকমা ও বিধান চাকমা।
আর খেলা পরিচালনা কমিটি (রেফারি, জাস্টমেন্ট) এর নিকট পুরষ্কার তুলে দেন ইউপিডিএফ’র দীঘিনালা ইউনিট সমন্বয়ক মিল্টন চাকমা।