আজ শিক্ষা দিবস: কেন এ দিবসটি পালন করা হয়

সংগৃহিত ছবি

আজ ১৭ সেপ্টেম্বর শিক্ষা দিবস। দেশের প্রগতিশীল বিভিন্ন ছাত্র সংগঠন দিবসটি পালন করে থাকে।  কেন এ দিবসটি পালন করা হয় তা সংক্ষিপ্ত আকারে তুলে ধরা হলো।

আইয়ুব খানের শিক্ষা কমিশন
আইয়ুব খান ক্ষমতা দখলের মাত্র ২ মাস পরেই  (৩০ ডিসেম্বর, ১৯৫৮)  ‘শরীফ কমিশন’ নামে খ্যাত এসএম শরীফের নেতৃত্বে একটি শিক্ষা কমিশন গঠন করে এবং ১৯৫৯ সালের ২৬ আগস্ট এই কমিশন প্রতিবেদন পেশ করে। এতে শিক্ষা বিষয়ে যেসব প্রস্তাবনা ছিল তা ছিল প্রকারান্তরে শিক্ষা সংকোচনের পক্ষে।

প্রস্তাবিত প্রতিবেদনে বলা হয়েছিল- সস্তায় শিক্ষা করা যায় বলে যে ভুল ধারণা রয়েছে তা ত্যাগ করতে হবে। এতে মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষার ক্ষেত্রেও ছাত্র বেতন বর্ধিত করার প্রস্তাব ছিল। ২৭ অধ্যায়ে বিভক্ত শরীফ কমিশনের ওই প্রতিবেদনে প্রাথমিক স্তর থেকে উচ্চতর স্তর পর্যন্ত সাধারণ, পেশামূলক শিক্ষা, শিক্ষক প্রসঙ্গ, শিক্ষার মাধ্যম, পাঠ্যপুস্তক, হরফ সমস্যা, প্রশাসন, অর্থবরাদ্দ, শিক্ষার লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য বিষয়ে বিস্তারিত সুপারিশ উপস্থাপন করা হয়। আইয়ুব সরকার এই রিপোর্টের সুপারিশ গ্রহণ করে ১৯৬২ সাল থেকে তা বাস্তবায়ন করতে শুরু করে।

এই কমিশন বিশ্ববিদ্যালয়ে স্বায়ত্তশাসনের পরিবর্তে পূর্ণ সরকারি নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা, বিশ্ববিদ্যালয় কলেজে রাজনীতি নিষিদ্ধ করা, ছাত্র-শিক্ষকদের কার্যকলাপের ওপর তীক্ষ্ণ নজর রাখার প্রস্তাব করে। শিক্ষকদের কঠোর পরিশ্রম করাতে ১৫ ঘণ্টা কাজের বিধান রাখা হয়েছিল। রিপোর্টে বর্ণমালা সংস্কারেরও প্রস্তাব ছিল।

ছাত্ররা আইয়ুবের এই শিক্ষানীতির বিরুদ্ধে অবস্থান নেয়। তারা আন্দোলন শুরু করে।

১৭ সেপ্টেম্বর কী ঘটেছিল
১৯৬২ সালের ১৭ সেপ্টেম্বর । সেদিন স্বৈরশাসক আইয়ুব খান গঠিত শিক্ষা কমিশনের শিক্ষানীতির প্রতিবাদে ছাত্রদের আহুত হরতালে পুলিশ দফায় দফায় লাঠিচার্জ, কাঁদানে গ্যাস নিক্ষেপ ও গুলিবর্ষণ করে। এতে পুলিশের গুলিতে মারা যান ওয়াজিউল্লাহ, গোলাম মোস্তফা, বাবুলসহ আরো অনেকে।

আইয়ুবের শিক্ষানীতির বিরুদ্ধে ঢাকা কলেজ ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ বহু শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে স্ব-স্ব দাবির ভিত্তিতে জুলাই-আগস্ট মাসজুড়ে আন্দোলন চলতে থাকে। এ আন্দোলন কর্মসূচির ধারাবাহিকতায় ছাত্র সংগ্রাম পরিষদের নেতৃত্বে ১৭ সেপ্টেম্বর দেশব্যাপী হরতাল কর্মসূচি পালনের ঘোষণা দেওয়া হয়। ওই দিন সকাল ১০টায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে হাজার হাজার মানুষ সমাবেশে উপস্থিত হয়। সমাবেশ শেষে মিছিল বের হয়। জগন্নাথ কলেজে গুলি হয়েছে- এ গুজব শুনে মিছিল দ্রুত নবাবপুরের দিকে যাত্রা শুরু করে। কিন্তু হাইকোর্টের সামনে পুলিশ এতে বাধা দেয়। তবে মিছিলকারীরা সংঘাতে না গিয়ে আবদুল গনি রোডে অগ্রসর হয়। তখন পুলিশ মিছিলের পেছন থেকে লাঠিপেটা, কাঁদানে গ্যাস ও গুলিবর্ষণ করে। এতে তিনজন নিহত হয়। ওই দিন সারা দেশে মিছিলে পুলিশ গুলি করে। টঙ্গীতে ছাত্র-শ্রমিক মিছিলে পুলিশের গুলিতে সুন্দর আলী নামে এক শ্রমিকের নিহতের খবর পাওয়া যায়।

আন্দোলন চূড়ান্ত পর্যায়ে পৌঁছলে আইয়ুব খান পিছু হটে এবং শেষ পর্যন্ত ২০ সেপ্টেম্বর শিক্ষা কমিশন রিপোর্ট বাস্তবায়ন স্থগিত রাখার ঘোষণা দেয়। স্থগিত করা হয় শিক্ষা কমিশন রিপোর্টও।  

এরপর থেকে প্রগতিশীল ছাত্র সংগঠনগুলো ১৭ সেপ্টেম্বরকে শিক্ষা দিবস হিসেবে পালন করে আসছে। প্রতি বছর তারা দিবসটি উপলক্ষে নানা কর্মসূচি পালন করে থাকে। যদিও সরকারিভাবে দিবসটি এখনো পালন করা হয় না।

তথ্যসূত্র: অনলাইন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *